অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ইউক্রেন সংকটে পাকিস্তানের নিরপেক্ষ থাকার অঙ্গীকার—যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও সম্পর্ক জোরদার করার দাবি


পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি সিন্ধে এক রাজনৈতিক সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন। (ছবি- পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়)
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি সিন্ধে এক রাজনৈতিক সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন। (ছবি- পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়)

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘর্ষে তার দেশের “নিরপেক্ষ” অবস্থান যুক্তরাষ্ট্র বা পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে ইসলামাবাদের সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি করেছে ভয়েস অফ আমেরিকার এমন অভিযোগকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। রবিবার (৬ মার্চ) গণমাধ্যমটির এক সাক্ষাত্কারে এই অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

দক্ষিণ এশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রধারী মুসলিম দেশটি পশ্চিমা বিশ্বের জোরালো চাপ সত্ত্বেও ইউক্রেনে আগ্রাসনের জন্য মস্কোকে নিন্দা জানানো থেকে বিরত থেকেছে। এর পরিবর্তে সংকট অবসানে সংলাপ ও কূটনীতিক সমাধানের পরামর্শ দিয়েছে।

পাকিস্তানের দাবি, রাশিয়াসহ পৃথিবীর সব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে এবং নিজেদের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য বৈশ্বিক দলভিত্তিক রাজনীতি থেকে তাদের সরে আসতে হবে।

“আমরা কোনো শিবিরের অংশ হতে চাই না। কোনো এক দলে থাকার জন্য এর আগে আমাদের মূল্য দিতে হয়েছে। সে জন্য আমরা খুব সাবধানে পা ফেলছি। আমরা আমাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে আপস করতে চাই না, এবং সেই কারণেই আমরা নিজেদের বিরত রেখেছি”, কুরেশি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেছেন।

দক্ষিণ সিন্ধ প্রদেশ থেকে ফোনে কুরেশি বলেন, “একমাত্র বুদ্ধিদীপ্ত পথ হলো একটি কূটনৈতিক সমাধান।” তিনি ক্ষমতাসীন পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফ পার্টির একটি রাজনৈতিক সমাবেশে যোগ দিতে দক্ষিণ সিন্ধে যান।

নেটো দেশগুলোর বাইরে ওয়াশিংটনের অন্যতম মিত্র পাকিস্তান। দেশটি গত সপ্তাহে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার আগ্রাসন এবং আক্রমণের নিন্দা জানিয়ে সাধারণ পরিষদের একটি ভোটে এবং নিরাপত্তা পরিষদের একটি “নিন্দা” প্রস্তাবে ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল। ভারত, শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশসহ অন্য ৩৪টি দেশও ভোটদানে বিরত ছিল।

সাধারণ পরিষদের ভোটের প্রাক্কালে পাকিস্তানে নিয়োজিত পশ্চিমা কূটনৈতিক মিশনগুলো সম্মিলিতভাবে ইসলামাবাদকে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের নিন্দা জানাতে এবং অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করার আহ্বানে বিশ্বের অন্য দেশের সঙ্গে শামিল হতে আহ্বান জানায়।

কুরেশি বলেন পাকিস্তান “রাশিয়া শিবিরে” যোগ দিয়েছে এমন দাবি “মিথ্যা” এবং ইউক্রেন সংকটে ইসলামাবাদের বিবৃত নিরপেক্ষতার “ভুল ব্যাখ্যা”।

“আমি মনে করি, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো। আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করি এবং আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অব্যাহত সমর্থন চাই”, তিনি উল্লেখ করেন।

“আমি [যুক্তরাষ্ট্রের] সেক্রেটারি [অফ স্টেট অ্যান্টনি] ব্লিংকেনের সঙ্গে ফোনে কথা বলার চেষ্টা করেছি এবং আমাকে বলা হয়েছিল যে, তিনি আগামী সাত দিন সফরে থাকবেন। কিন্তু আমি তার কাছে [ইউক্রেনের ব্যাপারে] পাকিস্তানের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করতে পারলে বেশি খুশি হব”, কুরেশি যোগ করেন।

