বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার মোংলায়, সুন্দরবনে কীটনাশক ছিটিয়ে মাছ ধরার অভিযোগে ১২ জেলেকে আটক করা হয়েছে। শুক্রবার ভোরে উপজেলার সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের জাপসি এলাকায় গোলের খাল থেকে তাদের আটক করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৪০০ কেজি মাছ, পাঁচটি নৌকা, ছয় বোতল কীটনাশক, চারটি জাল ও পাঁচটি টর্চলাইট জব্দ করা হয়।
আটক জেলেরা হলেন- সাদ্দাম বৈদ্য (২৭), শফিকুল ইসলাম বৈদ্য (৩৮), জাকির হোসেন (২৮), খায়রুল মোড়ল (২৫), আব্দুস সালাম গাজী (৩৬), বাচ্চু সানা (৩৫), আবু সাইদ সরদার (৩০), নাজমুল সরদার (২৮), আবুল হোসেন গাজী (২৮), শাহজাহান শেখ (৪৫), সালাম সানা (৩০) ও ইকরামুল সরদার (৩১)। তাদের সবার বাড়ি জেলার দাকোপ ও রূপসা উপজেলায়।
র্যাব খুলনা-৬ এর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শুক্রবার ভোরে সুন্দরবনের অভয়াশ্রম এলাকায় নদী-খালে কীটনাশক ছিটিয়ে মাছ শিকার করা হচ্ছে এমন খবর পেয়ে র্যাব সদস্যরা অভিযান শুরু করে। অভিযান চলাকালে র্যাব সদস্যরা দেখতে পায় জাপসি নদী ও গোলের খালে অসংখ্য মাছ মরে ভেসে আছে এবং ওই ভাসা মাছ কয়েকটি নৌকায় তোলা হচ্ছে। এসময় জেলেরা র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে, নৌকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে র্যাব সদস্যরা ধাওয়া করে ১২ জেলেকে আটক করে।
আটক জেলেদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
উল্লেখ্য, গত ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগে র্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ও পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথকভাবে এ নিষেধাজ্ঞা দেয়। এই কর্মকর্তাদের মধ্যে র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক এবং বর্তমান আইজিপি বেনজীর আহমেদও রয়েছেন। এরই মধ্যে তার আমেরিকান ভিসাও বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া র্যাবের বর্তমান মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মো. আনোয়ার লতিফ খানের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথক এক ঘোষণায় বেনজীর আহমেদ এবং র্যাব-৭ এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে বাংলাদেশে র্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটেলিয়ান (র্যাব), মাদক দ্রব্যের বিরুদ্ধে সরকারের লড়াইয়ে গুরুতর মানবাধিকার লংঘনের জন্য অভিযুক্ত। এতে বলা হয়েছে যে তারা আইনের শাসন, মানবাধিকারের মর্যাদা ও মৌলিক স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে ক্ষুন্ন করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। র্যাব হচ্ছে ২০০৪ সালে গঠিত একটি সম্মিলিত টাস্ক ফোর্স। তাদের কাজের মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপরাধীদের কর্মকান্ড সম্পর্কে গোপন তথ্য সংগ্রহ এবং সরকারের নির্দেশে তদন্ত পরিচালনা করা।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বা এনজিওদের অভিযোগ হচ্ছে যে র্যাব ও বাংলাদেশের অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ২০০৯ সাল থেকে ৬০০ ব্যক্তির গুম হয়ে যাওয়া এবং ২০১৮ সাল থেকে বিচার বহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের জন্য দায়ী। কোন কোন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে এই সব ঘটনার শিকার হচ্ছে বিরোধী দলের সদস্য, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা।