অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা না করার শর্তে পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় সম্মতি বাইডেনের


হোয়াইট হাউজের কাছে ওয়াশিংটনের লাফিয়াত স্কোয়ারে 'স্ট্যান্ড উইথ ইউক্রেন' র‍্যালিতে অংশগ্রহণকারীরা। ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২২। (ছবি- রয়টার্স)
হোয়াইট হাউজের কাছে ওয়াশিংটনের লাফিয়াত স্কোয়ারে 'স্ট্যান্ড উইথ ইউক্রেন' র‍্যালিতে অংশগ্রহণকারীরা। ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২২। (ছবি- রয়টার্স)

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসতে “নীতিগতভাবে” সম্মত হয়েছেন। শুধুমাত্র রাশিয়া যদি “সামরিক পদক্ষেপ না নেয়” তবেই বৈঠক হবে বলে হোয়াইট হাউস রবিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) ঘোষণা দিয়েছে।

প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি এক বিবৃতিতে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ এই সপ্তাহে ইওরোপে প্রথম আলোচনা করবেন।

যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা সম্পর্কে বারবার সতর্ক করার মধ্যেই এই বৈঠকের প্রস্তাব এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র এবং তার পশ্চিমা মিত্ররা হামলা হলে রাশিয়ার ওপর শাস্তিমূলক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে প্রস্তুত। যদিও তাদের দাবি তারা এখনো কয়েক মাস ধরে উদ্ভূত সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

"আমরা সবসময় কূটনীতির জন্য প্রস্তুত", সাকি বলেন। “রাশিয়া যদি যুদ্ধ বেছে নেয় তবে আমরা দ্রুত এবং গুরুতর পরিণতি আরোপ করতেও প্রস্তুত। বর্তমানে, রাশিয়া খুব শিগগিরই ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।”

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, বাইডেন ও পুতিনের বৈঠকের জন্য এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই এবং এই ধরনের বৈঠক “নেতারা চাইলেই সম্ভব”।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁন রবিবার যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার উভয় নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন এবং বলেছেন যে, উভয়ই একটি শীর্ষ সম্মেলনের প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন।

ইউক্রেন এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা সাংবাদিকদের বলেন, “কূটনৈতিক সমাধানের লক্ষ্যে প্রতিটি প্রস্তাবই বিবেচনাযোগ্য”।

“মানুষ হিসেবে, মরিয়া হয়ে যুদ্ধ এড়াতে চান এমন একজন ব্যক্তি হিসেবে, আমরা আশা করি যে দুই রাষ্ট্রনেতা ইউক্রেন থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে একটি ঐকমত্যে পৌছাতে পারবেন”, কুলেবা ব্রাসেলসে ইওরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত সদস্য দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে এক বৈঠকের আগে বলেন।

তিনি যোগ করেন, ব্লিংকেন তাকে আশ্বস্ত করেছেন যে, ইউক্রেনের সম্পৃক্ততা ছাড়া ইউক্রেন সম্পর্কে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না এবং “আমাদের স্বার্থ বিবেচনায় রেখে রুশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের আগে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সঙ্গে সমন্বয় করে নেবে”।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, তিনি ম্যাক্রোঁনের সঙ্গে পূর্ব ইউক্রেনের পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন, যেখানে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে রুশ বিচ্ছিন্নতাবাদী ও ইউক্রেনীয় বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি অব্যাহত রয়েছে। জেলেনস্কি টুইট করে বলেছেন যে, তিনি রাশিয়া, ইউক্রেন এবং ইউরোপের নিরাপত্তা ও সহযোগিতা সংস্থার অন্তর্ভুক্ত “ত্রিপক্ষীয় কনট্যাক্ট গ্রুপের” সঙ্গে আলোচনার আহ্বানকে সমর্থন করেন।

রাশিয়ার নেতারা ইউক্রেন আক্রমণের পরিকল্পনা নেই দাবি করলেও, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে রাশিয়া ইউক্রেনের সীমান্তে আরও সেনা ও সরঞ্জামের সমাবেশ ঘটিয়েছে এবং ইউক্রেনের উত্তর প্রতিবেশী বেলারুশ তাদের সামরিক মহড়া পরিকল্পনা অনুযায়ী রবিবার শেষ হবে না ঘোষণা দেওয়ায় সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কা রয়েই গেছে।

সব মিলিয়ে এই অঞ্চলে রাশিয়ার আনুমানিক ১ লাখ ৫০ হাজার সেনা মোতায়েন রয়েছে।

ব্লিংকেন রবিবার সিএনএনের “স্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন” শোতে রাশিয়ার সেনা মোতায়েন নিয়ে বলেছিলেন যে, গত সপ্তাহে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ও প্রধান ব্যাংকগুলোতে সাইবার আক্রমণ এবং পূর্ব ইউক্রেনে যুদ্ধের নতুন আলামত ইঙ্গিত দেয় যে, বড় ধরনের যুদ্ধের আগে রাশিয়া “তার প্লেবুক অনুসরণ করছে”।

অন্যদিকে পূর্ব ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা দাবি করেছে যে, কিয়েভের বাহিনী সেখানে হামলার পরিকল্পনা করছে, যা ইউক্রেন অস্বীকার করেছে।

সপ্তাহান্তে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে, জেলেনস্কি প্রশ্ন করেন যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা, যারা রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালালে দেশটির ওপর দ্রুত কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তারা এখনো সেটা আরোপ করছে না কেন।

ব্লিংকেন বলেন, “নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার সঙ্গে সঙ্গেই হামলা ঠেকানোর প্রতিরোধ ক্ষমতা হারাতে হবে” এবং যদি পশ্চিমারা নির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেয় তবে রাশিয়া “তাদের বিরুদ্ধে পরিকল্পনা করতে পারে”।

যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ এই কূটনীতিক বলেন, “ট্যাঙ্কগুলো না নড়লে” এবং ক্ষেপণাস্ত্র চালু না হওয়া পর্যন্ত, পশ্চিমা নেতারা পুতিনের মন “পরিবর্তন করতে”, “তাকে তার সিদ্ধান্তের পথ থেকে সরিয়ে আনতে” সম্ভাব্য সবকিছু করার চেষ্টা করবেন।

রবিবার রয়টার্স জানিয়েছে যে, নিষেধাজ্ঞার একটি প্রাথমিক তালিকার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রধান রুশ ব্যাংকগুলোর জন্য লেনদেন প্রক্রিয়াকরণ স্থগিতের সিদ্ধান্ত অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে এবং নির্দিষ্ট কিছু রুশ ব্যক্তি ও সংস্থাকে বিশেষভাবে মনোনীত নাগরিকদের তালিকায় রাখা হবে। এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা ব্যবহার করতে পারবেন না, তারা আমেরিকানদের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক রাখতে পারবেন না এবং যুক্তরাষ্ট্রে তাদের সম্পদ জব্দ করা হবে।

রবিবার সিবিএস নিউজের “ফেস দ্য ন্যাশন” শোতে, যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আনাতোলি আন্তোনোভ বলেছেন, আক্রমণের জন্য “এমন কোনো পরিকল্পনা নেই”।

তিনি বলেন “নিজস্ব ভূখণ্ডে যেখানে চাই সেখানে আমাদের সেনা রাখার বৈধ অধিকার রাশিয়ার রয়েছে”।

[এই প্রতিবেদনের জন্য কিছু তথ্য দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস, এজেন্সি ফ্রান্স-প্রেস ও রয়টার্স থেকে নেওয়া হয়েছে]

XS
SM
MD
LG