তিনি গত মাসে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সফরের পরিপ্রেক্ষিতে ওয়াশিংটনের সঙ্গে পাকিস্তানের কূটনৈতিক উত্তেজনা বেড়েছে এমন খবরের সত্যতাও অস্বীকার করেছেন। পুতিন যখন তার সামরিক বাহিনীকে ইউক্রেন আক্রমণ করার নির্দেশ দেন তখন ইমরান খান মস্কোতেই ছিলেন। তবে ওয়াশিংটন খানের এই সফর ভালোভাবে গ্রহন করেনি বলে জানা যায়।

কুরেশি ও ল্যাভরভের আলোচনা

কুরেশি বলেছেন, তিনি শনিবার টেলিফোনে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং “ইউক্রেনের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে ইসলামাবাদের উদ্বেগের” বিষয়টির ওপর “গুরুত্বারোপ” করেছেন। তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, ল্যাভরভ তাকে জানিয়েছিলেন যে মস্কো “কোনো ধরনের সমাধানে পৌঁছাতে” কিয়েভের সঙ্গে “আলোচনায় বিমুখ” নয়।

অন্যতম এই পাকিস্তানি কূটনীতিক বলেন যে, রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী “উল্লেখ করেছেন” যে, ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুই দফা আলোচনায় যে “ইতিবাচক ফলাফলটি” পাওয়া গেছে সেটি হলো একটি “মানবিক করিডোর” তৈরির যৌথ সিদ্ধান্ত। এই করিডোর দিয়ে রুশ বাহিনী কর্তৃক বেষ্টিত শহর দুটি থেকে নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। রুশ বাহিনী করিডোরে আক্রমণ করার আগে কুরেশি এবং ল্যাভরভের মধ্যে আলোচনা হয়।

“আমরা তৃতীয় দফা আলোচনার জন্য প্রস্তুত। আমাদের লোকজন সেখানে রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, আমরা অপেক্ষা করছি যে, ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা এসে আলোচনা শুরু করবেন”, ল্যাভরভ তাকে জানিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন কুরেশি।

রাশিয়া ও পাকিস্তান, একসময়ে চরম প্রতিপক্ষ ছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশ দুটি সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট হয়েছে। বিশ্লেষকেরা একে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির হিমশীতল সম্পর্কের ফলাফল বলে বর্ণনা করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মস্কো সফরের বিষয়ে শুক্রবার প্রকাশিত একটি নিবন্ধে খানের বিশেষ সহকারী রওফ হাসান লিখেছেন, “শুধুমাত্র বুদ্ধিহীন কোনো নেতার পক্ষেই এরকম একটি সফর বাতিল করা এবং অতীতের প্রতিকূল সম্পর্কের পুনরাবৃত্তি ঘটানো সম্ভব।”

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা নিজেদের পক্ষ স্পষ্ট করে বলেন, তারা “ওয়াশিংটনের স্বার্থ রক্ষায় সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক পাকিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ” বলে মনে করেন। তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার এবং তারা দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিকে “একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক” দেশ বলে মনে করেন।

কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন যে, আফগানিস্তানে তালিবানরা ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে ঝুঁকিপূর্ণ আফগানদের সরিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টায় সহায়তা করার ক্ষেত্রে পাকিস্তান একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। ওয়াশিংটন এবং ইসলামাবাদের মধ্যে একটি সংলাপও চলছে যে, কীভাবে যৌথভাবে আফগান ভূমি থেকে উদ্ভূত সন্ত্রাসবাদের হুমকি মোকাবিলা করা যায়।

পাকিস্তানি কর্মকর্তারা বলছেন যে, ইমরান খান এই মাসের শেষের দিকে ইসলামাবাদে অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) অন্তর্ভুক্ত ৫৭ দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের একটি বৈঠক শেষে পশ্চিমা দেশগুলোতে “গুরুত্বপূর্ণ সফরের” প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে এই সফর সম্পর্কে তারা এখনো বিস্তারিত কিছু জানায়নি।

XS
SM
MD
LG