অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বাংলাদেশে সর্বজনীন পেনশন কতদূর


বাংলাদেশে সর্বজনীন পেনশন কতদূর (প্রতীকী ছবি)
বাংলাদেশে সর্বজনীন পেনশন কতদূর (প্রতীকী ছবি)

বাংলাদেশে মোট কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর শতকরা মাত্র ৫ ভাগ সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত। সরকারি চাকরিজীবিরা গ্র্যাচুইটি, জেনারেল প্রভিডেন্ট ফান্ড ও মাসিক পেনশনের সুবিধা পান। সরকারি চাকরি থেকে অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণদের মৃত্যুর পর তাদের স্ত্রীরাও পেনশনের সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করেন। তারা মাসিক চিকিৎসা ভাতা, উৎসব ভাতা ও বৈশাখী ভাতাও পান। অন্যদিকে, কর্মক্ষম জনগোষ্টির শতকরা ৮ ভাগ লোক স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। এদের মধ্যে কোনো প্রতিষ্ঠানে মাসিক পেনশনের ব্যবস্থা আছে, আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে আছে প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্র্যাচুইটির ব্যবস্থা। এর বাইরে ৮৭ ভাগ লোক অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে চাকরি করেন। তাদের ভাগ্যে না জোটে গ্র্যাচুইটি, না জোটে পেনশনের সুযোগ সুবিধা। এরা এইসব সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত এবং তাদের অনেকেরই অবসর জীবন খুবই কষ্টে কাটে।


সর্বজনীন পেনশন কী

বাংলাদেশের সকল মানুষের জন্য অবসরকালীন পেনশনের ব্যবস্থাকে সর্বজনীন পেনশন বলা হচ্ছে। দেশে ষাটোর্ধ্ব সকল নাগরিকের জন্য সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।


বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, দেশে ৬৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা এখন ৮০ লাখ। তাদের মধ্যে যারা বেসরকারি চাকরিতে ছিলেন তাদের মাত্র ১০ শতাংশ গ্র্যাচুইটি ও প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থ পান। বাংলাদেশে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন সিংহভাগ মানুষ। তারা কোনো কিছুর আওতায়ই পড়েন না। জাতীয় পরিচয়পত্রকে ভিত্তি ধরে দেশের ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সকল নাগরিকের জন্য সর্বজনীন পেনশন চালু করতে যাচ্ছে সরকার। প্রবাসীরাও এই কর্মসূচিতে অন্তর্ভূক্ত হতে পারবেন। যারা নিবন্ধিত হবেন তারা ৬০ বছরের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত পেনশন ভোগ করবেন। প্রাথমিক পর্যায়ে পেনশন প্রকল্পে হিসাব খোলা ঐচ্ছিক হলেও পরে তা বাধ্যতামূলক করা হবে। যারা পেনশন হিসাব খুলে টাকা জমা রাখবেন, তারা জীবনের শেষ সময়ে পেনশন সুবিধা পাবেন। এইরূপ জমা সম্পূর্ণভাবে আয়কর রেয়াতের সুবিধা পাবে। নির্ধারিত পদ্ধতিতে সুদ প্রদানের শর্তে জরুরি প্রয়োজনে পেনশন স্কিমে জমা টাকা থেকে ঋণ নেওয়া যাবে। পেনশনধারীর বয়স ৭৫ হওয়ার আগে মৃত্যুবরণ করলে তার নমিনি পেনশন পাবেন। পেনশন তহবিল পরিচালনার জন্য সরকার কর্তৃক একটি কর্তৃপক্ষ নিয়োগ করা হবে। ওই কর্তৃপক্ষ জমাকৃত অর্থ অনুমোদিত বিভিন্ন লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করতে পারবেন।


অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের ছয় কোটির বেশি কর্মজীবীর মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি কাজ করেন বেসরকারি খাতে। প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতসহ দেশের সব জনগণের জন্য একটি সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থা পর্যায়ক্রমে চালু করতে একটি কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে। পেনশনভোগীদের স্মার্টকার্ড দেওয়া হবে এবং ৫ থেকে ১০ শতাংশ হারে বার্ষিক ইনক্রিমেন্টের ব্যবস্থা রাখা হতে পারে। বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত সাড়ে ১১ লাখ সরকারি চাকরিজীবী পেনশন সুবিধা পাচ্ছেন। এতে বছরে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়।


বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালে সরকারি কর্মচারীদের পাশাপাশি বিভিন্ন করপোরেশনের কর্মচারীদের অন্তর্ভুক্ত করে গণকর্মচারী (অবসর) আইন প্রণয়ন করা হয়। এই আইনের মাধ্যমে গণকর্মচারীদের চাকরিজীবনের সর্বশেষ উত্তোলনকৃত বেতনের একটি সুনির্দিষ্ট পরিমাণ (সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ) পেনশন দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করা হয়। সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থা চালু হলে আগের নিয়মেও পরিবর্তন আনা হবে।



বর্তমানে যেমন ভাতা চালু আছে


বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার ৬০ বছরের বেশি বয়স্ক দরিদ্র প্রবীণদের মাসে ৫০০ টাকা করে ভাতা প্রদান করেন। বর্তমানে দেশের ক্রয়মূল্য হিসেবে ৫০০ টাকা দিয়ে একজন প্রবীণের চা খাওয়ার খরচই মেটানো কঠিন হয়ে পড়ে। এই অর্থে তার চিকিৎসা ও খাওয়া-দাওয়ার কথা কল্পনাই করা যায় না। দরিদ্র প্রবীণদের বয়স্কভাতা ৪ থেকে ৫ গুণ বাড়ানো হলে কিছুটা ফল পাওয়া যেতে পারে বেশ কয়েকজন প্রবীণের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে।



আইন ও বিধি প্রণয়নে কতো সময়


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে জাতীয়ভাবে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করার ব্যাপারে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছিলেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শুরুর দিকে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাটি চালু হবে পরীক্ষামূলক ভিত্তিতে। তার আগেই আইন প্রণয়ন করা হবে। সরকার আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে সারা দেশে এ পেনশনব্যবস্থা চালু করতে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করছে।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বুধবার (৩০ মার্চ) বলেছেন, প্রবাসীসহ দেশের সব নাগরিকের জন্য প্রস্তাবিত পেনশন ব্যবস্থার রূপরেখা নিয়ে সরকার অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করবে।

তিনি বলেন, "বিষয়গুলো এখনও গবেষণা পর্যায়ে রয়েছে। আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে সবার সঙ্গে কথা বলব।" বুধবার অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির পরপর দুই বৈঠকের পর সাংবাদিকদের একথা বলেন অর্থমন্ত্রী।

মন্ত্রী জানান, ইতোমধ্যে জনগণের মতামত চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ‘জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ আইন ২০২২’ শিরোনামের একটি খসড়া আইন আপলোড করা হযেছে। আগ্রহীদের এ বছরের ১২ এপ্রিলের মধ্যে তাদের মতামত পাঠাতে অনুরোধ করা হয়েছে।

এর আগে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, সরকার প্রবাসীসহ দেশের সকল নাগরিকের জন্য একটি সর্বজনীন সাধারণ পেনশন ব্যবস্থা চালু করবে।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এম এ মান্নান ভয়েস অফ আমেরিকাকে জানিয়েছেন, এ জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নে পরিকল্পনা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, “সর্বজনীন পেনশন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী অঙ্গিকার ছিল। এটি বাস্তবায়নে এখন থেকেই কর্মপরিকল্পনা শুরু হয়েছে। মানুষ যাতে সুফল পায় তা নিশ্চিত করা হবে। শুরুতে এটি পাইলটিং এর মাধ্যমে শুরু করা হবে। সারাদেশে ২০৩০ এর মধ্যে সবার জন্য সর্বজনীন পেনশন আমরা করতে পারবো বলে আশাবাদী। প্রাথমিকভাবে এটি করার জন্য আগামী বছরের আগস্ট মাসের দিকে কাজ শুরুর লক্ষ্যে এখন পরিকল্পনা গৃহিত হয়েছে। এজন্য অর্থ মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করবে”।


কয়েকটি করুণ চিত্র


বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দেখা যায় বৃদ্ধ বাবা-মায়ের দায়িত্ব না নিয়ে সন্তানরা তাদের বাড়ির বাইরে রেখে দেয়। আয়রোজগারহীন এইসব নারী-পুরুষদের সীমাহীন দুর্ভোগ ও যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করতে হয়। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিবার তাদের বোঝা মনে করে দায়িত্ব নিতে চায় না।


