ওয়ারশ, পোল্যান্ড—ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ শহরের কেন্দ্রের কাছাকাছি রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর ব্যাপক বোমাবর্ষণের মধ্যেই পোল্যান্ড, চেক প্রজাতন্ত্র ও স্লোভেনিয়ার প্রধানমন্ত্রীরা হামলায় বিপর্যস্ত শহরটিতে সফরে গেছেন। তারা ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন প্রদর্শনে মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করেছেন।
যুদ্ধক্ষেত্রের মধ্যে ভ্রমণের নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে ইওরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে উদ্বেগ থাকা সত্ত্বেও তিন নেতা ঘণ্টাব্যাপী ট্রেন ভ্রমণে কিয়েভে যান।
“এখানেই, এই যুদ্ধ-বিধ্বস্ত কিয়েভে, ইতিহাস লেখা হচ্ছে। এখানেই স্বাধীনতা নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এখানেই আমাদের সকলের ভবিষ্যত অনিশ্চয়তায় ঝুলে আছে”, পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাতেউস মোরাউইকি টুইটারে লিখেছেন।
পোল্যান্ড থেকে কিয়েভ পর্যন্ত মোরাউইকি, পোল্যান্ডের উপ-প্রধানমন্ত্রী জারোস্লো কাকজিনস্কি ও চেক প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী পেত্র ফিয়ালা এবং স্লোভেনিয়ার জেনেজ জানসার দীর্ঘ যাত্রায় এই বার্তা দিয়েছে যে, ইউক্রেনের বেশির ভাগ অংশ এখনো ইউক্রেনের হাতেই রয়েছে।
জেলেনস্কি তার ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন, যেখানে দেখা যাচ্ছে একটি টেবিলের চারপাশে বসে তিনি নেতাদের সঙ্গে যুদ্ধের বিষয়ে তাদের ব্রিফ করছেন। বৈঠকের পরে তিনি বলেন, তিনি নিশ্চিত "এমন বন্ধুদের সঙ্গে মিলে" ইউক্রেন রাশিয়াকে পরাজিত করতে সক্ষম হবে।
"এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আমরা এই দেশ তিনটির নেতাদের পুরোপুরি বিশ্বাস করি এবং তাই, যখন আমরা নিরাপত্তার নিশ্চয়তার কথা বলি, ইওরোপীয় ইউনিয়নে আমাদের ভবিষ্যতের কথা বলি, বা নিষেধাজ্ঞা নীতির কথা বলি, আমরা ১০০ ভাগ নিশ্চিত যে, আমদের সেই সব আলোচনা আমাদের দেশের জন্য, আমাদের নিরাপত্তার জন্য এবং আমাদের ভবিষ্যতের জন্য সেই ইতিবাচক লক্ষ্যে পৌঁছে দেবে”, জেলেনস্কি বলেন।
ফিয়ালা বলেন, সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল ইউক্রেনকে জানানো যে, দেশটি একা নয়।
"আমরা জানি আপনারা জীবনের জন্য লড়াই করছেন...তবে আমরা এটাও জানি যে, আপনারা আমাদের জীবন, আমাদের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছেন”, ফিয়ালা বলেন। “সম্ভবত আমাদের সফরের মূল লক্ষ্য, আমাদের মিশনের মূল বার্তার উদ্দেশ্য এটা জানানো যে, আপনারা একা নন। আমাদের দেশ আপনাদের পাশে আছে। ইওরোপ আপনাদের পাশে আছে।”
মধ্য ইওরোপের নেতারা বলেছেন যে, তারা একটি ইইউ মিশনে এসেছেন। তবে ২৭ দেশীয় জোটের কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলেছেন এই তিন নেতা তাদের নিজেদের ইচ্ছাতেই সেখানে সফরে গেছেন।
তিনটি দেশই এক সময় কমিউনিস্ট ব্লকের অংশ ছিল এবং এখন ইইউ ও নেটো উভয়ের সদস্য।
জানসা এই সফরটিকে একটি বার্তা হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, ইউক্রেন একটি ইওরোপীয় দেশ যেটি একদিন ইইউতে সদস্য হওয়ার যোগ্য। উল্লেখ্য দুই সপ্তাহ আগে, জেলেনস্কি এই বিষয়ে ইওরোপীয় পার্লামেন্টে একটি আবেগপূর্ণ আবেদন করেছিলেন।
মোরাউইকি ফেসবুকে বলেছেন যে, এই সফরে ইইউ সম্মত হয়েছে এবং জাতিসংঘকেও জানানো হয়েছে। কিন্তু ব্রাসেলসে, কর্মকর্তারা বলেছিলেন যে, তাদের এই সফর সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। তবে এটিকে একটি যুদ্ধ অঞ্চলে সফরে তিন দেশের নেতার স্বাধীনভাবে নেওয়া স্বিদ্ধান্ত হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে।
নেটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গকে এই সফর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি এটিকে সরাসরি সমর্থন করেননি। তবে বলেন, “আমি মনে করি নেটো দেশগুলো এবং ইওরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা জরুরি”।
বেশ কয়েক দিন আগেই এই সফরের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে গোপন রাখা হয়েছিল, মোরাওয়েকির চিফ অফ স্টাফ মিশাল ডুরকজিক বলেছেন।
ভোর হওয়ার কিছুক্ষণ আগে এবং নেতাদের কিয়েভে আসার কয়েক ঘন্টা আগে, শহর জুড়ে বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটে। ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ এটিকে রাশিয়ান আর্টিলারি আঘাত বলে বর্ণনা করে। গোলাগুলিতে একটি ১৫ তলা আবাসিক ভবনে আগুন লাগে এবং যেখানে পরে ব্যপক উদ্ধারকার্য পরিচালনা করতে হয়। এতে অন্তত একজন নিহত হয়েছেন এবং বাকিরা ভেতরে আটকা পড়েছেন।
প্রস্থানের আগে, ফেসবুকে মোরাউইকি স্মরণ করেন, কীভাবে লেখ কাকজিনস্কি ২০০৮ সালে জর্জিয়ার রাজধানীতে গিয়েছিলেন, যখন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অধীনে থাকা দেশটি রাশিয়ার আক্রমণের শিকার হয়েছিল।
তিনি প্রেসিডেন্ট কাকজিনস্কির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, যিনি তিবিলিসিতে বলেছিলেন: “আজ জর্জিয়া, আগামীকাল ইউক্রেন, পরশু বাল্টিক রাজ্য এবং তারপরে সম্ভবত আমার দেশের পালা।”