ওয়াশিংটন—পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ার শহরগুলোতে বসবাসকারী লাখ লাখ বাসিন্দাদের ঘন ঘন বুকে কফ জমা, গলা ব্যথা এবং চোখ খচখচের মতো শারীরিক অসুবিধায় সম্ভবত অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ এই অঞ্চলটি গত বছর বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক বায়ু দূষণের সর্বোচ্চ মাত্রা রেকর্ড করেছে।
“পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো ও অঞ্চলগুলো জনসংখ্যার বিপরীতে সর্বোচ্চ বার্ষিক গড় মাত্রার পিএম ২.৫-এ ভুগছে”। মঙ্গলবার (২২ মার্চ) বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সুইজারল্যান্ডভিত্তিক সংস্থা আইকিউএয়ার থেকে প্রকাশিত এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে।
পিএম ২.৫ হলো ২.৫ মাইক্রন বা তার কম ব্যাসের বায়ুমণ্ডলীয় কণা, যা মানুষের ফুসফুসে প্রবেশ করতে এবং সরাসরি রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করতে পারে।
আইকিউএয়ার উত্তর আমেরিকার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা গ্লোরি ডলফিন হ্যামস বলেছেন, “পিএম ২.৫ আসলে অন্য যেকোনো বায়ুর দূষণকারীর চেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী”।
কোম্পানির গ্লোবাল নেটওয়ার্ক থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে, বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের বাতাসে পিএম ২.৫–এর মাত্রা সবচেয়ে বেশি। দুষিত বাতাসের শহরের তালিকায় সবচেয়ে নিচে রয়েছে ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লি।
বাংলাদেশ ছাড়া চাদ, পাকিস্তান, তাজিকিস্তান ও ভারত বায়ু মানের জন্য সবচেয়ে খারাপ পাঁচটি দেশের মধ্যে রয়েছে।
অন্য শহরের মধ্যে বাংলাদেশের ঢাকা, চাদের এন’জামেনা; তাজিকিস্তানের দুশানবে এবং ওমানের মাস্কাট সবচেয়ে দূষিত।
দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে নিউ ক্যালেডোনিয়ার ফরাসি অঞ্চল, যার প্রধান শহর নুমিয়া, বিশুদ্ধ বাতাসের রাজধানী শহরগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে।
অন্য বিশুদ্ধ বাতাসের অঞ্চলগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ, ক্যারিবিয়ানের পুয়ের্তো রিকো এবং আফ্রিকার উপকূলে আটলান্টিকের কেপ ভার্দে।
২০২১ সালে বায়ু দূষণের মাত্রা আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে। আগের বছর মহামারি ও লকডাউনের কারণে স্থল ও বিমান পরিবহন কম হওয়ায় দূষণ হ্রাস পেয়েছিল।
ডলফিন হ্যামস বলেছেন, গত বছর বায়ু দূষণ বেড়ে যাওয়ার আরেকটি কারণ ছিল দাবানল বৃদ্ধি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত সেপ্টেম্বরে প্রস্তাবিত বার্ষিক পিএম ২.৫–এর মাত্রা অর্ধেকে, অর্থাৎ প্রতি ঘনমিটার প্রতি ১০ মাইক্রোগ্রাম থেকে ৫ মাইক্রোগ্রামে নামাতে বলেছে। সংস্থাটি বলেছে, এতে লক্ষাধিক মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে।
গ্রিনপিস পরিবেশবাদী জোটের মতে, বায়ু দূষণ একটি উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ক্ষতিরও কারণ। যেটা বিশ্বের মোট দেশজ উৎপাদনের তিন থেকে চার শতাংশের সমান বলে মনে করা হয়।
২০১৭ সালে শুরু হওয়া বার্ষিক আইকিউএয়ার এখন পর্যন্ত ১১৭টি দেশ ও অঞ্চলের মোট ৬৪৭৫টি শহরের পিএম ২.৫ বায়ু মানের ডেটা সংগ্রহ করেছে। সংস্থাটির মতে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশের “সরকার, অলাভজনক সংস্থা, গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং বিজ্ঞানিদের মাধ্যমে পরিচালিত কয়েক হাজার নিয়ন্ত্রক এবং কম খরচে বায়ুর গুণমান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা থেকে” তথ্য সংগ্রহ করা হয়।