অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

জেলেনস্কি বলেছেন ওডেসায় বোমা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া


ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতে ইউক্রেনের ওডেসা শহরে ট্যাংক বিরোধী বাধা দেখা যাচ্ছে। মার্চ ৫, ২০২২। (ছবি- রয়টার্স)
ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতে ইউক্রেনের ওডেসা শহরে ট্যাংক বিরোধী বাধা দেখা যাচ্ছে। মার্চ ৫, ২০২২। (ছবি- রয়টার্স)

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রবিবার (৬ মার্চ) বলেছেন, রাশিয়া ওডেসায় বোমা হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে। জেলেনস্কি একটি টেলিভিশন বিবৃতিতে বলেন, যদি এরকম কিছু ঘটে তবে সেটি “একটি যুদ্ধাপরাধ...একটি ঐতিহাসিক অপরাধ” হবে।

জেলেনস্কি বিবৃতির একাংশে রুশ ভাষায় রাশিয়ার জনগণকে জীবন এবং দাসত্বের মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “এখনই সময় অপূরণীয় ক্ষতি এড়াতে মন্দকে পরাজিত করার”।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শনিবার বলেছেন যে, দেশটি তার বর্তমান আচরণ অব্যাহত রাখলে ইউক্রেনের রাষ্ট্রত্ব ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।

এরোফ্লটের কর্মীদের সঙ্গে একটি বৈঠকের সময় পুতিন আরও বলেন, ইউক্রেনের আকাশে যেকোনো “নো-ফ্লাই জোন” “কেবল ইওরোপ নয়, পুরো বিশ্বের জন্য বিশাল এবং বিপর্যয়কর পরিণতি বয়ে আনবে।”

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি নো-ফ্লাই জোন আরোপ না করার জন্য নেটোর সমালোচনা করেছেন। পশ্চিমা জোট বলেছে “নো ফ্লাই জোন” আরোপের মাধ্যমে রাশিয়ার সঙ্গে তাদের বিরোধ বাড়তে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শনিবার রাতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলেন। তারা যুদ্ধে রাশিয়ার খরচ বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদেশ এবং অংশীদার ও ব্যক্তিগত শিল্পকারখানাগুলোর কার্যবিধি সম্পর্কে আলোচনা করেন।

বাইডেন বলেন, তার প্রশাসন ইউক্রেনে নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক ও মানবিক সহায়তা বাড়াচ্ছে এবং আরও তহবিলের জন্য কংগ্রেসের সঙ্গে একযোগে কাজ করছে।

সেনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা চাক শুমারের মতে, জেলেনস্কি নিজেই শনিবার ৩০০ জনেরও বেশি লোকের সঙ্গে এক ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে যোগ দেন। এদের মধ্যে ছিলেন সেনেটর, কিছু হাউস সদস্য এবং সহকারী। রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইউক্রেনকে সাহায্য করতে দেশটিতে আরও বিমান পাঠানোর জন্য “মরিয়া আবেদন” পেশ করেন তিনি।

শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী পোল্যান্ডের রিজেসজোতে পোলিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেবিগনিউ রাউয়ের সঙ্গে আলোচনায় যোগ দেন।

ব্লিংকেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমত্রো কুলেবার সঙ্গে দেখা করতে সংক্ষিপ্ত সফরে ইউক্রেনে যান। এ সময় কুলেবা রাশিয়াকে পরাজিত করতে আরও সামরিক সহায়তা চান।

পোলিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর, ব্লিংকেন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র “নেটো অঞ্চলের প্রতিটি ইঞ্চি রক্ষা করবে” এবং বাইডেন প্রশাসন ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের জন্য অতিরিক্ত ২ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার মানবিক সহায়তা বরাদ্দ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে ঘোষণা দেন।

ব্লিংকেন দেশ ছেড়ে পালানো হাজার হাজার ইউক্রেনীয়দের সহায়তা করার জন্য পোল্যান্ডের প্রশংসা করে বলেন, “পোল্যান্ডের জনগণ জানে স্বাধীনতা রক্ষা করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।”

রাউ বলেন, “পোল্যান্ড কখনই বিনা প্ররোচনায়, বেআইনি আগ্রাসনের মাধ্যমে আঞ্চলিক পরিবর্তন সৃষ্টিকে স্বীকৃতি দেবে না।”

যুদ্ধস্থল

একজন আঞ্চলিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রুশ বাহিনী রাজধানী কিয়েভের উত্তরে চেরনিহিভ শহরে বৃহদাকার বোমা ফেলছে।

