প্রায় ৪০টি দেশ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে একটি খসড়া প্রস্তাব আনার পরিকল্পনা করেছে, যা নিরাপত্তা পরিষদে পাঁচটি ভেটোধারী দেশের কাছে ভেটো প্রদানের ক্ষমতা ব্যবহারের জন্য জবাবদিহিতা দাবি করবে।
প্রস্তাবটি গৃহীত হলে নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী সদস্য—ব্রিটেন, চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া বা যুক্তরাষ্ট্র—পরিষদে কোনো প্রস্তাব গ্রহণে বাধা দিতে ভেটো প্রয়োগ করলে সাধারণ পরিষদের মুখোমুখি হওয়ার প্রয়োজন হবে।
লিচটেনস্টাইন নামের একটি ক্ষুদ্র দেশ এই পদক্ষেপের নেতৃত্ব দিচ্ছে। মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) দেশটি তার টুইটার অ্যাকাউন্টে বলেছে যে, সহযোগীরা প্রস্তাবটি তাড়াতাড়ি গ্রহণের প্রত্যাশায় আগামী সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে সাধারণ পরিষদে উপস্থাপন করবে।
সাধারণ পরিষদ সম্প্রতি একটি জরুরি বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করে এবং ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার আন্তর্জাতিক জনবিচ্ছিন্নতা তুলে ধরে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
সাধারণ পরিষদে দুটি ভোটে ইউক্রেনে আগ্রাসনের জন্য মস্কোকে নিন্দা জানানো হয়েছে এবং ইউক্রেনে মানবিক সাহায্যের অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। দুই ভোটেই রাশিয়া বাধ সাধে—একবার তার ভেটো দিয়ে এবং দ্বিতীয়বার ভেটো প্রদানের হুমকি দিয়ে।
গত সপ্তাহে তৃতীয় ভোটে সাধারণ পরিষদ জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে রাশিয়াকে বরখাস্ত করার অত্যন্ত বিরল একটি পদক্ষেপ নিয়েছে।
এক সপ্তাহ আগে নিরাপত্তা পরিষদে এক ভাষণে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্সকি পরিষদের ১৫ সদস্যকে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য তাদের প্রতিশ্রুতি পালন না করায় তিরস্কার করেন এবং তিনি জাতিসংঘকে সংস্কার বা বিলুপ্ত করার আহ্বান জানান।
যুক্তরাষ্ট্র লিচটেনস্টাইনের নেতৃত্বাধীন উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছে এবং দেশটি সহযোগী সদস্যের একটি।
রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড এক বিবৃতিতে বলেছেন, কখনো কখনো পাঁচটির মধ্যে একটি সদস্য সিদ্ধান্ত নেয় একটি নির্দিষ্ট প্রস্তাব আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে কি না এবং তার বিরুদ্ধে ভেটো দেয়, তবে তাদেরকে তাদের সিদ্ধান্তের জন্য জবাবদিহি করতে প্রস্তুত থাকতে হবে।
“দুর্ভাগ্যবশত নিরাপত্তা পরিষদের সকল সদস্য এই মনোভাব পোষণ করে না”, থমাস-গ্রিনফিল্ড বলেছেন। “আমরা বিশেষ করে গত দুই দশকে রাশিয়ার ভেটো সুবিধার অপব্যবহারের লজ্জাজনক উদহারণ দেখেছি। এর মধ্যে জর্জিয়ায় জাতিসংঘের একটি পর্যবেক্ষক মিশনকে ভেস্তে দিতে তার ভেটো, সিরিয়ায় জবাবদিহিতামূলক ব্যবস্থা ও রাসায়নিক অস্ত্র তদন্তে বাধা দেওয়া। এ ছাড়া রয়েছে ইউক্রেনের আকাশ থেকে ফ্লাইটএমএইচ-১৭ ভুপাতিত করার বিরুদ্ধে একটি ফৌজদারি ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা প্রতিরোধ করা এবং ইউক্রেনের বিরুদ্ধে তার অবাঞ্ছিত ও অন্যায্য যুদ্ধের জন্য প্রেসিডেন্ট পুতিনকে নিন্দা থেকে রক্ষা করা”।
রাশিয়া (এবং তার আগে সোভিয়েত ইউনিয়ন) ঘন ঘন ভেটো প্রদানের অধিকার ব্যবহার করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, সিরিয়ার যুদ্ধ সম্পর্কিত পদক্ষেপগুলো আটকাতে চীন একাধিকবার রাশিয়ার সঙ্গে যোগ দিয়েছে। ব্রিটেন ও ফ্রান্স ১৯৮৯ সাল থেকে একবারও ভেটো প্রয়োগ করেনি।