যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বুধবার বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে পৌঁছেছেন। সেখানে তিনি নেটো এবং ইউরোপীয় মিত্রদের সাথে দেখা করবেন এবং ইউক্রেনে আক্রমণের জন্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন দফা নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সালিভান বলেছেন, “প্রেসিডেন্ট বাইডেন রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে এবং কোন রকম ফাঁক-ফোকর না রেখে, কঠোরভাবে সেগুলোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে, বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞাগুলোকে আরও কঠিন করতে, সহযোগী দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করবেন”।
বুধবার ব্রাসেলসে এক সংবাদ সম্মেলনে, নেটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ বলেছেন, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধ “আমাদের নিরাপত্তার জন্য একটি নতুন হুমকি” এবং জোট নেতারা বৃহস্পতিবারের নেটো শীর্ষ সম্মেলনে ইউক্রেনের প্রতি আরও সমর্থন ঘোষণা করতে পারেন।
স্টলটেনবার্গ বলেন, “আমি আশা করি, নেতৃবৃন্দ জোটের পূর্ব অংশে, স্থলে, আকাশে এবং সমুদ্রে শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি সমস্ত এলাকায় নেটোর অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করতে সম্মত হবেন”।
তিনি বলেন, “প্রথম পদক্ষেপ হবে: বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি, রোমানিয়া এবং স্লোভাকিয়ায় নেটো’র চারটি নতুন সামরিক গ্রুপ মোতায়েন করা”।
জোট প্রধান আরও বলেন, নেটো নেতারা রাশিয়ার কাছ থেকে পারমাণবিক, রাসায়নিক এবং অন্যান্য হুমকি মোকাবেলায় একটি চুক্তি ঘোষণা করতেও প্রস্তুত।
এ দিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্সকি বৃহস্পতিবারের নেটো শীর্ষ সম্মেলনে ভার্চুয়াল ভাষণ দেবেন। তিনি এই বৈঠকের আগেই বলেছেন তিনি আশা করেন পশ্চিমা নেতারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরও বাড়াবেন এবং ইউক্রেনকে আরও সহায়তা প্রদানের অঙ্গীকার করবেন।
রুশ বাহিনী ইউক্রেন আক্রমণ করার প্রায় এক মাস পর, ইউক্রেনীয় বাহিনী পাল্টা আক্রমণাত্মক অভিযান চালাচ্ছে। তারা রুশ সেনাদের লক্ষ্যবস্তু করছে এবং কিছু ক্ষেত্রে হারানো এলাকা পুনরুদ্ধার করছে বলেও ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক মঙ্গলবার বলেছে যে তাদের বাহিনী প্রবল যুদ্ধের পর রাজধানী কিয়েভের শহরতলীর মাকারিভ পুনরুদ্ধার করেছে।
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীকে খারকিভের ১২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে পূর্বাঞ্চলীয় শহর ইজিয়ামে এবং দেশের দক্ষিণাঞ্চলে খেরসন শহরের কাছাকাছি এলাকায় পাল্টা আক্রমণ চালাতে দেখা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা ইউক্রেনের পাল্টা হামলার বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। তবে তারা বলেন যে, দেশের কিছু অংশে যুদ্ধের গতি পরিবর্তন হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অন্য কর্মকর্তারা রাশিয়ার সামরিক অভিযানের অবস্থা সম্পর্কে আরও বেশি স্পষ্টবাদী ছিলেন।
হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান ইউক্রেন নিয়ে ক্রেমলিনের পরিকল্পনা সম্পর্কে সাংবাদিকদের বলেছেন, “রাশিয়া এখন পর্যন্ত স্পষ্টতই ব্যর্থ হয়েছে”।
যুক্তরাষ্ট্রের একজন উর্ধতন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা, গোয়েন্দা তথ্য নিয়ে মন্তব্য করায়, নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাংবাদিকদের বলেন, নিশ্চিতভাবে আজভ সাগরে রাশিয়ার জাহাজগুলো ইউক্রেনের মারিউপোল শহরে গোলাবর্ষণ শুরু করেছে। শহরটি কয়েক দিন ধরে প্রচণ্ড গোলাবর্ষণের মধ্যে রয়েছে।
কিন্তু ওই কর্মকর্তা বলেন, অন্য গোয়েন্দা তথ্য থেকে জানা যায় যে, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন একটি দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। রাশিয়ার বাহিনী এখনো জ্বালানি, খাদ্য এবং প্রিসিশন-গাইডেড অস্ত্রের ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে হিমশিম খাচ্ছে।
এমনকি মৌলিক সরবরাহের অভাব রয়েছে বলেও মনে হচ্ছে।
“আমরা কিছু ইঙ্গিত পেয়েছি যে, তাদের কিছু সেনা ফ্রস্টবাইটে (তুষারস্পর্শে শরীরের প্রদাহ) ভুগছে কারণ তাদের কাছে উপযুক্ত ঠান্ডা আবহাওয়ার গিয়ারের অভাব রয়েছে”, কর্মকর্তা বলেছেন। “সেনাদের অনেকে আসলেই কষ্ট পেয়েছেন এবং [যুদ্ধ থেকে] তাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে”।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা, ইউএনএইচসিআর মঙ্গলবার বলেছে যে, ইউক্রেন থেকে পোল্যান্ড, রোমানিয়া, মলদোভা ও হাঙ্গেরিতে প্রায় সাড়ে তিন মিলিয়নেরও বেশি মানুষ পালিয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মার্সি কর্পসের মানবিক প্রতিক্রিয়া উপদেষ্টা স্টিভ গর্ডন এক বিবৃতিতে বলেছেন, “বাস্তবতা হলো এই মুহূর্তে মানবিক ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে”।
তিনি যোগ করেন যে শহরগুলো সবচেয়ে তীব্র লড়াই চলছে সেখানে “তিন থেকে চার দিনের বেশি খাদ্যের মতো প্রয়োজনীয় সামগ্রীর মজুত নেই”।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র সতর্ক করেছে, রাশিয়া ইউক্রেনে তার উদ্দেশ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়ে দিন দিন বেসামরিক লোকদের ওপর হামলা বাড়াচ্ছে।
"স্পষ্টতই, বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটছে এবং স্পষ্টতই, রাশিয়ানদের নির্বিচার হামলা বেড়েই চলেছে...ততই তারা হতাশ হয়ে পড়েছে”, কারবি পেন্টাগনের সাংবাদিকদের বলেছেন।
“আমরা বিশ্বাস করি আমরা যা দেখি তেমনই বর্ণনা করা উচিত এবং আমরা বিশ্বাস করি যে রুশ বাহিনী যুদ্ধাপরাধ করছে”, তিনি যোগ করেছেন।
রাশিয়া বারবার যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে, এমনকি যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্য পশ্চিমা দেশগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে, রাশিয়া ইউক্রেনে রাসায়নিক এবং জৈবিক অস্ত্র বা এমনকি পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করার প্রস্তুতি নিতে পারে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার দেশের পারমাণবিক প্রতিরোধ বাহিনীকে উচ্চ সতর্কতায় রেখেছেন। হোয়াইট হাউস এবং পেন্টাগনের কর্মকর্তারা তা পর্যবেক্ষণ করেছেন।