অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ইয়েমেনে ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন—প্রতিবেদনে ভয়াবহ পরিসংখ্যান


ইয়েমের শিল্পী হাইফা সুবের শিল্পকর্ম 'হাড্ডিসার এক বালক'।
ইয়েমের শিল্পী হাইফা সুবের শিল্পকর্ম 'হাড্ডিসার এক বালক'।

কায়রো—জাতিসংঘের এক ডজনেরও বেশি সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা সোমবার (১৪ মার্চ) বলেছে যে, ২০২২ সালের দ্বিতীয়ার্ধে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ইয়েমেনে প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন হতে পারে, যা বর্তমান সংখ্যা থেকে পাঁচগুণ বেশি।

বুধবার জাতিসংঘ আয়োজিত বার্ষিক তহবিল সংগ্রহ সম্মেলনের আগে সমন্বিত খাদ্য নিরাপত্তা পর্যায়ের শেণিবিন্যাসের (ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন বা আইপিসি) একটি প্রতিবেদনে এই ভয়াবহ সতর্ক বার্তাটি এসেছে। আইপিসি হলো ইওরোপীয় ইউনিয়ন, ইউএসএআইডি এবং ইউকেএআইডি–এর অর্থায়নে ইয়েমেনে কর্মরত ১৫টি জাতিসংঘের সংস্থা এবং মানবিক সংস্থাগুলোর একটি বৈশ্বিক জোট৷ এই জোট সংঘাত-পীড়িত অঞ্চলে খাদ্য নিরাপত্তার অপ্রতুলতা খুঁজে বের করে এবং এর তীব্রতা পরিমাপ করে।

প্রতিবেদনটি ২০১৪ সালে গৃহযুদ্ধে নিমজ্জিত সবচেয়ে দরিদ্র আরব দেশটির ভয়াবহ পরিস্থিতির ওপর আলোকপাত করেছে। ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা ইয়েমেনের রাজধানী সানা এবং দেশের উত্তরের বেশির ভাগ অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের কারণে ইয়েমেনের সৌদি সমর্থিত সরকার প্রথমে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে এবং পরে সৌদি আরবে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারকে ক্ষমতায় পুনরুদ্ধার করার প্রয়াসে সৌদি নেতৃত্বাধীন একটি জোট ২০১৫ সালের মার্চ মাসে যুদ্ধ শুরু করে। এই জোটের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ছিল। যুদ্ধটি মূলত একটি অচলাবস্থার সৃষ্টি করেছে এবং বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ মানবিক সংকটের সৃষ্টি করেছে।

“এই হতাশাজনক পরিসংখ্যানগুলো নিশ্চিত করে যে, আমরা ইয়েমেনে বিপর্যয়ের শেষপ্রান্তে রয়েছি এবং এটি এড়াতে আমাদের হাতে প্রায় সময় নেই”, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির প্রধান ডেভিড বিসলি বলেন। তিনি “আসন্ন বিপর্যয় এড়াতে এবং লাখ লাখ মানুষকে বাঁচাতে” অবিলম্বে সহায়তা প্রদানের আবেদন করেছেন।

আইপিসি রিপোর্টে বলা হয়েছে, ৩০ মিলিয়ন জনসংখ্যার মধ্যে ইয়েমেনের ১৯ মিলিয়ন মানুষ জুন থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের ন্যূনতম খাদ্য চাহিদা মেটানোর সামর্থ্য হারাবে, যা বর্তমানে ১৭ দশমিক ৪ মিলিয়ন থেকে বেশি।

এ ছাড়াও, ২ দশমিক ২ মিলিয়ন শিশু, যার মধ্যে ৫ লাখ ৩৮ হাজার ইতিমধ্যেই গুরুতরভাবে অপুষ্টিতে ভুগছে এবং প্রায় ১ দশমিক ৩ মিলিয়ন নারী বছরের শেষ নাগাদ তীব্রভাবে অপুষ্টিতে ভুগতে পারেন, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল বলেছেন, “ইয়েমেনে আরও বেশিসংখ্যক শিশু খাদ্য সংকটে পড়তে যাচ্ছে। এটি তাদের শারীরিক এবং বুদ্ধিভত্তিক প্রতিবন্ধকতার এবং এমনকি মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়াবে”।

প্রতিবেদনে জোর দেওয়া হয়েছে যে, যুদ্ধ ইয়েমেনের খাদ্য সংকটের প্রধানতম কারণ এবং ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে সংকটের অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জাতিসংঘের সংস্থাগুলো বলেছে, ইয়েমেন প্রায় সম্পূর্ণভাবে খাদ্য আমদানির ওপর নির্ভরশীল এবং তার গম আমদানির ৩০ শতাংশ ইউক্রেন থেকে আসে।

জাতিসংঘের ডেপুটি মুখপাত্র ফারহান হক আলাদাভাবে বলেছেন, অর্থায়নের ঘাটতির কারণে ইয়েমেনে সাহায্য কার্যক্রম কমানো বা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে বাধ্য হতে পারে। তিনি বলেন যে, ৮ মিলিয়ন মানুষের জন্য খাদ্য সহায়তা মারাত্মকভাবে হ্রাস করা হয়েছে এবং আগামী সপ্তাহগুলোতে প্রায় ৪ মিলিয়ন মানুষ বিশুদ্ধ পানি এবং স্বাস্থ্যসুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।

হক আসন্ন তহবিল সংগ্রহকে, “একটি প্রদর্শনের সুযোগ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যে বিশ্ব ইয়েমেনকে ভুলে যায়নি, এমনকি অন্য সংকটগুলো যেমন বিশ্বব্যাপী মনোযোগ দাবি করছে” এবং দাতাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে, “উদারভাবে অঙ্গীকার এবং দ্রুত তহবিল বিতরণ করুন”।

XS
SM
MD
LG