মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর চালানো দমন-পীড়নকে যুক্তরাষ্ট্রের “গণহত্যা” হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ গণহত্যার বিষয়ে জবাবদিহিতা এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কার্যক্রমকে তরান্বিত করবে বলে প্রত্যাশা করছে ঢাকা।
মঙ্গলবার (২২ মার্চ) বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, “দেরিতে হলেও এটি একটি ভালো খবর। আমরা একে স্বাগত জানাই।”
তিনি বলেন, “কোথাও গণহত্যা সংঘটিত হলে তা স্বীকার করতে হবে এবং অপরাধীদের শাস্তি থেকে মুক্তি দেওয়া উচিত নয়।…আমরা বলি আমরা কোনো গণহত্যা দেখতে চাই না। দুর্ভাগ্যবশত, তবুও গণহত্যা হচ্ছে।”
যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের ভালো বন্ধু উল্লেখ করে আব্দুল মোমেন আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “এটি মিয়ানমারের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করবে। যার ফলে তারা রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গাদের নিজ মাতৃভূমিতে ফিরিয়ে নেবে।
তিনি বলেন, “যদি যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘোষণার মাধ্যমে প্রত্যাবাসনের প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত হয়, তবে আমরা খুব খুশি হব।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ দুটি লক্ষ্যের ওপর জোর দিচ্ছে-প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের কল্যাণ এবং গণহত্যার পুনরাবৃত্তি রোধ করা।” আব্দুল মোমেন বলেন, গণহত্যার শিকার ব্যক্তিরা অবশ্যই ন্যায়বিচার পাবেন এবং তিনি আশা করেন যে, আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গাম্বিয়ার দায়ের করা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলাটি গতি পাবে।
উল্লেখ্য, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর চালানো দমন-পীড়নকে “গণহত্যা” হিসেবে ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার ওয়াশিংটনের ইউএস হলোকাস্ট মেমোরিয়াল মিউজিয়ামে এক অনুষ্ঠানে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন এ ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি এবং সম্ভাব্য আইনি পদক্ষেপের ভিত্তি স্থাপনের উদ্দেশ্যে এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সেনাবাহিনী দেশটির নির্বাচিত নেতা অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসিকে (এনএলডি) ক্ষমতাচ্যুত করার পর ইতিমধ্যে একাধিক ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
এই ঘোষণা মিয়ানমারের বর্তমান সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়াতে পারে। কারণ ইতিমধ্যে হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে “গণহত্যা”র অভিযোগের মুখোমুখি হচ্ছে জান্তা সরকার।
২০১৭ সালে মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জাতিগত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হওয়ার পর ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন।