অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

নুসরাত হত্যার ৩য় বাষির্কী, সামাজিক অপপ্রচারে আতংকিত পরিবার


নুসরাত জাহান রাফি

নুসরাত হত্যার তৃতীয় বাষির্কী ১০ এপ্রিল। ২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে নয়টায়, বাংলাদেশের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে, চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান অগ্নিদগ্ধ মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি।
বাংলাদেশের ফেনী জেলার সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসায় পরীক্ষা দিতে গেলে, আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফির গায়ে কেরোসিন ঢেলে ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল মাদরাসার প্রশাসনিক ভবনের ছাদে নিয়ে, তাঁর গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। চারদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল তিনি মারা যান।

শনিবার বিকেলে নুসরাতের মৃত্যুবাষির্কীতে, হামিদিয়া মসজিদে মিলাদ, দোয়া ও ইফতারের মাধ্যমে পারিবারিকভাবে তার আত্মার শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয়েছে বলে জানান নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান। রবিবার নুসরাত পরিবারের সঙ্গে ইফতার করবেন পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

নোমান বলেন, “নুসরাত হত্যাকাণ্ডের তিন বছরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রামে আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আত্মীয় স্বজন। যার কারণে আমরা সামাজিক মান সম্মানের ভয়ে আতংকিত থাকি। এ ব্যাপারে আমরা আইসিটি আইনে মামলা করেছি, যা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআইতে তদন্তাধীন রয়েছে।”

নুসরাত জাহান রাফির মা শিরিন আক্তার বলেন, “তিন বছর পার হলো। আজও নুসরাতের স্মৃতিরক্ষায় তেমন কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। নিজের জীবন দিয়ে নারী নির্যাতনের প্রতিবাদ করলেও পাননি সরকারি-বেসরকারি কোন সম্মান।” তিনি বলেন, “প্রতিবছর এইদিনে পুলিশ ও সাংবাদিকরা এসে খোজঁখবর নেন, তারপর আর কোন খবর থাকে না।”

নুসরাতের মা আরও বলেন, “আমরা বিচারিক আদালতে ন্যায় বিচার পেয়েছি। শুনেছি উচ্চ আদালতে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা আপিল করেছেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আসামিদের রায় দ্রুত কার্যকরের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।”

বাদীপক্ষের আইনজীবী এম শাহজাহান সাজু বলেন, “২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর আসামিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য (ডেথ রেফারেন্স) মামলার যাবতীয় কার্যক্রম হাইকোর্টে রয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ হলে তা অনুমোদনের জন্য উচ্চ আদালতে পাঠাতে হয়। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক (মামলার যাবতীয় নথি) ছাপানো শেষ করা হয়। পরে প্রয়োজনীয় কাজ শেষে শুনানির জন্য মামলাটি প্রধান বিচারপতি বরাবর উপস্থাপন করা হয়। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানির জন্য বেঞ্চ গঠন করেছিলেন প্রধান বিচারপতি। বিচারপতি হাসান ইমাম ও সৌমেন্দ্র সরকার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে এ মামলার শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। সে বেঞ্চ করোনার কারণে বাতিল হয়ে গেছে। এরপর বেঞ্চ গঠন হয়নি। তাই মামলাটির শুনানি হচ্ছে না “

২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ মামলার রায়ে ১৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন। পাশাপাশি প্রত্যেক আসামিকে এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড করা হয়। আসামিরা হলেন- সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ-দৌলা (৫৭), নূর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা পপি (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন মামুন (২২), সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাদরাসার সাবেক সহ-সভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), মহিউদ্দিন শাকিল (২০) ও মোহাম্মদ শামীম (২০)।

XS
SM
MD
LG