জাতিসংঘ শুক্রবার (৮ এপ্রিল) সতর্ক করেছে, ১০ লাখ ব্যারেলেরও বেশি তেল বহনকারী একটি পুরানো ও পরিত্যক্ত তেলের ট্যাঙ্কার থেকে ইয়েমেনের উপকূলে তেল ছড়িয়ে পড়ার “আশু ঝুঁকির” আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই তেল উপকূলে ছড়িয়ে পড়লে তা পরিষ্কার করতে ২০ বিলিয়ন ডলার খরচ হতে পারে।
“এ রকম ঘটলে ছড়িয়ে পড়া তেল ইতিমধ্যে সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান যুদ্ধের কারণে বিপর্যস্ত ইয়েমেনের জন্য এক বিশাল পরিবেশগত ও মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করবে”, ইয়েমেনে জাতিসংঘের আবাসিক ও মানবিক সমন্বয়কারী ডেভিড গ্রেসলি সাংবাদিকদের বলেন। তিনি আরও বলেন, “পরিবেশগত ক্ষতি লোহিত সাগরের উপকূলবর্তী দেশগুলোর উপর প্রভাব ফেলতে পারে। সমগ্র অঞ্চলজুড়ে জাহাজে মালামাল পরিবহন ব্যাহত হলে অর্থনৈতিক সংকটও সৃষ্টি হতে পারে”।
জাতিসংঘের কর্মকর্তারা তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে জাহাজটির নিরাপত্তা মূল্যায়ন ও হালকা মেরামত করতে এবং শেষ পর্যন্ত তেল অপসারণের জন্য এটিকে নিরাপদ বন্দরে নিয়ে যাওয়ার জন্য সুযোগ চাইছেন। কিন্তু ওই এলাকা নিয়ন্ত্রণকারী হুথি বিদ্রোহীরা এই সুযোগ প্রদানের প্রতিশ্রুতি থেকে বারবার সরে এসেছে।
যুদ্ধের কারণে ২০১৫ সাল থেকে ট্যাঙ্কারটির কোনো রক্ষণাবেক্ষণ হয়নি এবং জাহাজটিতে কেবল স্বল্পসংখ্যক কিছু ক্রূ রয়েছে। গ্রেসলি বলেন, জাহাজটি এখন মেরামতের অযোগ্য।
গ্রেসলি বলেন, “রাস ইসা উপদ্বীপের কাছাকাছি যেখানে সেফারটি নোঙর করা হয়েছে সেখান থেকে জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন একটি মিশন মার্চ মাসে জানিয়েছিল, ৪৫ বছর বয়সী সুপারট্যাঙ্কারটি দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে”। “এটিতে ছিদ্র হওয়া বা বিস্ফোরণের কারণে প্রচুর পরিমাণে তেল ছড়িয়ে পড়ার আশু ঝুঁকিতে রয়েছে”।
এর ফলে সৃষ্ট পরিবেশগত বিপর্যয় ইয়েমেনের মৎস আহরণ শিল্পকে ধ্বংস করবে, বাতাসে বিষাক্ত পদার্থ ছড়াবে এবং প্রতিবেশী সৌদি আরব ও হর্ন অফ আফ্রিকাকেও প্রভাবিত করতে পারে।
প্রশমন পরিকল্পনা
গ্রেসলি বলেন, ট্যাঙ্কারের দ্বারা সৃষ্ট হুমকি মোকাবিলায় জাতিসংঘের একটি পরিকল্পনা রয়েছে, যা ইয়েমেন সরকার সমর্থন করে। গত মাসে হুথি বিদ্রোহীরা জাতিসংঘের সঙ্গে সহযোগিতার জন্য একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে।
জাতিসংঘ নিরাপদ ১ দশমিক ১ মিলিয়ন ব্যারেল তেল সরাতে একটি প্রতিস্থাপনকারী জাহাজ পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে। এই পরিমাণ তেল আলাস্কায় ১৯৮৯ সালে এক্সন ভালদেজের বহন করা তেলের পরিমাণ থেকে থেকে চারগুন বেশি। যেটা আলাস্কায় ছড়িয়ে পড়ে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল। সকল তেল স্থানান্তরের পর অস্থায়ী জাহাজটি নিরাপদ একটি শিপইয়ার্ডে নেওয়া হবে এবং তেল পুনর্ব্যবহারের জন্য বিক্রি করা হবে।
কিন্তু জাতিসংঘের দুটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা হলো তহবিল ও সময।
গ্রেসলি বলেন, পুরো মিশনে প্রায় ৮০ মিলিয়ন ডলার খরচ হবে।
তিনি বলেন, "এর মধ্যে রয়েছে উদ্ধার অভিযান, তেল এবং ক্রূদের রাখার জন্য একটি বড় জাহাজের ইজারা এবং ১৮ মাসের জন্য রক্ষণাবেক্ষণের খরচ”।
সেফারটির অবস্থান নিয়ে সক্রিয় নেদারল্যান্ডস, তহবিল সংগ্রহের জন্য মে মাসে যৌথভাবে একটি সম্মেলন আয়োজন করার পরিকল্পনা করছে। একটি সম্ভাব্য বিপর্যয় প্রশমিত করার বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করার জন্য গ্রেসলি উপসাগরীয় দেশগুলোতে সফর শুরু করবেন।
কাজটি মে মাসের মাঝামাঝি শুরু করা দরকার, যাতে সেপ্টেম্বরের শেষে সম্পন্ন হয়। ওই সময় এই অঞ্চলে আবহাওয়ার ধরন পরিবর্তন হয় এবং সমুদ্র বৈরী হয়ে ওঠে এবং বাতাস বাড়ে। গ্রেসলি বলেন, এই ধরনের পরিস্থিতি জাহাজ ভেঙ্গে পড়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
গ্রেসলি সতর্ক করে বলেন, যদি তারা সময়মতো শুরু করতে না পারে তবে কাজটি কয়েক মাস পিছিয়ে যাবে, ততক্ষণে “টাইম বোমার উলটো গণনা শুরু হয়ে যাবে”।