অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

পুতিন, তার সহযোগী এবং রাশিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কোম্পানিগুলো ব্রিটিশ নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্যবস্তু হবে—বরিস জনসন


অজ্ঞাত স্থানে সেনা মহড়ায় ইউক্রেনিয়ান সেনারা। ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২২। (ছবি- ইউক্রেন সেনা বাহিনী/ এএফপি)

ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন রবিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বলেছেন, ইউক্রেন আক্রমণ করলে যুক্তরাজ্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে “সম্ভাব্য সবচেয়ে কঠিন” অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে।

জনসন বিবিসিকে বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা শুধুমাত্র রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং তার সহযোগীদেরই লক্ষ্যবস্তু করবে না, “রাশিয়ার জন্য কৌশলগত গুরুত্ব রয়েছে এমন সমস্ত সংস্থা এবং সংস্থাকেও” লক্ষ্যবস্তু বানাবে।

ব্রিটিশ নেতা বলেন, “আমরা রাশিয়ান কোম্পানিগুলোকে যুক্তরাজ্যের বাজারে ঢোকা বন্ধ করব, এবং এমনকি আমরা আমাদের আমেরিকান বন্ধুদের সঙ্গে মিলে পাউন্ড এবং ডলারে বাণিজ্য বন্ধ করে দেব”।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁন এবং পুতিন রবিবার সকালে টেলিফোনে আলাপ করেন যেটিকে এলিসির মতে “ইউক্রেনে একটি বড় সংঘাত এড়াতে চূড়ান্ত সম্ভাব্য এবং প্রয়োজনীয় প্রচেষ্টা” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

ইউক্রেন আক্রমণ থেকে পুতিনকে নিরস্ত করতে ফরাসি নেতার মস্কো সফরের দুই সপ্তাহ পর এই ফোনালাপ হলো।

পুতিন ইউক্রেন দখল করেই ক্ষান্ত হবেন নাব্রিটেনের পররাষ্ট্রসচিবের হুঁশিয়ারি

“পুতিনকে আমাদের থামাতেই হবে, কারণ তিনি ইউক্রেনে হামলা করে থেমে যাবেন না”, ব্রিটেনের পররাষ্ট্রসচিব লিজ ট্রাস রবিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) ডেইলি মেইলে এক সাক্ষাত্কারে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ইউক্রেনে সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে মন্তব্য করেন।

“পুতিন এই সব প্রকাশ্যে বলেছেন, তিনি বৃহত্তর রাশিয়া প্রতিষ্ঠিত করতে চান। তিনি পূর্ব ইউরোপের বিশাল অংশের ওপর রাশিয়ার পূর্ববর্তী নিয়ন্ত্রণ পুনপ্রতিষ্ঠিত করতে চান”।

ইওরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাহী কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লেয়েন বলেন, “অন্ধকারাচ্ছন্ন অতীত থেকে উদ্ভূত ক্রেমলিনের বিপজ্জনক চিন্তাভাবনার কারণে রাশিয়াকে চরম মূল্য দিতে হতে পারে।”

তিনি বলেন, রাশিয়া যদি ইউক্রেন আক্রমণ করে তবে আর্থিক বাজার এবং প্রযুক্তি পণ্যগুলোতে রাশিয়ার সীমিত প্রবেশাধিকার থাকবে। এই মর্মে একটি নিষেধাজ্ঞা তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি শনিবার বলেন, ইউক্রেনের সীমান্তে হাজার হাজার রাশিয়ান সামরিক সেনা মোতায়েনের ফলে উদ্ভূত সংকট সমাধানে তিনি পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান।

মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে জেলেনস্কি বলেন, “রাশিয়ান ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট কী চান আমি জানি না, তাই আমি একটি বৈঠকের প্রস্তাব করছি”।

