পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের জন্য বুধবার রাশিয়ায় পৌঁছেছেন। কর্মকর্তারা বলেছেন, দুই পক্ষ জ্বালানী সহযোগিতাসহ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পর্যালোচনা করবে।
পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন পিটিভি, মস্কোর বিমানবন্দরে খানের আগমনের দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার করে, রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইগর মরগুলভ সেখানে তাকে স্বাগত জানান।
এই সপ্তাহের শুরুতে পুতিন ইউক্রেনের বিচ্ছিন্ন প্রজাতন্ত্র ডোনেৎস্ক এবং লুহানস্কের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেওয়ার এবং সেখানে সেনা মোতায়েন করার পর, খানই প্রথম বিদেশী নেতা যিনি মস্কো সফর করেন। রাশিয়ার ওই পদক্ষেপ পশ্চিমাদের সাথে উত্তেজনা বাড়িয়েছে এবং দেশটির বিরুদ্ধে নতুন আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দ্যমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের বলেন, আগামী বৃহস্পতিবার খানের সঙ্গে পুতিনের বৈঠক হওয়ার কথা আছে। পেসকভ বলেন, "নেতারা দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার মূল বিষয়গুলির পাশাপাশি, দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নসহ প্রাসঙ্গিক আঞ্চলিক বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করার পরিকল্পনা করেছেন।" ১৯৯৯ সালের পর এটিই কোনো পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রীর রাশিয়া সফর।
সফরে খানের সাথে থাকা জ্বালানি মন্ত্রী হাম্মাদ আজহার বলেছেন, বৃহস্পতিবারের বৈঠকে অন্যান্য বিষয়গুলির মধ্যে সাম্প্রতিক মাসগুলিতে দুই দেশের মধ্যে ইতোমধ্যেই আলোচনা হয়েছে, এমন বেশ কয়েকটি "সম্ভাব্য (জ্বালানী) প্রকল্প" প্রসঙ্গ উঠে আসবে।
আজহার বলেন, উভয় পক্ষই "কিছু অনিষ্পন্ন সমস্যা এবং ওইসব প্রকল্প বিষয়ে আরও ব্যাখা নিয়ে আলোচনা করবে।" তবে তিনি বিস্তারিত আর কিছু বলেননি।
রাশিয়ান কোম্পানিগুলির সাথে অংশীদারিত্বে পাকিস্তানে একটি দীর্ঘ বিলম্বিত, ব্যয়বহুল , ১, ১০০ কিলোমিটার গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ প্রস্তাবিত উদ্যোগগুলির মধ্যে একটি।
২০১৫ সালে মস্কো এবং ইসলামাবাদ পাকিস্তানের দক্ষিণ বন্দর শহর করাচি থেকে দেশের সবচেয়ে জনবহুল উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় পাঞ্জাব প্রদেশে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহের জন্য নর্থ-সাউথ গ্যাস পাইপলাইন নামে পরিচিত ওই পাইপলাইন চালু করতে প্রাথমিকভাবে সম্মত হয়েছিল।
খান, মঙ্গলবার রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন আরটি টেলিভিশন নেটওয়ার্কের সাথে কথা বলার সময় উল্লেখ করেন, রাশিয়ান কোম্পানিগুলির উপর আরোপিত পূর্বের নিষেধাজ্ঞাগুলি প্রকল্পটি চালু করতে দুই দেশকে বাধা দিয়েছিল।
ইসলামাবাদের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রেসিডেন্ট পুতিনের আমন্ত্রণে দু’দিনের এই সফরটি ইউক্রেন সংকট শুরুর আগেই পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
রাশিয়ান মিডিয়ার সাথে এক সাক্ষাৎকারে ইউক্রেন ইস্যু নিয়ে ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে মস্কোর ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার সাথে তার এই সফরের কোনও সম্পর্ক আছে কিনা, জানতে চাওয়া হলে, খান তা নাকচ করে দেন ।
খান মঙ্গলবার আরটি-কে বলেন, “এই [ইউক্রেন সংকট] আমাদের জন্য মোটেও উদ্বেগের বিষয় নয়। রাশিয়ার সাথে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রয়েছে এবং আমরা এটিকে আরও শক্তিশালী করতে চাই”।
খান আরও বলেন, "এখন, আমরা কোনো ব্লকের অংশ হতে চাই না। আমরা সব দেশের সঙ্গেই বাণিজ্যিক সম্পর্ক রাখতে চাই।" পাকিস্তানি নেতা জোর দিয়ে বলেন, তিনি আশা করেন ইউক্রেন সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান হবে।