অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

"অ্যাওয়ার্ড আমাকে স্পর্শ করে না, স্পর্শ করে চরিত্রগুলো"


জয়া আহসান
জয়া আহসান

সাক্ষাৎকারঃ জয়া আহসান

জয়া আহসান এখন দুই বাংলার অভিনেত্রী। বাংলাদেশ ও ভারত সবখানেই জয়া আহসানের অভিনয়ের প্রশংসা। শুধু প্রশংসাই নয় প্রতিনিয়ত পেয়ে যাচ্ছেন কাজের স্বীকৃতিও। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য এর আগে দু’বার ‘ফিল্মফেয়ার’ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। তবে এবার কলকাতার চলচ্চিত্র 'বিনিসুতোয়' অভিনয়ের জন্য ফিল্মফেয়ার হাতে নিয়ে করলেন হ্যাট্রিক। অভিনয় ও স্বীকৃতি নিয়ে জয়া কথা বলেছেন ভয়েস অফ আমেরিকার সঙ্গে।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ আপনাকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না। হ্যাট্রিক 'ফিল্মফেয়ার' পেলেন, খুব ব্যস্ত সময় কাটছে নাকি?

জয়া আহসানঃ না না। অ্যাওয়ার্ড আমার মাথাতেই নেই। আমি 'কালান্তর' নামে একটি চলচ্চিত্রে কাজ করছি। বঙ্গভঙ্গ নিয়ে এই চলচ্চিত্রের শুটিং হলো ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে। শুটিং করে এলাম ঝাড়খণ্ড ও বিহারে। খুব কঠিন পরিশ্রমের কাজ বলা যেতে পারে, তারমধ্যে প্রচণ্ড গরম। ১৭ মার্চ সকালে কলকাতায় এসে আবার কালান্তরের শুটিং করতে হলো। এই গরমে কাজ করে যেতে হয়েছে। ক্লান্ত ছিলাম। হয়তো এসব কারণেই ফোনে এভেইলেবল ছিলাম না।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে শুটিং করছেন- বিভিন্ন ভাষাভাষীর মানুষের সঙ্গে মিশছেন কাজ করছেন- কোন সমস্যা হয় না এতে?

জয়া আহসানঃ মোটেও না। আসলে কি পৃথিবীর সব প্রান্তের সাধারণ মানুষেরা ভীষণ সরল। মানুষ জটিল হয় না, হয়তো পরিস্থির কারণে পরিবর্তন হয়। আমি ঝাড়খণ্ড গিয়ে কাজ করলাম, সেখানের মানুষের সঙ্গে মিশলাম। হয়তো কমিউনিকেশনের জন্য একটু সমস্যা হচ্ছে তাছাড়া একদমই সহজ সবাই, কী মিশুক, ভালো তারা। বিহারে শুটিং করেছি। সেখানের মানুষেরাও খুবই আন্তরিক ও ভীষণ সরল। পৃথিবীজুড়েই সাধারণ মানুষেরা আসলে জটিল হয় না।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ 'কালান্তরে' অভিনয় করছেন- এই চলচ্চিত্র নিয়ে একটু বলুন...

জয়া আহসান
জয়া আহসান

জয়া আহসানঃ 'কালান্তরে' অগ্নিযুগের গল্প। বঙ্গভঙ্গের বিপ্লবী যুগ অরবিন্দ ঘোষ বা বাঘা যতীনের মতো স্বাধীনতা সংগ্রামীর গল্প। সঙ্গে আরও আসবেন এমন বহু বিপ্লবী, যাদের নাম অনেকে জানেন না। ব্রিটিশরা ১৯০৫ সালে যখন বাংলা ভাগ করার পরিকল্পনা করছে, তখন বিপ্লবী সংগঠন যুগান্তর এর বিরোধিতা করে। বাংলায় সশস্ত্র বিপ্লব শুরু হয় অরবিন্দ ঘোষের নেতৃত্বে। তখন তো মোবাইল, ইন্টারনেট ছিল না। স্পাইং অনেক বড় একটি কাজ, সেটা উঠে এসেছে গল্পে।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ এই প্রশ্নটিই সবার আগে করার কথা ছিল, পরে করছি- হ্যাট্রিক ফিল্মফেয়ার পেলেন, কেমন লাগছে?

জয়া আহসানঃ আসলে অ্যাওয়ার্ড আমাকে স্পর্শ করে না। আমাকে ভীষণভাবে স্পর্শ করে চরিত্রগুলো। আমার মনে হয়, অ্যাওয়ার্ড লড়াই করার মানসিকতাকে দুর্বল করে দেয়। অ্যাওয়ার্ড আমি মাথাতেই নিই না। মাথায় নিলেই শেষ। আমি আরো চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে অভিনয় করতে চাই। আরো পরিশ্রম করতে চাই। আমার কাছে অভিনয়টাই অ্যাওয়ার্ড, আমার কাছে মানুষের কাছে যাওয়াটাই অ্যাওয়ার্ড। যত ভালো চরিত্রে অভিনয় করতে পারব তত মানুষের কাছে যেতে পারব।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ তারপরও কি পুরস্কারপ্রাপ্তি আনন্দের নয়?