এদিকে অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স ও জার্মানি সাম্প্রতিকতম দেশ হিসেবে তাদের নাগরিকদের ইউক্রেন ছেড়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে। জার্মান বিমান সংস্থা লুফথানসা ইউক্রেনীয় কৃষ্ণ সাগরসংলগ্ন কিয়েভ ও ওডেসার ফ্লাইটও বাতিল করেছে।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রবিবার জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গে দেখা করবেন। হোয়াইট হাউস শনিবার আবার ঘোষণা করে “রাশিয়া যেকোনো সময় ইউক্রেনের বিরুদ্ধে হামলা চালাতে পারে”।

পূর্ব ইউক্রেনে গোলাবর্ষণ বেড়ে যাওয়ায় শনিবার সামরিক মহড়ার পরিচালনা করেন পুতিন।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক শনিবারের মহড়াকে আগে থেকে পরিকল্পিত ছিল দাবি করে জানায়, এতে পুতিন এবং বেলারুশের প্রেসিডেন্টের উপস্থিতিতে আন্তমহাদেশীয় ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রবাহী সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণ অনুশীলন করা হয়েছে।

হামলা করতে প্রস্তুত

শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেন, ইউক্রেন সীমান্তে জড়ো হওয়া ১ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি রুশ সেনা “এখন হামলা করার জন্য প্রস্তুত”, তিনি লিথুয়ানিয়ায় সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেছেন, যেখানে লিথুয়ানিয়ার প্রেসিডেন্ট গিটানাস নৌসেদা যুক্তরাষ্ট্রের সেনা উপস্থিতি বাড়ানোর আহ্বান জানান।

শনিবার মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে, যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস সতর্ক করে দিয়ে বলেন, রাশিয়ার পরিকল্পনা ইতিমধ্যেই প্রকাশ পেয়েছে।

“রাশিয়ান আগ্রাসনের একটি নকশা রয়েছে এবং এই নকশাটি আমাদের সবার কাছে খুব পরিচিত। রাশিয়া নিজেদের অজ্ঞ এবং নির্দোষ দাবি করবে। এটি হামলার জন্য মিথ্যা অজুহাত দেখাবে, এবং এই ফাঁকে সেনা ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করবে”, বলেন হ্যারিস। তিনি আরও যোগ করেন রাশিয়া হামলা চালালে তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে যার মধ্যে সুদূরপ্রসারী আর্থিক নিষেধাজ্ঞা ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে৷

তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র নেটোর পূর্ব দিকের অংশকে রাশিয়ার সামরিক আক্রমণের আরেকটি প্রতিবন্ধক হিসেবে শক্তিশালী করবে।

একই সম্মেলনে নেটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ আরও বলেছেন যে, তিনি ইউক্রেনে সংঘাত এড়াতে নেটো-রাশিয়া কাউন্সিলের বৈঠকের আহ্বান জানিয়ে ল্যাভরভকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। স্টলটেনবার্গ মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে বলেন যে, রাশিয়া ইউক্রেনের সীমানা থেকে তার কোনো সেনা প্রত্যাহার করেছে এমন কোনো প্রমাণ নেই এবং সংঘর্ষের সত্যিকারের ঝুঁকি রয়েছে।

নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ও কর্মকর্তাদের উদ্দেশে এক বক্তৃতায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট অবশ্য “আতঙ্কের” কিছু নেই বলে মন্তব্য করেন।

তবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বিবিসিকে বলেন, “১৯৪৫ সালের পর সবচেয়ে বড় যুদ্ধের” পরিকল্পনা করছে রাশিয়া।

নতুন হামলা

ইওরোপের নিরাপত্তা ও সহযোগিতা সংস্থার পর্যবেক্ষকেরা শনিবার পূর্ব ইউক্রেনে দেড় হাজারেরও বেশি যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের কথা জানিয়েছেন, যা এই বছরের সর্বোচ্চ এক দিনের হিসাব।

ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী পূর্ব ইউক্রেনের দুটি বিচ্ছিন্ন অঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের—স্বঘোষিত ডোনেটস্ক এবং লুহানস্ক প্রজাতন্ত্র—এই হামলার জন্য অভিযুক্ত করেছে। তারা শনিবার নতুন করে হামলা চালিয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

