অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ইউক্রেনে বেসামরিক হত্যাকাণ্ড নিয়ে আলোচনা করবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ


বেসামরিক লোকদের কবরের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে একটি ছেলে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে তারা রাশিয়ার সেনাদের হাতে নিহত হয়েছেন। বুচা, কিয়েভ অঞ্চল, ইউক্রেন। ৪ এপ্রিল ২০২২
বেসামরিক লোকদের কবরের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে একটি ছেলে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে তারা রাশিয়ার সেনাদের হাতে নিহত হয়েছেন। বুচা, কিয়েভ অঞ্চল, ইউক্রেন। ৪ এপ্রিল ২০২২

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাশিয়ার নেতা ভ্লাদিমির পুতিনকে যুদ্ধাপরাধের বিচারের মুখোমুখি করা উচিত বলে মন্তব্য করার এক দিন পর মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি বৈঠকে ইউক্রেনে বেসামরিক হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আলোকপাত করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মঙ্গলবারের অধিবেশনে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ও জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ের প্রধান মার্টিন গ্রিফিথসের বক্তৃতা এবং সেই সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্সকির একটি ভাষণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

ব্রিটেন এই মাসে কাউন্সিলের সভাপতিত্ব করেছে এবং জাতিসংঘে দেশটির রাষ্ট্রদূত বারবারা উডওয়ার্ড সাংবাদিকদের বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণে বেসামরিক হত্যার বিষয়টি অধিবেশনে “অগ্রাধিকার পাবে এবং কেন্দ্রবিন্দুতে” থাকবে।

ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা সোমবার বলেছেন, তিনি ইউক্রেনের রাজধানীর শহরতলী বুচার পরিস্থিতিসহ গুতেরেসের সঙ্গে পুরো বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। বুচায় সাম্প্রতিক দিনগুলোতে রাশিয়ান সেনাদের মাধ্যমে সংঘটিত নৃশংসতার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বুচায় বেসামরিক লোকদের হত্যার অভিযোগ মস্কো অস্বীকার করেছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ দৃশ্যগুলোকে “মঞ্চায়িত রুশ-বিরোধী উস্কানি” হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। জাতিসংঘে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেছেন যে, তিনি মঙ্গলবারের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে “বাস্তব প্রমাণ” পেশ করবেন।

ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক মঙ্গলবার বলেছে যে, ইউক্রেনীয় বাহিনী “চেরনিহিভ ও কিয়েভের উত্তরের আশেপাশের এলাকাগুলো থেকে রাশিয়ান বাহিনীকে পিছু হটতে বাধ্য করে” দেশের উত্তরাঞ্চলের এলাকাগুলো পুনরুদ্ধার করেছে। মন্ত্রক যোগ করেছে যে, পূর্ব ইউক্রেনে আবারও যুদ্ধের জন্য রাশিয়ার বাহিনীগুলোর "উল্লেখযোগ্য পুনসজ্জিতকরণ এবং সংস্কারের প্রয়োজন হতে পারে”।

বুচা ও অন্য শহরতলীতে রেখে যাওয়া ধ্বংসযজ্ঞের দৃশ্য মস্কোকে ব্যপক সমালোচনার মুখে ফেলেছে।

ইতালি ও ডেনমার্ক মঙ্গলবার ঘোষণা করেছে যে, তারা লিথুয়ানিয়া, ফ্রান্স ও জার্মানিকে অনুসরণ করে রাশিয়ার কূটনীতিকদের বহিষ্কার করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে যে, ইউক্রেনের অনুরোধে ওয়াশিংটন প্রসিকিউটরদের একটি বহুজাতিক দল যারা কথিত নৃশংসতার প্রমাণ সংগ্রহ করবে, তাদেরকে সমর্থন জোগাবে।

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেইন সোমবার টুইট করেছেন যে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউক্রেনে “যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ জোগাড় করতে” তদন্তদল পাঠাবে।

জেলেন্সকি সোমবার বুচা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। জাতীয় টেলিভিশনে এক ভাষণে তিনি বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের অবসানের জন্য আলোচনা করা এখন কঠিন, কারণ মস্কোর সেনাদের মাধ্যমে সংঘটিত নৃশংসতা সামনে আসছে।

জেলেন্সকি বলেন, বেসামরিক লোকদের এক সঙ্গে বেঁধে রাখা এবং কাছ থেকে গুলি করার প্রমাণসহ, একটি গণকবর এবং বুচার রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মৃতদেহ, “এগুলো যুদ্ধাপরাধ ও বিশ্ব গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃত হবে”।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেছেন, বুচা থেকে পাওয়া ছবিগুলো দেখে “এই নৃশংসতাগুলো কোনো একজন দুর্বৃত্ত সেনার কাজ নয় বলে মনে হয়৷ বরং এগুলো একটি বিস্তৃত, বিপদজনক প্রচারণার অংশ। নৃশংসতার জন্য দায়ীদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে”।

জার্মান ভাইস চ্যান্সেলর রবার্ট হ্যাবেক, যিনি দেশটির অর্থনীতি মন্ত্রীও, বলেছেন যে, ইউরোপ রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষেত্রে “আরও উল্লেখযোগ্য” পদক্ষেপ নিতে পারে। তিনি বলেন, জার্মানি রাশিয়ান জ্বালানি আমদানি বন্ধ করতে দীর্ঘমেয়াদি পন্থা গ্রহণের জন্য সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে, তবে এই গ্রীষ্মে রাশিয়ান কয়লা আমদানি এবং বছরের শেষ নাগাদ তেল আমদানি বন্ধ করার আশা করছে দেশটি।

পোলিশ প্রধানমন্ত্রী মাতেউস মোরাউইকি রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও কিছু না করার জন্য ফরাসি ও জার্মান নেতাদের তিরস্কার করেন এবং “পুতিনের যুদ্ধযন্ত্রকে ভেঙে ফেলবে” এমন পদক্ষেপের আহ্বান জানান।

[এই প্রতিবেদনের জন্য কিছু তথ্য দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস, এজেন্সি ফ্রান্স-প্রেস ও রয়টার্স থেকে নেওয়া হয়েছে]

XS
SM
MD
LG