পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা ভোটের আগেই ক্ষমতাসীন দলের অন্তত এক ডজন আইনপ্রণেতা দল পরিবর্তন করায় তার ক্ষমতায় টিকে থাকাই অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দল পার্লামেন্টে স্বল্পসংখ্যক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ২০১৮ সাল থেকে জোট সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে, মিত্র দলগুলোও প্রকাশ্যে নীতিগত বিরোধের জেরে আলাদা হয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে। এতে করে প্রাক্তন এই ক্রিকেট তারকা জটিলতর রাজনৈতিক সমস্যার মুখে পড়েছেন।
এই মাসের শুরুর দিকে, বিরোধী দলগুলো যৌথভাবে প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করেছিল এবং তার বিরুদ্ধে অপশাসন এবং অর্থনীতি ও বৈদেশিক নীতির অব্যবস্থাপনার অভিযোগ এনেছিল। এই মাসের শেষের দিকে বা এপ্রিলের শুরুতে ভোট হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ইমরান খান ও তার মন্ত্রীরা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন এবং বিরোধীদের বিরুদ্ধে পিটিআই আইন প্রণেতাদেরকে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ তোলেন।
ভিন্নমতাবলম্বী ও রাজনৈতিক বিরোধীরা উভয়েই ঘুষের অভিযোগকে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার চেষ্টা হিসেবে খারিজ করেছেন।
শুক্রবার (১৮ মার্চ) সরকার ঘোষণা করেছে যে, তারা সোমবার প্রথমার্ধে সুপ্রিম কোর্টে দলত্যাগী আইনপ্রণেতাদের আসন ধরে রাখার এবং পক্ষ পরিবর্তন করার পরে ভোট দেওয়ার ক্ষমতা থাকবে কি না সে বিষয়ে একটি রুল চাইতে আবেদন করবে।
পাকিস্তানের দলত্যাগবিষয়ক (ফ্লোর-ক্রসিং) আইনে বলা আছে, সংসদ সদস্যরা তাদের দলের বিরুদ্ধে ভোট দিলে তাদের আসন হারাতে পারেন। ইমরান খানের উপদেষ্টারা বলেছেন যে, তারা চান দলত্যাগী আইনপ্রণেতাদের ভোটের আগেই দেশের শীর্ষ আদালত আইনটি প্রযোজ্য হয় কি না তা ব্যাখ্যা করুক।
এ বিষয়ে ইমরান খানের বিশেষ সহকারী রউফ হাসান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, তিনি কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করবেন না।
ইমরান খান তার সরকারের সমর্থন করে বলেছেন, তার সরকার পূর্ববর্তী সরকারের থেকে পাওয়া পাকিস্তানের অর্থনীতিকে দেউলিয়া অবস্থা থেকে পুনরুদ্ধার করেছে। তিনি সরকারি খরচে পাকিস্তানিদের জন্য স্বাস্থ্য বীমা, দারিদ্র্যপীড়িত পরিবারগুলোর জন্য অন্য নানা সামাজিক কল্যাণ প্রকল্পসহ সফলভাবে দেশের কোভিড প্রাদুর্ভাব মোকাবিলা করার কথাও উল্লেখ করেছেন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় দুই আইন প্রণেতার নেতৃত্বে কয়েক ডজন পিটিআই কর্মী ইসলামাবাদে একটি অফিসের চত্বরে হামলা চালায়। বিরোধী দলগুলো নিরাপত্তার আশঙ্কায় ওই অফিস ভবনে দলত্যাগী আইনপ্রণেতাদের রেখেছেন। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় এবং কয়েকজনকে আটক করে।
ন্যাশনাল অ্যাসেমব্লি বা জাতীয় সংসদের নিম্নকক্ষে অনাস্থা প্রস্তাব ঠেকাতে প্রধানমন্ত্রীর ১৭২ ভোটের প্রয়োজন। তবে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, মিত্র দল ও ভিন্নমতাবলম্বীদের বাদ দিলে অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে না। বিরোধীদের দাবি আরও অনেক পিটিআই এমপি দল পরিবর্তন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
পার্লামেন্টে বিরোধীদের যৌথভাবে কমপক্ষে ১৬৩টি আসন রয়েছে এবং সরকার দখল করতে তাদের আরও ১০টির প্রয়োজন। পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন ২০২৩ সালে হওয়ার কথা।
বিরোধী নেতারা সাম্প্রতিক বিবৃতিতে বারবার দাবি করেছেন যে, ইমরান খান সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার সমর্থন হারিয়েছেন। সরকার ও সামরিক বাহিনী অভিযোগগুলোকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অস্বীকার করেছে।
তবে সমালোচকেরা পাকিস্তানে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সন্দিহান।
রাজনৈতিক ভাষ্যকার ও কলাম লেখক মোশাররফ জাইদি টুইট করেছেন, “বিরোধীদের অবশ্যই সরকারের অযোগ্যতার রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়া উচিত”।
“কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক সংকটকে এক ধরনের গণতান্ত্রিক বিজয় হিসেবে প্রচার করা ঠিক হবে না, বা বেসামরিক আধিপত্যের কোনো প্রবক্তার এই সংকট কীভাবে এবং কোথায় নিষিক্ত হয়েছে তা নিয়ে গর্ব করাও উচিত নয়”, জাইদি বলেন।
পারমাণবিক অস্ত্রধারী দক্ষিণ এশীয় এই দেশটিতে তার ৭৪ বছরের ইতিহাসে চারটি সামরিক অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে। সামরিক বাহিনীর জেনারেলরা নিরাপত্তা এবং পররাষ্ট্র নীতি-সম্পর্কিত বিষয়ে নির্বাচিত সরকারকে পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করে চলেছেন বলে মন্তব্য করছেন পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ ও বিশ্লেষকেরা।