বিচ্ছিন্নতাবাদীরা, যারা শনিবার ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে নতুন হামলা চালানোর জন্য অভিযুক্ত করেছে, তারা গণ সামরিক সংহতির ডিক্রিতে স্বাক্ষর করেছে। একটি অঞ্চলের প্রধান সমস্ত সক্ষম পুরুষদেরকে তার ভাষ্যমতে কিয়েভের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। অঞ্চলগুলো সীমান্ত এলাকা থেকে কিছু বেসামরিক লোককে সরিয়ে নেওয়া শুরু করেছে।

বাইডেন বলেন যে, এই পদক্ষেপটি রাশিয়ান ভুল তথ্যের ফল। এটি “মৌলিক যুক্তিকে অস্বীকার করে” যে ইউক্রেনের লোকেরা ইউক্রেনের সীমান্তে ১ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি রাশিয়ান সেনা মজুত থাকা অবস্থায় যুদ্ধে জড়িত হওয়ার জন্য “এই মুহূর্তটি বেছে নেবে”।

ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে যে, শনিবার পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়াপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের গোলাগুলিতে তাদের দুই সেনা নিহত হয়েছে। তারা প্রথমে এএফপিকে একজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছিল।

কূটনৈতিক চ্যানেল

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের ২৪ ফেব্রুয়ারি ল্যাভরভের সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে।

হামলা হলে, পশ্চিমা মিত্রদের অবশ্যই মস্কোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার সময় এবং তীব্রতা নিয়ে মতপার্থক্য সমাধান করতে হবে।

আন্তর্জাতিক অর্থনীতির উপ-জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা দালীপ সিং বলেছেন, “আমাদের অন্য কঠোর ব্যবস্থাগুলোর সঙ্গে আমাদের মিত্ররা এবং অংশীদারেরা আমাদের সঙ্গে যুক্ত হতে প্রস্তুত”। শুক্রবার হোয়াইট হাউসে ব্রিফিংয়ের সময় সাংবাদিকদের এসব বলেন তিনি। “তবে আমরা সর্বদা এই সম্ভাব্য উপায়গুলো নিরীক্ষণ করব এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত সংশোধন করব।”

“রাশিয়ার রপ্তানির দুই-তৃতীয়াংশ এবং এর বাজেটের অর্ধেক আয় তেল ও গ্যাস থেকে আসে এবং পুতিন যদি তার শক্তিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে, তবে এটি বিশ্বকে রাশিয়ার জ্বালানি সম্পদের ব্যবহার থেকে দূরে ঠেলে দেবে”।

সিং যোগ করেন, মস্কো চীনসহ অন্য দেশ থেকে প্রযুক্তি আমদানি করতে পারবে না, যদি ওয়াশিংটনও কঠোর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে, যেটার হুমকি তারা দিয়েছে।

রাশিয়ান কর্মকর্তারা ইউক্রেন আক্রমণ করার পরিকল্পনা অস্বীকার করলেও পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে দেশটির কূটনৈতিক আলোচনা স্থবির অবস্থায় রয়েছে। রাশিয়ার দাবি যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা নেটোতে সদস্য হওয়ার জন্য ইউক্রেনের আবেদন প্রত্যাখ্যান করবে।

পশ্চিমা বিশ্ব এই শর্ত মেনে নেয়নি, তবে তারা বলেছে যে, তারা রাশিয়ার নিকটতম পূর্ব ইওরোপীয় দেশগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন এবং সেনা মহড়া নিয়ে মস্কোর সঙ্গে আলোচনা করতে ইচ্ছুক।

[এই প্রতিবেদনের কিছু তথ্য দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস, রয়টার্স এবং এজেন্সি ফ্রান্স-প্রেস থেকে নেওয়া হয়েছে]

XS
SM
MD
LG