অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বইমেলায় অমর একুশের ব্যঞ্জনা


বইমেলায় স্টলগুলোতে ছিল উপচে পড়া ভিড়। (ছবি: পুষ্পিতা রহমান)
বইমেলায় স্টলগুলোতে ছিল উপচে পড়া ভিড়। (ছবি: পুষ্পিতা রহমান)

মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মেলায় জনসমাগম এবং বিক্রি প্রত্যাশা ছাড়িয়ে যায়। ২১ ফেব্রুয়ারি সোমবার সকাল ৮টা থেকেই মেলা খুলেছিল। সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে অনেকই মেলায় চলে আসেন। ফলে সকাল থেকেই মেলায় প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। তবে মূল জনস্রোত শুরু হয় দুপর থেকে। সরকারি ছুটির দিন থাকায় পরিবার নিয়ে গ্রন্থানুরাগী নগরবাসীরা মেলায় আসেন।

গত বছর একুশের দিনে মেলা হয়নি। সম্ভবত সে কারণেই এবার মেলায় লোকসমাগম আগের একুশের দিনগুলোকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন।

নারী–পুরুষ–শিশু–কিশোর, অধিকাংশের পরনেই ছিল সাদা–কালো রংঙের পোশাক। শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, পাঞ্জাবি, চাদর। তাতে বর্ণমালা বা ঐতিহ্যবাহী আলপনার নকশা আঁকা। এতে আবহই বদলে যায়। সৃষ্টি হয় অমর একুশের ব্যঞ্জনা।

একুশের বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

বিকেলে মেলার মূল মঞ্চে ছিল “ফিরে দেখা: আমাদের ভাষা আন্দোলন” শীর্ষক অমর একুশে বক্তৃতা–২০২২। বক্তব্য দেন কবি আসাদ চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।

বইমেলায় স্টলগুলোতে ছিল উপচে পড়া ভিড়। (ছবি: পুষ্পিতা রহমান)
বইমেলায় স্টলগুলোতে ছিল উপচে পড়া ভিড়। (ছবি: পুষ্পিতা রহমান)

স্বাগত ভাষণে মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, “আমাদের একুশ এখন সারা বিশ্বের। একুশের সত্তর বছর আমাদের জাতিসত্তার উৎসমূলে নতুন করে দৃষ্টিপাত এবং ভাষা-সংস্কৃতি ও জাতিতাত্ত্বিক নিবিড় আত্মঅন্বেষায় উদ্বুদ্ধ করে।”

প্রবান্ধিক আসাদ চৌধুরী বলেন, “অমর একুশের সত্তর বছর পূর্ণ হলো আজ। তবে বাঙালির ভাষা আন্দোলন কেবল সত্তর বছরের বিষয় নয়; হাজার বছর ধরে বাঙালি আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির অধিকারের জন্য লড়াই করে এসেছে। এ লড়াই কেবল সাংস্কৃতিক লড়াই ছিল না, এ লড়াই ছিল অর্থনৈতিক-সামাজিক এবং অবশ্যই রাজনৈতিক।”

তিনি বলেন, “ভাষা আন্দোলনের মূলে ছিল পূর্ববাংলার সংগ্রামী জনগণের লড়াকু ভূমিকা। তারা এ আন্দোলনকে রাষ্ট্রভাষা বাংলার অধিকার প্রতিষ্ঠার পরিণতিতে নিয়ে গেছে এবং কালক্রমে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়কে আসন্ন করেছে।”

সভাপতির বক্তব্যে সেলিনা হোসেন বলেন, “অমর একুশের সত্তর বছর পূর্তি বাঙালি জাতির জন্য পরম গৌরবের বিষয়। ভাষাসংগ্রামের মধ্য দিয়ে ভাষাভিত্তিক বাঙালি জাতিরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন।”

দ্বিতীয় পর্বে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কবি মাকিদ হায়দার, বিমল গুহ ও আবদুস সামাদ ফারুক। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী দেওয়ান সাইদুল হাসান, জয়ন্ত রায়, শাহাদৎ হোসেন নিপু। অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করেন নৃত্যশিল্পী সৌন্দর্য প্রিয়দর্শিনী ঝুম্পা ও ফরহাদ আহমেদ শামীম। সংগীত পরিবেশন করেন সাংস্কৃতিক সংগঠন “ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী”র শিল্পীরা। আরও সংগীত পরিবেশন করেন মহাদেব চন্দ্র ঘোষ, কল্যাণী ঘোষ, স্বর্ণময়ী ম্লল, তাজুল ইমাম ও আরিফ রহমান। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ পাল (তবলা), আনোয়ার সাহদাত রবিন (কি-বোর্ড), মো. আরিফ কোরাইশী (গিটার), মো. ফারুক (অক্টোপ্যাড)।

ভাষাশহীদ মুক্তমঞ্চের আয়োজন

ভাষাশহীদ মুক্তমঞ্চে সকালে কবি অসীম সাহার সভাপতিত্ব অর্ধশতাধিক কবি কবিতা পাঠ করেন।

বিকেলে বাংলা একাডেমির সচিব কবি হাসানাত লোকমানের সভাপতিত্বে পঁচিশজন বিশিষ্ট কবি কবিতা পাঠ করেন। পরে এখানে জহির রায়হান পরিচালিত ভাষা আন্দোলনভিত্তিক চলচ্চিত্র “জীবন থেকে নেয়া” প্রদর্শিত হয়।

এ ছাড়া লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের বই নিয়ে আলোচনা করেন কথাশিল্পী ইমদাদুল হক মিলন ও আনিসুল হক।

XS
SM
MD
LG