বিশ্লেষকেরা বলছেন, চীনের নৌবাহিনী ২০৫০ সালের মধ্যে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। সামরিক বাহিনী একটি মূল শিপইয়ার্ডকে সম্প্রসারিত করেছে, সমন্বয় বাড়াচ্ছে এবং দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় এক মিত্র দেশের সঙ্গে একটি নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
চীনা কর্মকর্তারা দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ সলোমন দ্বীপপুঞ্জের সঙ্গে একটি খসড়া নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। গত সপ্তাহে ঘোষিত এই চুক্তির মাধ্যমে ইতিমধ্যে সলোমনে বিশ্বের বৃহত্তম নৌশক্তি চীনের সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের সম্ভাবনা নিকটবর্তী অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে শঙ্কিত করেছে।
সম্প্রতি, ব্রিটিশ রয়্যাল নেভির একটি অফিশিয়াল সংবাদপত্র, নেভাল নিউজ, চীনের বৃহত্তম জাহাজ নির্মাণ স্থাপনার একটি “ব্যাপক সম্প্রসারণের” উল্লেখ করে নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। সংবাদপত্রটি জানিয়েছে, সাংহাইয়ের জিয়াংনান শিপইয়ার্ডে এই জাহাজগুলোকে সংযুক্ত করতে একটি বেসিন এবং একাধিক বার্থসহ একটি “বড়” ড্রাইডক থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
চীন পরমাণবিক সাবমেরিন তৈরির জন্য আরও দুটি স্থাপনা সম্প্রসারণ করছে বলে প্রতিবেদনে যোগ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, এই সম্প্রসারণের ফলে পিপলস লিবারেশন আর্মি নৌবাহিনীর জন্য পারমাণবিক শক্তিচালিত বিমানবাহী জাহাজ নির্মাণের সম্ভাবনা উন্মুক্ত হবে।
ওয়াশিংটনে চীনা দূতাবাসের একজন মুখপাত্রকে সামরিক আধুনিকায়ন সম্পর্কে মন্তব্য করার অনুরোধ করা হলে তিনি সাড়া দেননি।
দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রার অংশ
সিঙ্গাপুরের নানিয়াং টেকনোলজিকাল ইউনিভার্সিটির মেরিটাইম সিকিউরিটি রিসার্চ ফেলো কলিন কোহ বলেছেন, এই উদ্যোগগুলোর মাধ্যমে ২০৫০ সালের মধ্যে চীনা নৌবাহিনী উন্নততর হয়ে উঠবে।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০১৭ সালে কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেসে বলেছিলেন যে, তিনি ২০৩৫ সালের মধ্যে "মূলত" সামরিক আধুনিকীকরণ সম্পূর্ণ করতে এবং সশস্ত্র বাহিনীকে ২০৪৯ সালের মধ্যে “বিশ্বমানের” সামরিক বাহিনীতে রূপান্তর করার লক্ষ্য রেখেছেন, গত বছর প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়।
জিয়াংনান শিপইয়ার্ড বিমানবাহী রণতরী, ক্রুজার, ডেস্ট্রয়ার এবং সাবমেরিন তৈরির একটি মূল কেন্দ্র। ব্রিটেনের গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ অনুসারে, ২০১২ সালে চীনা নৌবাহিনীর ৫১২টি জাহাজ ছিল। ডেটাবেস গ্লোবালফায়ারপাওয়ার ডটকম বলছে, এখন এই সংখ্যা ৭০০-এর বেশি।
বন্দরের অভাব
বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে, চীনা নৌবাহিনী প্রশান্ত মহাসাগরে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টার অংশ হিসেবে অতিরিক্ত যে জাহাজ নির্মাণ করেছে, সেগুলো রাখতে সলোমনের একটি বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে জায়গার ঘাটতি কাটিয়ে উঠবে। বর্তমানে মিয়ানমার, পাকিস্তান ও জিবুতিতে চীনের বিদেশি নৌঘাঁটি রয়েছে।
ন্যাশনাল পলিসি ফাউন্ডেশনের সহযোগী গবেষক চিয়েহ চুং বলেন, “সিসিপি (চীনের কমিউনিস্ট পার্টি) শুধুমাত্র প্রথম দ্বীপগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় না, বরং এটিকে একটি ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করতে এবং দ্বিতীয় দ্বীপগুলোতে পৌঁছানোর জন্য তাদের প্রভাব বিস্তার করতে চায়”।
প্রথম চেইনটি জাপানের উত্তরে কুরিল দ্বীপপুঞ্জ থেকে বোর্নিও পর্যন্ত বিস্তৃত দ্বীপগুলোকে বোঝায়। দ্বিতীয়টিতে রয়েছে পাপুয়া নিউ গিনি, মারিয়ানাস ও ক্যারোলিন দ্বীপপুঞ্জ।
সামরিক কাঠামো ঢেলে সাজানো
কিছু বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে, যুদ্ধক্ষেত্রের সিদ্ধান্তগুলো ফিল্ড কমান্ডারদের হাতে তুলে দিতে এবং যুদ্ধকে আরও দক্ষভাবে পরিচালনার জন্য চীন তার সামরিক কমান্ডকে বিকেন্দ্রীকরণের দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক একটি গবেষণা সংস্থা আরএএনডি কর্পোরেশনের সিনিয়র প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ডেরেক গ্রসম্যান বলেছেন, ২০১৬ সাল থেকে সমন্বয় উন্নত করার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এটি এখনো যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর চেয়ে বেশি “কেন্দ্র নিয়ন্ত্রিত”।
ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অফ চাইনিজ মিলিটারি অ্যাফেয়ার্স পেপার অনুসারে, সমন্বয় বাড়ানোর লক্ষ্যে পিপলস লিবারেশন আর্মি নেটওয়ার্ক ২০১৭ সালে একটি পুনর্বিন্যাস প্রক্রিয়া শুরু করেছিল।
গ্রসম্যান বলেন, যেকোনো যুদ্ধের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনী, কৌশলগত সহায়তা বাহিনী এবং রকেট বাহিনীর সমন্বয় করা হলো মূল বিষয়। তিনি সরঞ্জাম ও সেনা সম্পর্কে বলেন, “এটি কেবল সংখ্যার বিষয় নয়”। “আমি মনে করি যদি তারা এই সমস্ত সম্পদগুলো সমন্বিতভাবে ব্যবহার করতে সক্ষম হয়, স্পষ্টতই এটি তাদের ক্ষমতার মানও নির্দেশ করবে”।
চীন ১৯৭০–এর দশক থেকে কোনো যুদ্ধে অংশ নেয়নি। ৭০-এ তারা ভিয়েতনামের কাছে সীমান্ত যুদ্ধে হেরেছিল।
[ভয়েস অফ আমেরিকার লিন ইয়াং এবং জিন গু এই প্রতিবেদনের জন্য ভুমিকা রেখেছেন]