২০১৭ সালে জয়পুরহাটে ভরণ-পোষণের দায়িত্ব না নিয়ে বৃদ্ধ মাকে রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়েছিল। প্রায় ৮০ বছরের ওই বৃদ্ধাকে রাস্তায় আহাজারি করতে দেখে স্থানীয়রা ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিলে পুলিশ এসে উদ্ধার করে থানায় নেয়। পরে তার জায়গা হয়েছিল জয়পুরহাট কারীগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সেফ হোমে।


২০২১ এর অক্টোবরে ধামরাই উপজেলায় বৃদ্ধা মরিয়ম বেগমকে স্থানীয় বঙ্গবাজার এলাকার রাস্তার পাশ থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। প্রথমে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একজনের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর মরিয়ম বেগমকে তার ভাইয়ের ছেলের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই ৯ দিন ছিলেন তিনি। এই সময়ে মরিয়েমের ছয় ছেলের কেউই মায়ের খোঁজ নেননি।


২০২১ সালে খুলনার পাইকগাছায় বৃদ্ধ বাবা-মাকে রাস্তায় ফেলে রাখায় তিন সন্তানকে আটক করে পুলিশে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। সেই সময়ে খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সেই বৃদ্ধ ও বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে দেখভালের দায়িত্ব নিয়েছিল।


এমন আরো অনেক ঘটনার খবর প্রায়ই সামনে চলে আসে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৃদ্ধ অবস্থায় বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যায়। এই সময়ে তারা তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি অনেক বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। যদি এই বয়সে আর্থিক কোনো সক্ষমতা বা সহায়তা থাকে তবে তাদের ভোগান্তি কমে আসবে।


কয়েকজনের ভাষ্য: পেনশন নিয়ে সাধারণের ভাবনা


আকতার হোসেন তালুকদার (৬৮) স্থায়ীভাবে বসবাস করেন মাদারীপুরে। একসময়ে মাঝারি ধরনের ঠিকাদার ছিলেন। মোটামুটি স্বচ্ছল জীবন-যাপন করেছেন। গত প্রায় ছয়-সাত বছর তিনি কোনো কাজ করছেন না। একধরনের অবসর জীবন যাপন করছেন। এখন মাঝেমাঝে ঢাকার যাত্রাবাড়ি এলাকায় থাকেন। সেখানে তার ছেলেরা বসবাস করেন। তার এক ছেলে গাড়ির মেকানিকের কাজ করে। যা আয় হয় তা দিয়ে মাস চলে যায়। আরেক ছেলে ঢাকার এক গার্মেন্টসে চাকরি করে। বেতনের টাকা নিজের সংসার খরচ মেটাতেই শেষ। অবসর জীবন যাপন করা আকতার তালুকদারের হাতে বাড়তি টাকা তুলে দেওয়ার মতো সঙ্গতি তার ছেলেদের নেই। আবার নিজের হাত খরচের টাকা ছেলেদের কাছে চাইতেও লজ্জা হয় একসময়ের স্বচ্ছল আকতারের। তার সঙ্গে আলাপ হয় সরকারের সদ্য ঘোষিত ‘সর্বজনীন পেনশন’ নিয়ে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “যখন টাকা আয় করছি তখন জমায়া রাখি নাই। এখন আয় করার বয়স নাই, শক্তি নাই। এমন লোকদের জন্য সরকারেরও কোনো উদ্যোগ নাই।”

রেজাউল করিম (৬৩) ঢাকায় বসবাস করেন। একসময়ে সরকারি চাকরি করতেন। এখন অবসর যাপন করছেন। তার দুই মেয়ে। কোনো ছেলে সন্তান নেই। মেয়েরা এখনও বিয়ে করেননি। স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে চারজনের সংসার। ঢাকার ভাড়া বাসায় অবসরকালীন যে পেনশন সুবিধা পান তা দিয়ে কোনোমতে চলছে তার সংসার। সরকারি চাকরির পেনশন হিসেবে এককালীন যে অর্থ পেয়েছিলেন তার একটা বড় অংশ ব্যাংকে ফিক্সট ডিপোজিট করে রেখেছেন। এখন সেই টাকা দিয়ে চলছে সংসারের খরচ, মেয়েদের স্কুলে-কলেজে পড়ালেখার ব্যয়। এদিকে নিজের ডায়াবেটিকসহ নানা রোগব্যধিও আছে। স্ত্রীর চোখের চিকিৎসা করাতে ব্যয় হয়েছে অনেক টাকা। এই অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী বলছেন, “পেনশন যা পাই তা দিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে আত্মমর্যাদাসহ বসবাস করা কঠিন। ঢাকার বাসা ভাড়ার সাথে নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে জীবন চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে দিনদিন”।

