রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মঙ্গলবার বলেছেন যে তিনি ইউরোপে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন এবং সামরিক মহড়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার নেটো মিত্রদের সাথে আলোচনার জন্য প্রস্তুত। তবে তার আগেই মস্কো ঘোষণা করেছিল যে তাঁরা ইউক্রেন সীমান্ত থেকে কিছু সেনা প্রত্যাহার করছে।
ক্রেমলিনে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজের সাথে সাক্ষাতের পর পুতিন বলেন, তিনি পশ্চিমাদের সাথে সম্পর্ক রাখতে ইচ্ছুক। যদিও ইউক্রেন এবং অন্যান্য সাবেক সোভিয়েত রাষ্ট্রগুলির জন্য সম্ভাব্য নেটো সদস্যপদ বাতিল করার এবং পশ্চিমা দেশগুলিকে রাশিয়ার নিকটতম পূর্ব ইউরোপে সৈন্য প্রত্যাহার করার জন্য মস্কো যে দাবিগুলি করেছিল তা পশ্চিমারা প্রত্যাখ্যান করেছে।
রাশিয়ান নেতা বলেন যে মস্কো নেটোর সাথে আস্থা তৈরির পদক্ষেপগুলি বিকাশের চেষ্টা করবে। তবে তিনি এখনও জোর দিচ্ছেন যে পশ্চিমাদের অবশ্যই তার প্রধান দাবিগুলির প্রতি মনোযোগ দিতে হবে।
পশ্চিমের সাথে আরও কূটনীতির জন্য পুতিনের চুক্তি এবং ইউক্রেনের কাছে প্রশিক্ষণ শেষ করার পরে অপ্রকাশিত সংখ্যক রাশিয়ান সৈন্য প্রত্যাহার করার ঘটনা আশা জাগিয়েছে যে ইউক্রেনে একটি আশংকাজনক আসন্ন রাশিয়ান আক্রমণ এড়ানো হবে।
শোলজ বলেছেন, তিনি মস্কোর সাথে একমত যে কূটনৈতিক বিকল্পগুলির জন্য এখনও সময় আছে। তিনি বলেন," সৈন্যদের ফিরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা একটি "ভাল সংকেত," তিনি আশা করেন যে ভবিষ্যতে এর পুনরাবৃত্তি হবে।
তবে নেটো এবং ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলেছেন যে তারা এখনও সৈন্য প্রত্যাহারের প্রমাণ দেখতে পাননি।
ইউক্রেনের উত্তর, পূর্ব এবং দক্ষিণে আনুমানিক ১,৩০,০০০ সৈন্যের মধ্যে কতজন সৈন্যকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে তা রাশিয়া জানায়নি।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দ্যমিত্রি পেসকভ বলেছেন, "আমরা সবসময় বলেছি মহড়া শেষ হওয়ার পর সেনারা তাদের ঘাঁটিতে ফিরে যাবে। এবারও তাই হয়েছে।"
নেটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ সংবাদদাতাদের বলেছেন যে পশ্চিমের প্রধান সামরিক জোট মস্কো ইউরোপীয় নিরাপত্তা এবং ইউক্রেনের অচলাবস্থা নিয়ে কূটনৈতিক আলোচনা চালিয়ে যেতে এবং ইউক্রেনের সীমান্ত থেকে সেনা সরিয়ে নিতে ইচ্ছুক হতে পারে এমন লক্ষণকে স্বাগত জানায়।
স্টলটেনবার্গ বলেছেন, "এটি সতর্ক আশাবাদের ভিত্তি তৈরি করেছে কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা রাশিয়ার পক্ষ থেকে প্রকৃত ক্ষেত্রে সৈন্য কমিয়ে আনার কোনো চিহ্ন দেখিনি।"
তিনি বলেন, রাশিয়া প্রায়শই মহড়ার পরে সামরিক সরঞ্জাম রেখে গেছে, বাহিনীকে পুনরায় সংগঠিত করার সুযোগ করে দেয়ার জন্য।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দ্যমিত্রো কুলেবা রাশিয়ার সৈন্যদের গতিবিধি নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন।
কুলেবা বলেছেন, "ইউক্রেনে আমাদের একটি নিয়ম আছে: আমরা যা শুনি তা বিশ্বাস করি না, আমরা যা দেখি তা বিশ্বাস করি । যদি সত্যিকারের প্রত্যাহার এই বিবৃতিগুলি অনুসরণ করে, আমরা বিশ্বাস করবো যে সত্যিকারের সৈন্য কমিয়ে আনা শুরু হয়েছে।
সোমবার, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের মুখপাত্র জন কারবি বলেছেন যে এমনকি গত দুই দিনে, পুতিন ইউক্রেনের এবং বেলারুশের সীমান্তে সামরিক সক্ষমতা আরও বাড়িয়েছেন। তিনি সেই ইউনিটগুলির কিছু অংশ দক্ষিণের স্থলভাগে এবং সেইসাথে কৃষ্ণ সাগরে তার নৌ ইউনিটগুলির অনুশীলন করিয়েছেন।"
কারবি বলেন, “সুতরাং, দেখা যাচ্ছে পুতিন এখনও তার প্রস্তুতি নিচ্ছেন । তিনি যদি একটি সামরিক পথ নিতে চান সে জন্য নিজেকে আরও বিকল্প দিচ্ছেন। তিনি সেই কাজগুলি চালিয়ে যাচ্ছেন, যখন কেউ একটি বড় সামরিক পদক্ষেপের পরিকল্পনা করে থাকে।"
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মুখপাত্র ইগর কোনাশেনকভ বলেছেন, ইউক্রেনের কাছে বড় আকারের মহড়া অব্যাহত থাকবে, তবে দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলীয় সামরিক এলাকার কিছু ইউনিট তাদের অনুশীলন শেষ করেছে এবং ঘাঁটিতে ফিরে যেতে শুরু করেছে। সৈন্যদের গতিবিধি তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করা যায়নি।