অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বাংলাদেশের সংকটাপন্ন ছেঁড়াদিয়া দ্বীপের সুরক্ষায় বন্ধ করা হলো পর্যটকদের যাতায়াত


সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ছেঁড়াদিয়ায় পর্যটক পারাপার। ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২। (ছবি: ভয়েস অফ আমেরিকা)
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ছেঁড়াদিয়ায় পর্যটক পারাপার। ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২। (ছবি: ভয়েস অফ আমেরিকা)

বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার সেন্টমার্টিন দ্বীপসংলগ্ন সংকটাপন্ন আরেকটি পৃথক দ্বীপ ছেঁড়াদিয়া। দ্বীপটির সুরক্ষায় সেখানে পর্যটকের যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে ছেঁড়াদিয়া ভ্রমণে যেতে পারেননি কোনো পর্যটক।

সেন্ট মার্টিন ও ছেঁড়াদিয়া দ্বীপের সুরক্ষায় ১৩টি সুপারিশের অন্যতম ছিল ছেঁড়াদিয়ায় পযটকের যাতায়াত নিষিদ্ধকরণ। বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এই সুপারিশ বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে তার বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে সেন্ট মার্টিন থেকে ছেঁড়াদিয়ায় পর্যটক যাতায়াত বন্ধ রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পযন্ত সেন্ট মার্টিন জেটিঘাট থেকে কোনো নৌযান পাঁচ কিলোমিটার দক্ষিণের দ্বীপটিতে চলাচল করেনি।

বঙ্গোপসাগরের মধ্যে ৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ইউনিয়নের লোকসংখ্যা প্রায় ১১ হাজার। প্রতিদিন ১০টি প্রমোদতরী (জাহাজ) এবং ৪০টির মতো স্পিডবোট ও কাঠের ট্রলারে টেকনাফ থেকে সেন্ট মাটিন যান প্রায় পাঁচ হাজার পযটক। বিশেষ বিশেষ দিনে এই সংখ্যাটা তিনগুণ বেড়ে ১৫ হাজারে দাঁড়ায়। তখন সেন্টমার্টিনের ঠাঁই নাই অবস্থা হয়। পর্যটকদের রাত যাপনের জন্য এক দশকে দ্বীপটিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই তৈরি হয়েছে ১৮৮টি হোটেল রিসোর্ট ও কটেজ।

পরিবেশ অধিদপ্তর সেন্ট মার্টিন কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আজহারুল ইসলাম ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “সংকটাপন্ন ছেঁড়াদিয়াতে অনির্দিষ্টকালের জন্য পর্যটক পারাপার বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে কোনো পর্যটক সেন্ট মার্টিন দ্বীপ থেকে দক্ষিণ দিকে ছেঁড়াদিয়া দ্বীপে যেতে পারেননি।”

ছয় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই নৌপথে চলাচল করে অর্ধশতাধিক নৌযান। আজ সকাল থেকে সকল নৌযান জেটিঘাটে নোঙর করা ছিল। ছেঁড়াদিয়ায় নৌযান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে কোস্টগার্ড, বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ), পুলিশ ও পরিবেশ অধিদপ্তর।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভেজ চৌধুরী বলেন, “সম্প্রতি সেন্ট মার্টিন দ্বীপের জীববৈচিত্রসহ জলবায়ু পরিবর্তন রোধে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ১৩টি সুপারিশমালা বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর আলোকে ছেঁড়াদিয়ায় পর্যটকের যাতায়াত অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সেন্ট মার্টিন দ্বীপের সুরক্ষায় ইতিমধ্যে অবৈধভাবে নির্মিত হোটেল রিসোর্ট উচ্ছেদ, জরিমানা আদায়, পরিবেশ দূষণরোধে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনাসহ সৈকত পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাসহ অবশিষ্ট সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নের কাজ চলছে।”

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সুপারিশগুলোর মধ্যে আছে—সেন্ট মার্টিনে সকল ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ ও সম্প্রসারণ বন্ধ রাখা; পরিষ্কার-পরিছন্নতা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখা; প্রতিবেশ সংকটাপন্ন ছেঁড়াদিয়ায় পর্যটকের বিচরণ বন্ধ রাখা, হোটেল–মোটেল রিসোর্টে সুয়ারেজ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ; শব্দ ও বায়ুদূষণ রোধ করা; যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা, ম্যানগ্রোভ ও কেয়াবেষ্টনি সৃজন, দ্বীপের বাসিন্দাদের জন্য ইকোলজিক্যাল বসতঘর নির্মাণ, দ্বীপে পযটকের রাতযাপন সীমিত করে ১ হাজার ২৫ জনে নির্ধারণ ইত্যাদি।

সেন্ট মার্টিন স্পিডবোট ও লাইফবোট মালিক সমিতির সভাপতি মো. খোরশেদ আলম জানান, গতকাল সোমবার বিকালে পরিবেশ অধিদপ্তরে একটি ভ্রাম্যমান আদালত জেটিঘাটে এসে ছেঁড়াদিয়ায় নৌযান চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। ভ্রাম্যমান আদালতের নেতৃত্ব দেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সাঈদা পারভিন।

মো. খোরশেদ আলম বলেন, “ছেঁড়াদিয়া এখন কোনো পর্যটক যেতে পারছেন না। ছেঁড়াদিয়ায় যাতায়াতের সকল নৌযানও বন্ধ।”

পরিবেশ অধিদপ্তরের ভাষ্য মতে, ছেঁড়াদিয়া হলো বাংলাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর একটি দ্বীপ। যার আয়তন মাত্র ৩৫০ বর্গমিটার। এক সময় এই দ্বীপে ছিল প্রায় ৬৬ প্রজাতির প্রবাল, ১৫৩ প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল, ১৮৭ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক, ১৫৭ প্রজাতির গুপ্তজীবী উদ্ভিদ, ২৪০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, চার প্রজাতির উভচর, ১২০ প্রজাতির পাখি, ১৯ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী। অতিরিক্ত মানুষের সমাগমে দ্বীপটির প্রবাল শৈবালসহ অনেক প্রজাতির প্রাণীর বিলুপ্তি ঘটেছে।

XS
SM
MD
LG