নুরুল ইসলাম (৭০) একসময়ে স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। অবসর জীবন যাপন করছেন প্রায় দশ বছর। এককালীন কিছু টাকা পেয়েছিলেন অবসরে যাওয়ার পরে। সেই টাকার একটি অংশ ব্যয় হয়েছে মেয়ের বিয়ের সময় ও একটি ঘর তৈরি করতে। এখন সংসারে তারা স্বামী-স্ত্রী দুজন। কিন্তু এই পরিবারের ব্যয় মেটাতেই তার টানাটানি লেগে যায়। তিনি বলছেন, “রিটায়ারের সময়ে যেই টাকা পাইছিলাম, তা খরচ হয়ে গেছে। এখন সংসার চলে কোনোরকম সামান্য পেনশন দিয়ে। এই পেনশনের পরিমাণ যদি বাড়ানো হয় তাহলে বাকি জীবনটা একটু নিরিবিলি কাটাতে পারবো। তা আর এই জীবনে পারবো কিনা, বলতে পারি না।”


দেশে দেশে পেনশন


বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারতে সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি চালু রয়েছে। ভারত সরকার কর্তৃক চালুকৃত ন্যাশনাল পেনশন স্কিম (এনপিএস) দেশের মানুষের জন্য কল্যাণমুখী বিনিয়োগ ও পেনশন প্রাপ্তির সহজ উপায়। পেনশন ফান্ড রেগুলেটরি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (পিএফআরডিএ) এই তহবিলের সর্বময় নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ। ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী যেকোনো ভারতীয় নাগরিক এই পেনশন স্কিমে হিসাব খুলে টাকা জমা করতে পারেন। হিসাব খোলার ৩ বছর পর জরুরি তিনটি প্রয়োজনে জমাকৃত অর্থের শতকরা ২৫ ভাগ পর্যন্ত উত্তোলন করা যায়। উত্তোলনের কারণগুলো হতে পারে- বাড়ি নির্মাণ বা ক্রয়, সন্তানের পড়াশোনা বা চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ করা।


১৯৯৭ সালে থাইল্যান্ড গভর্নমেন্ট পেনশন ফান্ড বা থাইল্যান্ড জিপিএফ নামে সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি চালু করে। এছাড়া সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইনেও এ ধরনের প্রকল্প চালু আছে।


বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর ও অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমান
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর ও অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমান

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর ও অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমান বলেন, “একটি আধুনিক রাষ্ট্রে নাগরিকের নিরাপত্তার জন্য যে আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া রয়েছে এই সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা তারই প্রতিচ্ছবি। বাংলাদেশের মতো একটি দেশের জন্য এটি অবশ্যই একটি সাহসী উদ্যোগ। এটি করতে হলে একটি আইন করতে হবে। এছাড়া একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানও দরকার হবে। আমি মনে করি, শুরুতে এটি ভলান্টিয়ারি হওয়া উচিৎ। অর্থাৎ, সরকার নিজেই গরীব বা প্রান্তিকদের জন্য ব্যবস্থা নিবে। আবার ধনী বা বিত্তশালীদের জন্য আরেকটি সুযোগ রাখা উচিৎ, যাতে তারা এই রেভ্যুলিউশনে যোগ দিতে পারে। সরকারও চাইছে শুরুতে বিষয়টি দেখতে, সময় নিয়ে দেখে ৭/৮ বছর পরে তারা চালু করবে। শুরুতে একটু পরীক্ষা নিরীক্ষা করাই ভালো বলে আমি মনে করি।”

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর সম্মানিত ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “কোনো দেশ যখন কল্যান রাষ্ট্রের দিকে যায় তখন তার নাগরিকের জন্য কতোগুলো সুযোগ ও অধিকার নিশ্চিত করা হয়। এখন বাংলাদেশে যে সর্বজনীন পেনশনের কথা বলা হচ্ছেম তা নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। কথা হচ্ছে, এটি বাস্তবায়নে কতোটা আন্তরিকতা ও সততা দেখানো হবে। ”

(এই প্রতিবেদনের কিছু তথ্য ইউএনবি থেকে নেওয়া হয়েছে।)

XS
SM
MD
LG