“ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের” মামলায় গ্রেপ্তারের ১৯ দিন পর মুন্সীগঞ্জের একটি আদালত স্কুলশিক্ষক হৃদয় মন্ডলকে জামিন দিয়েছেন। রবিবার (১০ এপ্রিল) অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মোতাহার আক্তার ভূঁইয়া এ আদেশ দেন।
গত ২২ মার্চ বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মন্ডলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে আসাদ মিয়া নামে স্কুলের এক অফিস সহকারী “ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের” অভিযোগে সদর থানায় মামলা করেন।
তবে হৃদয় মন্ডলের স্ত্রী ববিতা হালদার দাবি করেন, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে তাকে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়ার জন্য, তার বিরুদ্ধে এ মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে।
এর আগে ২০ মার্চ বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের (বিজ্ঞান বিভাগ) দশম শ্রেণির কিছু ছাত্র বিজ্ঞান ও ধর্মের ওপর হৃদয় মন্ডলের একটি ক্লাস কথোপকথন রেকর্ড করেছিল। যেখানে তিনি “ধর্মকে অসম্মান” করেছিলেন বলে তাদের অভিযোগ।
২২ মার্চ কিছু ছাত্র হৃদয় মন্ডলের শাস্তির দাবিতে স্কুলের বাইরে বিক্ষোভ করে।
পরে ওই দিন হাইস্কুলের একজন অফিস সহকারী (ইলেকট্রিশিয়ান) ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। এর জেরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শনিবার যুক্তরাজ্যভিত্তিক অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষকে হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে “অবিলম্বে ও নিঃশর্ত” মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল।
বৈশ্বিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়ার ডেপুটি রিজিওনাল ডিরেক্টর স্মৃতি সিং বলেছেন, “হৃদয় চন্দ্র মন্ডলকে গ্রেপ্তার করা বাংলাদেশের চলমান উদ্বেগজনক প্রবণতার প্রতীক, যেখানে ক্রমশই স্বাধীন মত প্রকাশের সুযোগ সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। শ্রেণিকক্ষে আলোচনার জন্য একজন শিক্ষকের গ্রেপ্তার হওয়া বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে, যেখানে শিক্ষার্থীদের সমালোচনামূলক চিন্তা-ধারায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য কাউকে জেলে যেতে হতে পারে”।
স্মৃতি সিং আরও বলেছেন, “হৃদয় চন্দ্র মন্ডলের এই ঘটনা বিদ্যমান সংকটের পরিস্থিতিকে আরও ঘনীভূত করেছে এবং একটি দেশের স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য হুমকিস্বরূপ এই ঘটনা”।
এদিকে, শিক্ষক হৃদয় মন্ডলকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে শনিবার বিকেল ৫টার দিকে রাজধানী ঢাকার জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন সমাবেশে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সাবেক অধ্যাপক ও লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, ক্লাসরুমে উত্থাপিত প্রশ্নের যৌক্তিক উত্তর দিতে গিয়ে মুন্সীগঞ্জে বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয়কে গ্রেপ্তারের বিষয়টি তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না।