কয়েক সপ্তাহ ধরে চলে আসা জ্বালানী তেলের ঘাটতি এবং তার সঙ্গে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ফলে নাইজেরিয়া জুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অসংখ্য ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কিছু ব্যবসা সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে গেছে, অন্যরা জ্বালানীর ঘাটতি মোকাবেলায় কর্মঘন্টা কমিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছে।
জানুয়ারিতে, টুচুকু ওহাতু তার লন্ড্রি ব্যবসার পাশাপাশি কিছু অতিরিক্ত নগদ উপার্জনের জন্য একটি কাপড় সেলাইয়ের ব্যবসা শুরু করে।
কিন্তু নতুন ব্যবসা শুরু করার মাত্র তিন সপ্তাহ পরে, বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে লক্ষ লক্ষ নাইজেরিয়ানের মতো তার ব্যবসাটিও প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কারণ, বিদ্যুৎ ছাড়া, সেলাই মেশিন চালানোর জন্য কোন বিকল্প ব্যবস্থা তার হাতে নেই।
সপ্তাহ দুয়েক আগে অপারেটিং সিস্টেমে ত্রুটির কারণে জাতীয় পাওয়ার গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হলে এই সমস্যার সূত্রপাত হয়।
ওহাতু বলেন, প্রতিদিন মাত্র এক ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকে। এই অবস্থা তার উত্পাদনশীলতা এবং আয়ের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
কর্তৃপক্ষ জ্বালানী তেলে এই সংকট ঘটেছে কারণ জানুয়ারি মাসে ইউরোপ থেকে আমদানি করা ১৭ কোটি লিটার তেলে ভেজাল থাকায় তা ফেরত পাঠানো হয়। ফেব্রুয়ারি মাসে সরকার ঘোষণা করে যে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে তারা জাতীয় মওজুদ থেকে ১০০ কোটি লিটার তেল অবমুক্ত করে।
বিশ্বব্যাপী জ্বালানী তেল ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ফলে, এই পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে এবং সামগ্রিক অর্থনীতিতে তা প্রভাব ফেলছে। নাইজেরিয়ার বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতির হার ১৫.৭ শতাংশ বেড়েছে বলে চলতি সপ্তাহে জানিয়েছে দেশটির পরিসংখ্যান ব্যুরো।
নাইজেরিয়া আফ্রিকার সবচেয়ে বড় তেল উৎপাদনকারী দেশ হলেও বর্তমানে জ্বালানী চাহিদা মেটাতে তাদের সংগ্রাম করতে হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের হিসেব অনুযায়ী মাত্র ৪৭ শতাংশ নাইজেরিয়ানদের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। ২০২০ সালে নাইজেরিয়ান কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নত করতে একটি জার্মান কোম্পানির সাথে বিদ্যুৎ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, জ্বালানির এই ঘাটতি দেশটির নাগরিকদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
এই সপ্তাহে, নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদু বুহারি, জ্বালানী এবং বিদ্যুতের এই সমস্যার শীঘ্রই একটা সমাধান হবে বলে নাগরিকদের আশ্বস্ত করেছেন।
কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত লাখ লাখ মানুষ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হতেই থাকবে।