যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বলেন, ওয়াশিংটন বিশ্বাস করে যে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের “এখনো সমূহ সম্ভাবনা” রয়েছে এবং তিনি পুতিনের প্রতি আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অথবা গুরুতর পরিণতির মেনে নিতে হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন।
“দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ একটি প্রয়োজনীয় যুদ্ধ ছিল”, বাইডেন বলেন। “কিন্তু যদি রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করে, তাহলে সেটা হবে তাদের নিজেদের বেছে নেওয়া, অথবা কোনো কারণ ছাড়াই যুদ্ধ। আমি এসব কথা বলি উসকানি দেওয়ার জন্য নয়, সত্য কথা বলার জন্য, কারণ সত্য বলা জরুরি। জবাবদিহিতা জরুরি। যদি রাশিয়া সামনের দিনগুলোতে আক্রমণ করে, তাহলে ইউক্রেনকে হয়তো চরম মানবিক মূল্য দিতে হবে, কিন্তু রাশিয়ার জন্য পরিণাম হবে কৌশলগত। রাশিয়া যদি ইউক্রেনে হামলা চালায়, তাহলে তা আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক নিন্দার সম্মুখীন হবে। বিশ্ব ভুলে যাবে না যে, রাশিয়া অপ্রয়োজনীয় মৃত্যু এবং ধ্বংস বেছে নিয়েছে। ইউক্রেন আক্রমণ করা একটি স্বঘোষিত ক্ষত হিসাবে প্রমাণিত হবে। যুক্তরাষ্ট্র এবং আমাদের মিত্র ও অংশীদারেরা সন্দেহাতীতভাবেই এর জবাব দেবে।”
মঙ্গলবার পুতিন বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্র এবং তার নেটো মিত্রদের সঙ্গে ইওরোপে ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা এবং সামরিক অনুশীলন নিয়ে আলোচনার জন্য প্রস্তুত। মস্কো থেকে ইউক্রেন সীমান্তে কিছু সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা আসার পর এ কথা বলেন তিনি।
ইউক্রেনীয় এবং নেটো কর্মকর্তাদের সংশয়ের সঙ্গে গলা মিলিয়ে বাইডেন বলেন, “ভালোই হয়। তবে আমরা এখনো বিষয়টি যাচাই করিনি। রাশিয়ার সামরিক ইউনিটগুলো তাদের নিজস্ব ঘাঁটিতে ফিরে যাচ্ছে কি না সেটাও যাচাই করা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, আমাদের বিশ্লেষকেরা ইঙ্গিত দিচ্ছেন যে তারা অনেকটাই হুমকিজনক অবস্থানে রয়েছে। এবং সত্য কথা হলো এখনো রাশিয়ার ১ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি সেনা ইউক্রেন ও বেলারুশ এবং ইউক্রেনের সীমান্তে ঘিরে রেখেছে।”
কঠিন পরিণতির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বাইডেন বলেন, “আমরা রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষ চাই না। আমি স্পষ্ট বলেছি যে, রাশিয়া যদি ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রকে টার্গেট করে, আমরা জোর করে জবাব দেব। যদি রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্র বা আমাদের মিত্রদের বিরুদ্ধে অসম আক্রমণ করে, যেমন আমাদের কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সাইবার আক্রমণ বা গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে হামলা করলে, আমরা সমুচিত জবাব দিতে প্রস্তুত।”
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি বলেছেন, ওয়াশিংটন ও নেটো আশা করছে, রাশিয়া সীমান্তে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সেনা হ্রাস করবে।
“আমরা এবং আমাদের অনেক ইউরোপীয় অংশীদার ও নেটো মিত্ররা সাফল্য বলতে যেটা বুঝি...ইউক্রেনের সীমান্তে একটি প্রমাণিত উত্তেজনা প্রশমন অর্থাৎ রাশিয়া সেনা প্রত্যাহার করবে এবং যখন তারা সকলের কাছে, বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের কাছে, মিডিয়ার কাছে, জনসাধারণের কাছে এটা স্পষ্ট করে দেবে যে, তারা ইউক্রেন আক্রমণ করবে না এবং তাদের কাজের মাধ্যমে তা প্রমাণ করবে।”