“সাধারণত, এই অস্ত্রটি সামরিক-শিল্প ভবন এবং সুরক্ষিত কাঠামোর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়,” আঞ্চলিক প্রধান ব্যাচেস্লাভ চস এপিকে বলেন। “চেরনিহিভের মতো আবাসিক এলাকায় নয়।”

তিনি একটি অবিস্ফোরিত বোমার ছবি পোস্ট করেছেন, যেটাকে তিনি রুশ নকশার ৫০০ কিলোগ্রাম ওজনের বোমা বলে বর্ণনা দিয়েছেন।

ইউক্রেন জানিয়েছে যে, শনিবার সকাল ৭টা থেকে পূর্বনির্ধারিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গ করে মারিউপোল থেকে বের হওয়ার অতিক্রমণ পথগুলোসহ শহরেও রুশ বাহিনী গোলাবর্ষণ করছে। দক্ষিণের এই উপকূলীয় শহরটি কয়েক দিন ধরেই নিরন্তর বিমান হামলার শিকার হচ্ছে।

৪ লাখ ৫০ হাজার জনসংখ্যা অধ্যুষিত শহরটির মেয়র, ভাদিম বোইশেঙ্কো তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে বলেন, “আমাদের একেবারে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে।”

দক্ষিণাঞ্চলের ২১ হাজার বাসিন্দার শহর ভলনোভাখাতেও সাময়িক যুদ্ধবিরতি চলাকালে রাশিয়ার “ভারী কামানের” গোলাবর্ষণ করা হয় বলে ইউক্রেনের উপপ্রধানমন্ত্রী ইরিনা ভেরেশচুক শনিবার এক ভিডিও সম্প্রচারে বলেন।

তবে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংবাদ সংস্থা আরআইএ জানিয়েছে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক বেসামরিক মানুষজনকে মারিউপোল ছেড়ে পালাতে বাধা দেওয়ার জন্য ইউক্রেনের “জাতীয়তাবাদীদের” বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। তাদের দাবির পক্ষে তারা কোনো জোরালো প্রমাণ উপস্থাপন করেনি।

ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রক শনিবার টুইট করেছে, মারিউপোল ও ভলনোভাখারে ভারী গোলাবর্ষণ সত্ত্বেও, গত ২৪ ঘন্টায় ইউক্রেনে আগের দিনের তুলনায় কম বিমান এবং কামান হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী।

মন্ত্রক জানিয়েছে, ইউক্রেন উত্তরাঞ্চলীয় শহর খারকিভ ও চেরনিহিভের পাশাপাশি দক্ষিণ-পূর্বে মারিউপোল নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। মন্ত্রক উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর সুমিতে লড়াইয়ের তথ্য প্রকাশ করে বলেছে, “রুশ বাহিনী খুব সম্ভবত চারটি শহরই ঘিরে রেখেছে” এবং তারা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ওডেসার দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

শনিবার রাতে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভাষণে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি রুশ বাহিনীর দখলে থাকা এলাকায় ইউক্রেনীয়দের আক্রমণকারীদের মুখোমুখি হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আমাদের অবশ্যই বাইরে বের হতে হবে এবং আমাদের শহরগুলো থেকে এই অপশক্তিকে তাড়াতে হবে।”

প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নেওয়া ইউক্রেনীয়দের সংখ্যা সপ্তাহান্তে ১ দশমিক ৫ মিলিয়নে পৌঁছতে পারে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার প্রধান। তিনি বলেন, পালিয়ে আসা শরণার্থীর সংখ্যা ইতিমধ্যে ১ দশমিক ৩ মিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে।

ইউক্রেন বিষয়ক জাতিসংঘের সংকট সমন্বয়কারী আমিন আওয়াদ, যিনি ইউক্রেনে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন, শনিবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, “সংঘাতের দ্বারা প্রভাবিত অঞ্চলগুলোতে সীমান্তে এবং বাইরে থেকে অপারেশন বাড়াতে জরুরিভাবে কার্যপদ্ধতি বৃদ্ধির চেষ্টা চলছে।”

[এই প্রতিবেদনের জন্য কিছু তথ্য দ্য অ্যাসোসিয়েট প্রেস, এজেন্সি ফ্রান্স-প্রেস এবং রয়টার্স থেকে নেওয়া হয়েছে]

XS
SM
MD
LG