অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

আক্রমণের সমালোচকদের দমনের চেষ্টার প্রতিবাদে রাশিয়ায় আবার বিক্ষোভ শুরু


রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে পুলিশ অফিসাররা বিক্ষোভরত এক নারীকে আটক করেছে৷২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২।
রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে পুলিশ অফিসাররা বিক্ষোভরত এক নারীকে আটক করেছে৷২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২।

যুদ্ধবিরোধী মনোভাব ঠেকাতে কর্তৃপক্ষের ব্যাপক দমননীতি সত্ত্বেও বিক্ষোভকারীরা শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) মস্কো, সেন্ট পিটার্সবার্গসহ গোটা রাশিয়া জুড়ে ইউক্রেনে আগ্রাসনের নিন্দা জানাতে রাস্তায় নামেন।

সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ হয় সেন্ট পিটার্সবার্গে। সেখানে কয়েক শ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে শহরের কেন্দ্রস্থলে জড়ো হয়ে, “যুদ্ধ নয়!” স্লোগান দেন। দাঙ্গা পুলিশ সেখান থেকে একের পর এক বিক্ষোভকারীকে আটক করে।

রাজনৈতিক গ্রেপ্তার নিয়ে কাজ করা সংস্থা ওভিডি-ইনফো রাইটস গ্রুপ বলেছে, রাশিয়ার ২৬টি শহরে ৪৩৭ জনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে ২২৬ জনকে মস্কোতে এবং ১৩০ জনকে সেন্ট পিটার্সবার্গে আটক করা হয়েছে৷ মস্কোতে, পুলিশ সাধারণ লোকদের—যারা বিক্ষোভের আশপাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল, তাদেরও আটক করেছে বলে একাধিক খবরে প্রকাশিত হয়েছে।

শুক্রবার রাতের সমাবেশটি বৃহস্পতিবারের তুলনায় ছোট হয়। বৃহস্পতিবার হাজার হাজার মানুষ রাশিয়াজুড়ে রাস্তায় নামেন। ওভিডি-ইনফো অনুসারে, বৃহস্পতিবার রাতে মস্কোতে এক হাজার ২ জনসহ রাশিয়ার ৫৮টি শহরে মোট ১ হাজার ৮২০ জন বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ—তিনি বিক্ষোভের মাত্রা কমিয়ে আনার চেষ্টা করছেন, শুক্রবার বলেন, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন “সকলের মতামত শোনেন”, এবং "যাদের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে ও যারা এই ধরনের প্রয়োজনীয় অপারেশনের পক্ষে”, তাদের মতামত সম্পর্কেও তিনি অবহিত।

ইউক্রেনের ওপর হামলার সমর্থন এসেছে চেচনিয়ার পক্ষ থেকেও। মুসলিম প্রধান এই দেশের বর্তমান শাসক রমজান কাদিরভ। শুক্রবার চেচেন মিডিয়া জানিয়েছে যে, কাদিরভ প্রায় ১২ হাজার নিরাপত্তা বাহিনী অপারেটিভকে এই অঞ্চলের রাজধানী গ্রোজনির কেন্দ্রে সমাবেশ করেন, যা একটি অপারেশনাল প্রস্তুতি পরীক্ষা হিসেবে বর্ণনা করা হয়।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে পরিচালিত টিভি চ্যানেল আরটি-এর প্রধান সম্পাদক মার্গারিটা সিমোনিয়ান টেলিগ্রামে একটি ভিডিও পোস্ট করেন যাতে দেখা যাচ্ছে রাশিয়ান সাঁজোয়া যান একটি গ্রামীণ এলাকায় ঘুরছে এবং একজন লোক চিৎকার করছে, “ঈশ্বর তোমাদের সহায় হোন, বন্ধুরা! আমরা আট বছর ধরে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।”

সাংবাদিকদের জন্য প্রতিক্রিয়া

এরই মধ্যে যারা আক্রমণের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, তারা প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হয়েছেন।

কমার্স্যান্ট দৈনিকের সাংবাদিক ইয়েলেনা চেরনেনকো বলেছেন যে, ইউক্রেনের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে প্রায় ৩০০ সাংবাদিকের স্বাক্ষরিত একটি খোলা চিঠির জন্য তাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রকের পুল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। চেরনেনকো মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে বলেছেন যে, মন্ত্রক তার “পেশাদারত্বের অভাব” আছে বলে নিন্দা করে। তিনি আরও বলেন, তিনি চিঠিতে স্বাক্ষরকারী সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিতে কর্মকর্তাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন আরেক সাংবাদিক হলেন ইউরি ডুড। ক্রেমলিননের একজন সরব সমালোচক ডুড, যিনি রাশিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় ইউটিউব ব্লগ পরিচালনা করেন, অন্য অনেকের মতো বৃহস্পতিবার ইউক্রেন আক্রমণের নিন্দা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি বড় পোস্ট দেন।

জনপ্রিয় রাষ্ট্রীয় টিভি স্টেশন, চ্যানেল ওয়ান, ঘোষণা করেছে যে, এটি “বর্তমান পরিস্থিতির কারণে” বিনোদন অনুষ্ঠানগুলোর পরিবর্তে সংবাদ ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠান প্রচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাদ পড়া অনুস্থানের মধ্যে একটি মধ্যরাতের শো রয়েছে। এই শোয়ের উপস্থাপক জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা ইভান আরগ্যান্ট, যিনি ইনস্টাগ্রামে ইউক্রেনে আক্রমণের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন।

চ্যানেলের মুখপাত্র জোর দিয়ে বলেছেন যে, সময়সূচি থেকে আরগ্যান্টের অনুষ্ঠানটি সরানোর সিদ্ধান্তের সঙ্গে তার ইনস্টাগ্রাম পোস্টের কোনো সম্পর্ক নেই।

ফেসবুকে প্রবেশাধিকার

ভিন্নমত দমনের রুশ পদক্ষেপের আরেকটি নমুনা হলো, রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় যোগাযোগ এবং ইন্টারনেট ওয়াচডগ, রোসকোমনাজোর ফেসবুকের ওপর “আংশিক নিষেধাজ্ঞা” ঘোষণা। ফেসবুক কয়েকটি ক্রেমলিন-সমর্থিত গণমাধ্যমের অ্যাকাউন্টের প্রবেশাধিকার সীমিত করলে তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। তবে বিধিনিষেধগুলোর পরিসীমা নিয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

সংস্থাটি বলেছে যে এটি ফেসবুককে রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আরআইএ নভোস্তি, রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল জাভেজদা এবং ক্রেমলিনপন্থী নিউজ সাইট লেনটা.রু (Lenta.Ru) এবং গাজেটা.রু (Gazeta.Ru)-এর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেছিল। কিন্তু প্ল্যাটফর্মটি তা মেনে চলেনি।

রোসকোমনাজো তাদের আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলেছে যে, রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রক ও প্রসিকিউটর জেনারেলের কার্যালয় শুক্রবার ফেসবুককে “মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতা, সেই সঙ্গে রাশিয়ার নাগরিকদের অধিকার ও স্বাধীনতা লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত” বলে মনে করেছে এবং “এই পদক্ষেপকে রাশিয়ার মিডিয়া সুরক্ষার ব্যবস্থা” বলে ঘোষণা করেছে।

XS
SM
MD
LG