ক্রেমলিনে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজের সঙ্গে সাক্ষাতের পর, পুতিন বলেন, যদিও পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেন এবং অন্য প্রাক্তন সোভিয়েত রাষ্ট্রগুলোর জন্য সম্ভাব্য নেটো সদস্যপদ বাতিল করার এবং রাশিয়ার নিকটবর্তী পূর্ব ইউরোপে পশ্চিমা সেনাদের ফিরিয়ে নেওয়াসহ মস্কোর মূল দাবিগুলো প্রত্যাখ্যান করেছে, তথাপি তিনি পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে যুক্ত হতে ইচ্ছুক।
রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, মস্কো নেটোর সঙ্গে আস্থা পুনস্থাপনের চেষ্টা করবে, যদিও তিনি জোর দিয়ে বলেন, পশ্চিমাদের অবশ্যই তার প্রধান দাবিগুলোর প্রতি মনোযোগ দিতে হবে।
ওয়াশিংটনে বাইডেন এক বক্তৃতায় দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতির কথা জানিয়েছিলেন।
পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে পুতিনের কূটনীতিক আলোচনায় সম্মতি এবং ইউক্রেনের সীমান্তে প্রশিক্ষণ শেষে অপ্রকাশিত সংখ্যক রাশিয়ান সেনা প্রত্যাহার বিশ্ববাসীর মনে আশা জাগায় যে, ইউক্রেনে রাশিয়ার সম্ভাব্য হামলা এড়ানো যাবে।
শোলজ বলেন, তিনি মস্কোর সঙ্গে একমত যে, কূটনৈতিক বিকল্পগুলো বিবেচনার “রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়নি”। সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা একটি “ভালো সংকেত”, মন্তব্য করে তিনি বলেন, তিনি আশা করেন যে, “এ রকম আরও সেনা সরিয়ে নেবে রাশিয়া।”
তবে নেটো এবং ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলেছেন যে, তারা এখনো সেনা প্রত্যাহারের প্রমাণ দেখতে পাননি।
ইউক্রেনের উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণে আনুমানিক ১ লাখ ৩০ হাজার সেনার মধ্যে কতগুলো সেনাকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে তা রাশিয়া জানায়নি।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, “আমরা সবসময় বলেছি মহড়া শেষ হওয়ার পর সেনারা তাদের ঘাঁটিতে ফিরে যাবে। এবারও তাই হবে।”
নেটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ সাংবাদিকদের বলেছেন যে, পশ্চিমের প্রধান এই সামরিক জোট ইওরোপীয় নিরাপত্তা ও ইউক্রেনের অচলাবস্থা নিয়ে কূটনৈতিক আলোচনা চালিয়ে যাওয়া এবং ইউক্রেনের সীমান্ত থেকে সেনা সরিয়ে নিতে মস্কোর ঐকমত্যের লক্ষণকে স্বাগত জানায়।
তিনি বলেন, রাশিয়া প্রায়শই মহড়ার পরে সামরিক সরঞ্জাম ছেড়ে যায়, যাতে বাহিনীকে পুনরায় সংগঠিত করার সুযোগ থাকে।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা রাশিয়ার সেনাদের গতিবিধি নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন।
“ইউক্রেনে আমাদের একটি নিয়ম আছে: আমরা যা শুনি তা বিশ্বাস করি না, আমরা যা দেখি তা বিশ্বাস করি”, কুলেবা বলেছেন। “যদি এই বিবৃতির পরে সত্যি সেনা প্রত্যাহার করা হয়, আমরা উত্তেজনা প্রশমন হয়েছে বলে বিশ্বাস করব”।
সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন যে, এমনকি গত দুই দিনে, পুতিন “ইউক্রেনের সঙ্গে এবং বেলারুশের সীমান্তে সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছেন। ইউনিটগুলোর কিছু অংশ দক্ষিণে স্থলে অনুশীলন করছে।আর নৌ ইউনিটগুলো রয়েছে কৃষ্ণ সাগরে”।
যুদ্ধের হুমকি প্রশমনে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার পশ্চিমা মিত্রদের অব্যাহত প্রচেষ্টার মধ্যে সেনাদের নিজ নিজ ঘাঁটিতে ফিরে যাওয়ার ঘোষণা দেয় রাশিয়া।
[এই প্রতিবেদনের জন্য কিছু তথ্য দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস, এজেন্সি ফ্রান্স-প্রেস এবং রয়টার্স থেকে নেওয়া হয়েছে]