জয়া আহসানঃ কেন আনন্দের হবে না। কলকাতায় আমি জি বাংলা অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড পেলাম। অবশ্যই আমার ভালো লেগেছে। আনন্দিত হয়েছি। ভালো না লাগার কোনো কারণই নেই।, আমি বলতে চেয়েছি পুরস্কার আমি মাথায় নিতে চাই না। পুরস্কার পেয়েই নিজেকে অনেক কিছু ভেবে বসতে চাইনি।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ মনে কি এমন কোনো চরিত্রকে পুষে রেখেছেন যে চরিত্রে অভিনয় করতে পারলে নিজেকে সম্পূর্ণ মনে হবে?

জয়া আহসানঃ না, ঠিক এক্সপেক্টেড কোনো চরিত্র নয়। যে কোনো চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে। যেখানে আমাকে প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে, ঘাম ঝড়াতে হবে। মানে আমি নিজেকে ক্রমেই ভেঙেচুরে একটি চরিত্রের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করতে পারব, এমনসব কাজই আমি করতে চাই।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ ভারতের একটি বড় জনগোষ্ঠীর নিকট চলচ্চিত্রের মাধ্যমে পৌঁছে গেছেন, এটা কি প্রাপ্তি নয়?

জয়া আহসানঃ হ্যাঁ এটা অনেক বড় প্রাপ্তি। এটা আনন্দের। এটা ভাবলে অবশ্যই আমি আমার ভালো লাগে। অভিনয় মানুষের কাছেকাছি পৌঁছানোর বড় একটি মাধ্যম। কাজ করে যাচ্ছি, আরো ভালো কাজ করে যেতে চাই।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ আপনি বলিউডের চলচ্চিত্রে অভিনয় করবেন না, এমন একটি কথা শোনা যায়...

জয়া আহসানঃ না মোটেও সত্য নয়। বিশেষ কোনো চলচ্চিত্রের প্রতি রাগ-বিরাগ নেই। কেন অভিনয় করব না? যদি আমার করার মতো চরিত্র হয়, তাহলে অবশ্যই করব। এমন কোনো কথা আমি কোথাও বলিনি। জানি না, কেন এমন কথা ছড়ালো। আমি চরিত্র নিয়ে কাজ করতে চাই।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ বাংলাদেশের চলচ্চিত্র এগোচ্ছে না পিছিয়ে পড়ছে বলে মনে করছেন আপনি?

জয়া আহসানঃ ডেফিনেটলি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অনেক এগিয়ে গেছে। দিন দিন চলচ্চিত্রের উন্নতি ঘটছে। বাংলাদেশে এখন অনেক তরুণ নির্মাতা। তারা চলচ্চিত্র নির্মাণে বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছেন। হ্যাঁ মূলধারার চলচ্চিত্র পিছিয়ে পড়ছে কিন্তু ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্মের বাজার অনেক প্রসারিত হয়েছে। কলকাতাতেও একই অবস্থা। এখানেও ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্মের বাজার অনেক বিস্তৃত। আমার মতে বাংলাদেশের ফিল্ম অনেক এগিয়ে যাচ্ছে।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ কিন্তু সিনেমা হল তো কমছে...

জয়া আহসানঃ হ্যাঁ সিনেমা হল কমছে। দিন দিন অনেক সিনেমা হলই কমে যাচ্ছে। আমরা যারা বড় পর্দায় অভিনয় করি, এটা আমাদের জন্য অনেক দুঃখের বিষয়। কেননা আমরা নিজেদের বড় পর্দাতেই দেখতে চাই। কিন্তু এটা কমে যাচ্ছে যেভাবে সেটা আসলেই দুঃখজনক। তবে প্রযুক্তির যে প্রভাব সেটা তো মেনে নিতেই হবে। প্রযুক্তি এগিয়ে যাচ্ছে, সব অনলাইনকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে, ওটিটিতে সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে। তারপরেও বড় পর্দার তৃষ্ণা থেকে যায়। আমাদের সকলকে সম্মিলিতভাবে সিনেমা হল বাঁচাতে এগিয়ে আসতে হবে।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ দেশে ফিরবেন কবে?

জয়া আহসানঃ দেশের কয়েকটি চলচ্চিত্রের বিষয়ে কথা হয়েছে। এখানের (কলকাতা) কাজ প্রায় শেষ। এখন ফিরবো, শিগগির।

XS
SM
MD
LG