অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলায় র‍্যাবের জিজ্ঞাসাবাদের সময় “হার্ট অ্যাটাকে” অভিযুক্তের মৃত্যু


মৃতদেহ। (ছবি- অ্যাডোবি স্টক)
মৃতদেহ। (ছবি- অ্যাডোবি স্টক)

বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলায় র‍্যাবের (র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন) জিজ্ঞাসাবাদের সময়হার্ট অ্যাটাকে” কথিত হত্যা মামলায় অভিযুক্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে মঙ্গলবার (৮ মার্চ) রাত ১টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

ওইদিন রাত ১০টার দিকে চট্টগ্রাম মহানগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন শেভরন ডায়াগোনস্টিক সেন্টারের সামনে থেকে মো. নজরুল ইসলাম বাবুলকে আটক করে র‌্যাব।

মৃত নজরুল ইসলাম একটি হত্যা মামলার পরোয়ানাভুক্ত অভিযুক্ত ছিলেন।

র‌্যাব জানায়, জিজ্ঞাসাবাদকালে হার্ট অ্যাটাকে নজরুল ইসলামের মৃত্যু হয়েছে।

জানা গেছে, মৃত নজরুল চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া পৌরসভা এলাকার বাসিন্দা। তিনি ঠিকাদারী ব্যবসা করতেন। তার কাছে বিভিন্ন ব্যক্তি টাকা পেতেন। তার বিরুদ্ধে একটি হত্যাসহ দুটি মামলা ছিল। এক সময় তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও পরে রাজনীতিতে নিস্ক্রিয় ছিলেন। নজরুল চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের সাবেক এক মন্ত্রীর সম্পর্কে ভগ্নিপতি বলে সূত্র জানায়।

তার মৃত্যুর বিষয়ে বারবার ফোন করেও পরিবারের কাছ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। নজরুলের স্ত্রী বলেন, “আমার স্বামীর লাশ বাসায় আনা হচ্ছে। দাফনের পর কথা বলব।”

নজরুলের ছেলে সেতুল বলেন, “আব্বার মৃত্যু নিয়ে আমরা কোনো কথা বলতে চাই না। আপনারা আমাদের কিছু জিজ্ঞাসা করবেন না।”

এদিকে র‌্যাব ৭–এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ সাংবাদিকদের বলেন, “মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে শেভরনের পাশ থেকে নজরুল ইসলাম নামে একজনকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় অসুস্থতা অনুভব করলে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।”

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, নজরুল হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। এটাকে র‌্যাব হেফাজতে মৃত্যু বলা ঠিক হবে না।

উল্লেখ্য, গত বছরের ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‍্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ও পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়। এই কর্মকর্তাদের মধ্যে র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক এবং বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান আইজিপি বেনজীর আহমেদও রয়েছেন। এরই মধ্যে তার আমেরিকান ভিসাও বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া র‍্যাবের বর্তমান মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. আনোয়ার লতিফ খানের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথক এক ঘোষণায় বেনজীর আহমেদ এবং র‍্যাব ৭–এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে র‍্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটেলিয়ান (র‍্যাব), মাদক দ্রব্যের বিরুদ্ধে সরকারের লড়াইয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত। এতে বলা হয়েছে যে, তারা আইনের শাসন, মানবাধিকারের মর্যাদা ও মৌলিক স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে ক্ষুণ্ন করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। র‍্যাব হচ্ছে ২০০৪ সালে গঠিত একটি সম্মিলিত টাস্ক ফোর্স। তাদের কাজের মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপরাধীদের কর্মকান্ড সম্পর্কে গোপন তথ্য সংগ্রহ এবং সরকারের নির্দেশে তদন্ত পরিচালনা করা।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বা এনজিওদের অভিযোগ হচ্ছে যে র‍্যাব ও বাংলাদেশের অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ২০০৯ সাল থেকে ৬০০ ব্যক্তির গুম হয়ে যাওয়া এবং ২০১৮ সাল থেকে বিচার বহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের জন্য দায়ী। কোনো কোনো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এই সব ঘটনার শিকার হচ্ছে বিরোধী দলের সদস্য, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা।

XS
SM
MD
LG