অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

কক্সবাজার থেকে ভাসানচর আশ্রয়নে পৌঁছেছে ১ হাজার ৬৫৫ রোহিঙ্গা


নোয়াখালীর ভাসানচর আশ্রয়নে কক্সবাজার ক্যাম্প থেকে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গারা।
নোয়াখালীর ভাসানচর আশ্রয়নে কক্সবাজার ক্যাম্প থেকে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গারা।

বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলা থেকে নোয়াখালী জেলার ভাসানচর আশ্রয়নে পৌঁছেছে ১ হাজার ৬৫৫ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীর দলটি।

বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর বোটক্লাব জেটিঘাট থেকে নৌবাহিনীর ৬টি জাহাজে ওঠানো হয় রোহিঙ্গাদের। বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে বেলা সোয়া ১টার দিকে জাহাজগুলো ভাসারচর এলাকায় পৌঁছে। সন্ধ্যা নাগাদ সেখানকার আশ্রয়ন-৩ প্রকল্পের পৃথক ছয়টি ক্লাস্টারে ওঠানো হয় কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ আশ্রয়শিবির থেকে আগের দিন বুধবার স্বেচ্ছায় রওনা দেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের।

প্রায় এক লাখ ধারণ ক্ষমতার ভাসানচর আশ্রয়নে এ পর্যন্ত কক্সবাজার থেকে স্থানান্তর করা হয়েছে ২২ হাজার ২৫২ জন বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিককে।

ভাসানচর আশ্রয়ন প্রকল্পের সিআইসি (ক্যাম্প ইনচার্জ) রবীন্দ্র চাকমা ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “বিকেলে নৌবাহিনীর জাহাজ থেকে নামানোর পর রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। তারপর সবাইকে নতুন ঘরে স্থানান্তর করা হয়। নতুন ঘর পেয়ে সবাই খুশী।”

ক্যাম্প ইনচার্জ জানান, নতুন আসা রোহিঙ্গাদের থাকার জন্য মশারি, শীতবস্ত্র, রান্না ও খাবার সামগ্রীসহ আসবাব দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত এবং আগামীকাল শুক্রবার দুপুরে তাদের দুই বেলা রান্না করা খাবার সরবরাহ করা হবে। এরপর তারা নিজেরা রান্না করে খাওয়া দাওয়া করতে পারবেন। রান্নার জন্য গ্যাস সিলিন্ডার, চুল্লিসহ আনুসাঙ্গিক সরবরাহ করা হয়েছে।

মানবিক সেবা কাযক্রমের সঙ্গে যুক্ত ভাসানচরের একটি এনজিও সংস্থার কর্মকর্তা ভয়েস অপ আমেরিকাকে বলেন, সন্ধ্যার আগে কক্সবাজার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের ভাসানচর আশ্রয়ন-৩ এর ক্লাস্টার ৫৭, ৫৮, ৬৮, ৬৯, ৭৯ ও ৮০ নম্বর শেডে রাখা হয়েছে। তবে রোহিঙ্গাদের মালামাল ভর্তি লাগেজগুলো পুলিশ ও আনসার বাহিনী রেখে দিয়েছে। তল্লাশির পর যার যার লাগেজ তাকে পৌঁছে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশের একজন সদস্য।

এ প্রসঙ্গে ক্যাম্প ইনচার্জ রবীন্দ্র চাকমা বলেন, “আগামীকাল শুক্রবার সকালের মধ্যে লাগেজগুলো মালিকের কাছে হস্তান্তর করা হবে। অবৈধ কিছু আছে কি না দেখার জন্য মুলত লাগেজগুলো পুলিশ রেখে দিয়েছে। আমরা আশ্রয়নটি মাদক ও আস্ত্রমুক্ত রাখতে চাই।”

কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা শিবিরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৪ আর্মড ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক ও পুলিশ সুপার মো. নাঈমুল হক বলেন, “গতকাল বুধবার উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠ থেকে ৩৪টি বাসে ৪৮৩ পরিবারের ১ হাজার ৬৫৪ জন রোহিঙ্গাকে চট্টগ্রাম পাঠানো হয়েছিল।চট্টগ্রামের বিএএফ শাহীন কলেজে তারা (রোহিঙ্গারা) রাত যাপন করেন। তারা সবাই উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয়শিবিরের বাসিন্দা।”

এই দুই উপজেলার ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা সাড়ে ১১ লাখ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে রোহিঙ্গাদের বিএএফ শাহীন কলেজ থেকে আনা হয় কর্ণফুলী নদীর বোটক্লাব জেটিতে। এরপর নৌবাহিনীর ছয়টি জাহাজে ১ হাজার ৯০৪ জনতে উঠানো হয়। এরমধ্যে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গা ১ হাজার ৬৫৫ জন এবং ২৪৯ জন উখিয়া ও টেকনাফ ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা (মাঝি)। যারা ভাসারচর আশ্রয়ণ দেখতে গেছেন। এ ছাড়া রয়েছেন রোহিঙ্গা সেবায় নিয়োজিত মেডিকেল টিম, এনজিও সংস্থার কর্মকর্তারা।

রোহিঙ্গা ও অতিথিদের মধ্যে বানৌজা হাতিয়াতে ওঠানো হয় ৩১৮ জন, বানৌজা টুনাতে ৩১৭ জন, বানৌজা ডলফিন ৩১১ জন, বানৌজা সন্দ্বীপ ৩১৭ জন, বানৌজা পেঙ্গুইন ৩১৭ জন এবং বানৌজা তিমিতে ৩২৪ জনকে তোলা হয়। এ ছাড়া শরণার্থীদের মালামাল বহনের জন্য আরও দুটো জাহাজ বানৌজা শাহ পরান ও বানৌজা শাহ মখদুম বহরে ছিল।

বানৌজা টুনাতে চড়ে আশ্রয়নে যান ভাসানচর আশ্রয়ন প্রকল্পের পরিচালক ও নৌবাহিনীর কমান্ডার এম রাশেদ সাত্তার, ভারতীয় হাইকমিশনের সহকারী হাইকমিশনার মি. নিতিশ। উপস্থিত ছিলেন নৌবাহিনীর কমডোর আব্দুল্লাহ আল মাকসুদ।
কক্সবাজারের আশ্রয়শিবিরের চাপ কমাতে সরকার এখানকার এক লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ভাসানচর আশ্রয়নে স্থানান্তরের পরিকল্পনা হাতে নেয়। লাখো রোহিঙ্গাকে রাখার জন্য জনমানবশূন্য ভাসানচরে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এবং সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্প গড়ে তোলা হয়। ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই জায়গায় তৈরি হয় ১২০টি গুচ্ছগ্রাম।

সরকারি একটি গোয়েন্দা সংস্থার তত্বাবধানে কক্সবাজার থেকে শরণার্থী স্থানান্তর কাযক্রম পরিচালনা করছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নসহ (এপিবিএন) বিভিন্ন আইনশৃংখলা বাহিনী। সহযোগিতায় আছে কয়েকটি এনজিও সংস্থা।

XS
SM
MD
LG