কিয়েভসহ ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে তিন সপ্তাহব্যাপী রুশ বাহিনীর ব্যাপক গোলাবর্ষণের মধ্যেই ইউক্রেন ও রাশিয়ার প্রতিনিধিদের মঙ্গলবারও (১৫ মার্চ) আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে।
মঙ্গলবার ভোরে ইউক্রেনের রাজধানীতে বেশ কয়েকটি বিমান হামলা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হামলা কিয়েভের একটি আবাসিক ভবনে আঘাত করেছে। এতে অন্তত দুজন নিহত হয়েছেন।
সোমবারের আলোচনাটি প্রতিবেশি দেশ বেলারুশে সামনাসামনি না হয়ে একটি ভিডিওর মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়। তবে আলোচনায় অগ্রগতির কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আলোচনাকে সমর্থন করে, তবে আমরা এমন কোনো লক্ষণ দেখতে চাই যে, রাশিয়া সহিংসতার প্রত্যাহার করে আলোচনায় যুক্ত হতে ইচ্ছুক।
মঙ্গলবার ইউক্রেনের জন্য জরুরি সামরিক এবং মানবিক সহায়তার জন্য ১৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের একটি সহায়তা প্যাকেজে স্বাক্ষর করার কথা রয়েছে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের। বুধবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির কংগ্রেসের উদ্দেশে দেওয়া একটি ভাষণে ইউক্রেনের ওপর নো-ফ্লাই জোনসহ আন্তর্জাতিক সাহায্যের জন্য আবেদনের সুত্র ধরে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে নো ফ্লাই-জোনের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
চেক প্রধানমন্ত্রী পেত্র ফিয়ালা বলেছেন যে, তিনি জেলেনস্কি এবং ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শ্যামিহালের সঙ্গে দেখা করার জন্য ইওরোপীয় কাউন্সিলের প্রতিনিধি হিসেবে পোলিশ প্রধানমন্ত্রী মাতেউস মোরাউইকি এবং স্লোভেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী জেনেজ জানসার সঙ্গে মঙ্গলবার কিয়েভ যাচ্ছেন।
আন্তর্জাতিক মহলে বেশির ভাগ দেশই অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে রাশিয়াকে শাস্তি দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। জাপান মঙ্গলবার রুশ সংসদের ১১ সদস্য, বিলিয়নিয়ার ভিক্টর ভেকসেলবার্গ এবং ব্যাংকার ইউরি কোভালচুকের পরিবারের সদস্যসহ ১৭ জন রুশ নাগরিকের সম্পদ জব্দ করার ঘোষণা দিয়েছে।
ইওরোপীয় ইউনিয়ন সোমবার ঘোষণা করেছে যে, এটি রাশিয়ার অর্থনৈতিক খাত এবং “ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে চতুর্থ দফা নিষেধাজ্ঞার অনুমোদন দিয়েছে।”
ইউক্রেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইরিনা ভেরেশচুক বলেছেন যে, সরকার মঙ্গলবার বেসামরিক লোকদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য নয়টি মানবিক করিডোর খুলতে সক্ষম হবে এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মারিউপোলসহ রুশ বাহিনী কর্তৃক অবরুদ্ধ এলাকাগুলোতে সহায়তা সরবরাহ করতে সক্ষম হবে বলে আশা করছে, যেখানে সোমবার রাশিয়ার গোলাবর্ষণের কারণে সহায়তা পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।
মারিউপোলে ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলেছেন যে, আগে কয়েকবার ব্যর্থ হলেও সোমবার অভূতপূর্বভাবে একটি বেসামরিক গাড়ি বহর বেসামরিক লোকদের সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। কর্মকর্তারা বলেছেন যে, করিডোরটি খোলা থাকায় প্রথম দুই ঘন্টায় ১৬০টি গাড়ি বেরিয়ে গেছে।
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলছেন, দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর নগরীটিতে রাশিয়ার হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে মারিউপোলে প্রায় ২ হাজার ৫০০ বেসামরিক লোক মারা গেছে। সংখ্যাটি যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের সঙ্গে কথা বলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে চার সেনেটর সপ্তাহান্তে পোল্যান্ডে গিয়েছিলেন। ডেমোক্রেটিক সেনেটর অ্যামি ক্লোবুচার বলেছেন, কংগ্রেস ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা বাড়ানোর আরও উপায় খুঁজছে।
প্রতিনিধিদলের সদস্যরা ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেছেন যে, এই আক্রমণের ফলে সৃষ্ট মানবিক সংকট নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ইউক্রেনের ওপর নো-ফ্লাই জোন শুরু না করার নেটো দেশগুলোর সিদ্ধান্ত একটি “বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে নেওয়া হয়েছে, যেটা আমার মনে হয় তারা বিচক্ষণতা দেখাতে চেয়েছেন, যদিও আমি ইউক্রেন সরকারের নাটকীয় আবেদনের কারণ বুঝতে পারছি।”
চীনের সঙ্গে আলোচনা
সোমবার অন্য এক ঘটনায়, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সালিভান ও জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ এবং স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তারা রোমে চীনের শীর্ষ কূটনীতিক ইয়াং জিচির সঙ্গে দেখা করেছেন।
হোয়াইট হাউসের মতে, আলোচনায় “ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধের বিষয়টি” অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং “যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে যোগাযোগ বজায় রাখার গুরুত্বের ওপর জোর দেওয়া হয়।”
রবিবার গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধের জন্য মস্কো চীনের কাছে সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তার অনুরোধ করেছে। এর আগে, হোয়াইট হাউস রাশিয়াকে নিষেধাজ্ঞা এড়াতে সহায়তা করলে চীনকে গুরুতর “পরিণাম” ভোগ করতে হবে বলে সতর্ক করেছিল।
পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, চীন বা অন্য কোনো দেশ রাশিয়াকে কোনো ধরনের সহায়তা দিচ্ছে কি না যুক্তরাষ্ট্র তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।