অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ইউক্রেন যুদ্ধে যৌন সহিংসতা ও মানবপাচার বাড়ছে—জাতিসংঘ


ফাইল ছবি-ইউক্রেনের সংঘাত থেকে পালিয়ে আসা একটি মেয়ে পালংকা শহরের কাছে মোলদোভা-ইউক্রেন সীমান্ত চেকপয়েন্ট অতিক্রম করার পরে মলদোভার রাজধানী চিসিনাউগামী একটি বাসের ভেতর থেকে বাইরে তাকিয়ে আছে। ২ মার্চ ২০২২।

জাতিসংঘ সোমবার (১১ এপ্রিল) বলেছে, ইউক্রেনের নারী ও শিশুরা যৌন সহিংসতা, ধর্ষণ ও পাচারের উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে। সংস্থাটি এই ধরনের ঘটনা বাড়ছে বলেও মন্তব্য করেছে।

জাতিসংঘের নারী নির্বাহী পরিচালক সিমা বাহাউস নিরাপত্তা পরিষদকে বলেছেন, “ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এই অভিযোগগুলো স্বাধীনভাবে তদন্ত করা উচিত”। তিনি বলেন, “ভাড়াটে সেনাদের ব্যাপক উপস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে বিপুল বাস্তুচ্যুতি এবং ইউক্রেনের বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে প্রদর্শিত বর্বরতা সমস্ত সীমা অতিক্রম করেছে”।

সিমা বাহাউস বলেছেন, মানুষ ইউক্রেনের যুদ্ধ থেকে পালাতে আরও মরিয়া হয়ে ওঠার কারণে মানব পাচারের ঝুঁকিও বাড়ছে। বাহাউস সবেমাত্র মোলদোভার একটি মিশন থেকে ফিরেছেন।

তিনি বলেন, “অল্পবয়সী নারী ও সঙ্গীহীন কিশোরীরা একটি বিশেষ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে”। “আমি সকল দেশকে পাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে তাদের প্রচেষ্টা বাড়াতে আহ্বান জানাচ্ছি এবং পাচার প্রতিরোধে সহযোগিতার জন্য সমস্ত দেশগুলোর প্রশংসা করি”, তিনি বলেন।

সিমা বাহাউস মলদোভাসহ অন্য দেশগুলোকে সমর্থন করার জন্য দাতাদের প্রতি আহ্বান জানান, যাতে তারা সীমান্ত পারাপার নিরীক্ষণ করতে পারে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করতে পারে। উল্লেখ্য, দেশগুলো ৪ লাখেরও বেশি শরণার্থী গ্রহণ করেছে।

ইউক্রেনীয় নাগরিক সমাজের সংগঠন “লা স্ট্রাডা”র ইউক্রেনের সভাপতি কাতেরিনা চেরেপাখা পরিষদে বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলছিলেন। তিনি বলেন, রুশ সেনারা সহিংসতা ও ধর্ষণকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।

তিনি বলেন, তার সংগঠনের কাছে প্রায় এক ডজন নারী এবং মেয়ের বিশ্বাসযোগ্য সাক্ষ্য রয়েছে, যারা রাশিয়ার দখলে থাকা অঞ্চলে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

তিনি বলেন, বেঁচে থাকা ব্যক্তিরা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, তারা প্রচণ্ড ভয় পেয়েছেন এবং যৌন হামলা সম্পর্কে কথা বলতে বেশ অসুবিধার সম্মুখীনও হচ্ছিলেন।

অস্থির অবস্থায় শিশুরা

রাশিয়া ইউক্রেনে ২৪ ফেব্রুয়ারি আক্রমণের পর থেকে ৪৫ লাখেরও (৪.৫ মিলিয়ন) বেশি মানুষ ইউক্রেন থেকে পালিয়ে গেছে। তাদের প্রায় ৯০ শতাংশ নারী ও শিশু। আরও ৭১ লাখ (৭.১ মিলিয়ন) মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ বলছে, ৭৯ লাখেরও (৭ মিলিয়ন) বেশি ছাত্রছাত্রীর পড়াশোনা বন্ধ। এর মধ্যে ৫৭ লাখ (৫.৭ মিলিয়ন) স্কুলের এবং দেড় লাখ (১.৫ মিলিয়ন) ছাত্রছাত্রী উচ্চশিক্ষার।

জাতিসংঘ সবচেয়ে উদ্বেগজনকভাবে ১৪২ শিশু হত্যার বিষয়টি যাচাই করেছে। আরও ২২৯ জন আহত হয়েছে।

আনুমানিক ৩২ লাখ (৩.২ মিলিয়ন) শিশু যারা বাড়িতে আটকে রয়েছে, তাদের প্রায় অর্ধেকই পর্যাপ্ত খাবার না পাওয়ার ঝুঁকিতে থাকতে পারে। অবকাঠামোর ওপর আক্রমণের ফলে আনুমানিক ১৪ লাখ (১.৪ মিলিয়ন) মানুষ পানির সংকটে রয়েছেন এবং ৪৬ লাখ (৪.৬ মিলিয়ন) মানুষ কেবল সীমিত পরিমাণ পানি পাচ্ছেন।

জাতিসংঘে রাশিয়ার উপ রাষ্ট্রদূত পরিষদকে বলেছেন, তার সরকার “বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালায় না”। তিনি আবার বলেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ মস্কোর বিরুদ্ধে পরিচালিত “ব্যাপক” তথ্য যুদ্ধের অংশ।

ক্র্যামাটর্স্ক

অনেক সদস্য ক্র্যামাটর্স্ক রেলস্টেশনে শুক্রবার রকেট হামলার কথাও উল্লেখ করেছেন, যেখানে ৪ হাজার বেসামরিক লোককে সরানোর চেষ্টা করা হচ্ছিল। হামলায় অন্তত পাঁচ শিশুসহ ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। আরও ১০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। যাদের অনেকের অবস্থা গুরুতর।

রাশিয়ার দূত কোনো প্রমাণ উপস্থাপন ছাড়াই বলেন, এই হামলাটি “ইউক্রেনীয় নাৎসিদের” দ্বারা পরিচালিত একটি হঠকারী অভিযান।

সম্ভাব্য অপহরণের ঘটনা

ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত সের্গি কিসলিয়্যাস বলেছেন, “ইউক্রেনে নারী ও শিশুদের সঙ্গে যা ঘটছে তা ভীষণ ভয়াবহ”। “আমরা যদি ক্রেমলিনকে থামাতে না পারি, তাহলে আরও অনেক শিশু এতিম হয়ে যাবে। আরও অনেক মায়েরা তাদের সন্তান হারাবেন”।

তিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেন থেকে ১ লাখ ২০ হাজার শিশুকে অপহরণের অভিযোগ করেছেন।

বৈঠকের পর এ বিষয়ে জানতে চাইলে, ইউনিসেফের প্রতিনিধি ফন্টেইন বলেন, সংস্থাটি অপহরণের খবর শুনেছে এবং সেগুলোর কোনো প্রমাণ নেই। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

XS
SM
MD
LG