মস্কো এবং কিয়েভ উভয়ের সাথেই আঙ্কারার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায়, রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পর থেকেই এই দুই দেশের মধ্যে মধ্যস্থতা করতে চাইছিল তুরস্ক। অবশেষে বৃহস্পতিবার তুরস্কের একটি অবকাশ যাপন কেন্দ্রে ইউক্রেনের প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের উদ্দেশ্যে তুরস্ক সফরে যাচ্ছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ।
রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পর, এই প্রথম বৈঠকে বসছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ এবং ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দ্যমিত্রো কুলেবা। তুরস্কের রিসর্ট শহর আন্টালিয়ায় ওই সম্মেলনের আয়োজন করছেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু।
তুর্কি প্রেসিডেন্টের সিনিয়র উপদেষ্টা ইলনুর সেভিক বলেছেন, বৈঠকটি যে হচ্ছে সেটিই বৈঠকটির সাফল্য। ।
তিনি বলেন, “রাশিয়া এবং ইউক্রেনের নেতারা আন্টালিয়ায় আসতে যে সম্মত হয়েছেন, তা নিঃসন্দেহে তুরস্কের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। উভয় দেশ তুরস্ককে একটি সৎ মধ্যস্থতাকারী হিসাবে চিনতে পেরেছে বলে আমরা মনে করি। তাই, আমরা বৈঠকটি সম্পর্কে খুব খুশি। আমরা জানি না, শেষ পর্যন্ত এটি আমাদের কোথায় নিয়ে যাবে, তবে এটা যে ঘটতে যাচ্ছে, সেটাই খুব, খুব গুরুত্বপূর্ণ”।
রাশিয়া ও ইউক্রেন এর আগেও আলোচনায় বসেছে, কিন্তু আন্টালিয়ার বৈঠকটি হবে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের কোনও রুশ-ইউক্রেনিয়ান নেতার বৈঠক।
যদিও আঙ্কারা ইউক্রেনে তুরস্কের তৈরি ড্রোন এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জামাদি সরবরাহ করেছে, পাশাপাশি রাশিয়ার উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞারও বিরোধিতা করেছে দেশটি।
ইস্তাম্বুলের কাদির হাস ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক মুস্তাফা আয়দিন বলেন, “আসলে মধ্যস্থতা করার জন্য তুরস্ক একটি ভালো জায়গা। তুরস্ক তার বিভিন্ন এলাকা এবং প্রতিবেশী অঞ্চলে রাশিয়ার সাথে বেশ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। অপরদিকে, ইউক্রেন তার স্বাধীনতার পর থেকেই, তুরস্কের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং মিত্রদের মধ্যে একটি”।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেজেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান, ইউক্রেনীয় এবং রুশ উভয় প্রেসিডেন্টের সাথেই যার সুসম্পর্ক রয়েছে, তিনি এই বিরোধে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করছেন।
কিয়েভ এ ধরনের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানালেও, মস্কো প্রথমে এ ধরনের পদক্ষেপ প্রত্যাখ্যান করেছিল। কিন্তু আঙ্কারার আপাত এই কূটনৈতিক অগ্রগতি, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেটের যুদ্ধ শেষ করার কূটনৈতিক প্রচেষ্টার সাথে মিলে যায়।
এর আগে, ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ দেশ দুটির মধ্যে পুনর্মিলন প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বুধবার আঙ্কারা সফর করেন। বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেছেন, তুরস্ক এবং ইসরায়েলের মধ্যে অনেক মতপার্থক্য থাকলেও, ইউক্রেনীয় সংঘাতের বিষয়ে মধ্যস্থতার প্রচেষ্টাগুলি এই ইঙ্গিত দেয় যে, কিছু কিছু বিষয়ে তাদেরও অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে।