উত্তর কোরিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্র নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানালেও, বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন যে, বরং চলমান নিষেধাজ্ঞার ব্যাপক প্রয়োগের মাধ্যমেই উত্তর কোরিয়ার সরকারের ওপর পরমাণু কার্যক্রম থেকে পিছু হটতে চাপ সৃষ্টি বেশি কার্যকর হবে। উল্লেখ্য, পিয়ংইয়ং বর্তমানে তার পারমাণবিক সাফল্য উদযাপন করছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়া ধারণা করছে, পিয়ংইয়ং শুক্রবার দেশটির প্রতিষ্ঠাতা নেতা কিম ইল সুং–এর জন্মদিনে একটি পারমাণবিক পরীক্ষা চালাতে পারে। ২০১৭ সাল থেকে উত্তর কোরিয়া কোনো পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়নি।
বাবা কিম জং ইল ২০১১ সালে মারা যাওয়ার পর জুনিয়র কিম ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। ২০১২ সালে উত্তর কোরিয়ার ওয়ার্কার্স পার্টির প্রধান হওয়ার পর কিম দ্রুতই জাতীয় প্রতিরক্ষা কমিশনের প্রথম চেয়ারম্যান এবং তারপরে সর্বোচ্চ সরকারি সংস্থার চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত হন।
দেশটির ছয়টি পারমাণবিক পরীক্ষার চারটিই কিম তত্ত্বাবধান করেছেন। বাকি দুটি পরীক্ষা ২০০৬ ও ২০০৯ সালে কিম জং ইল পরিচালনা করেছিলেন।
উত্তর কোরিয়া তার অবস্থান পরিবর্তন করবে কি না সে বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সাবেক উপদেষ্টা এবং আমেরিকার কোরিয়া ইকোনমিক ইনস্টিটিউটের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ব্র্যাডলি ব্যাবসন বলেন, “আরও নিষেধাজ্ঞা যোগ করে ... মূলত কোনো পরিবর্তন আসবে না"।
তিনি ভয়েস অফ আমেরিকার কোরিয়ান সার্ভিসকে বলেছেন, “আমি মনে করি না এটি খুব বেশি চাপ বাড়াবে”।
উইলিয়াম ব্রাউন সিআইএর একজন প্রাক্তন বিশ্লেষক। তিনি উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি বলেন, বর্তমান নিষেধাজ্ঞাগুলো “ইতিমধ্যেই কঠোর, বেশ কঠোর”। তিনি আরও বলেন, “তারা ইতিমধ্যেই উত্তর কোরিয়ার বেশির ভাগ রপ্তানি ও উত্তর কোরিয়ার প্রচুর আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। তাই আমি মনে করি আরও নিষেধাজ্ঞা যোগ করা মূল বিষয় নয়। বরং ইতিমধ্যে যে নিষেধাজ্ঞাগুলো রয়েছে তার যথাযথ এবং অব্যহত প্রয়োগ মূল বিষয়”।
২৪ মার্চ উত্তর কোরিয়া আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) পরীক্ষা চালানোর পরে যুক্তরাষ্ট্র দেশটির বিষয়ে একটি নতুন জাতিসংঘ প্রস্তাবের আহ্বান জানিয়েছে।
জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড, ২৫ মার্চ আইসিবিএম পরীক্ষার প্রতিক্রিয়ায় অনুষ্ঠিত একটি সভায় বলেন, যুক্তরাষ্ট্র নতুন একটি জাতিসংঘ প্রস্তাব উত্থাপন করবে।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে পূর্ববর্তী মাসে উত্তর কোরিয়ার হোয়াসং-১৫ নামের আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের প্রতিক্রিয়ায় ২৩৯৭ রেজ্যুলেশন পাস করে। এই প্রস্তাবে উত্তর কোরিয়ার আমদানি ও রপ্তানি সুবিধাকে আরও সীমিত করে, বিশেষ করে দেশটির তেল আমদানির সর্বোচ্চ সীমা হ্রাস করে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক অ্যাটর্নি জোশুয়া স্ট্যানটন ২০১৬ সালে উত্তর কোরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ এবং নীতি প্রয়োগ আইনের খসড়া তৈরিতে সহায়তা করেছিলেন। তিনি বলেন, উত্তর কোরিয়ার তেল আমদানির পরিসীমা কমানো “একটি খারাপ সিদ্ধান্ত”।
২৩৯৭ রেজ্যুলেশন উত্তর কোরিয়ার পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির বার্ষিক সীমা ৫ লাখ ব্যারেল এবং অপরিশোধিত তেল ৪০ লাখ ব্যারেল নির্ধারণ করেছে।
উত্তর কোরিয়ার আইসিবিএম পরীক্ষার এক মাস আগে ২০১৭ সালের অগাস্টে পাস হওয়া জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ২৩৭১ রেজ্যুলেশনের মাধ্যমে দেশটির কয়লা, লোহা ও সামুদ্রিক খাবারের রপ্তানি নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু পিয়ংইয়ং প্রায়ই নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে এই পণ্যগুলো অবৈধ উপায়ে বিক্রি করে।
কোরিয়ান ইকোনমিক ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ডিরেক্টর ট্রয় স্টানগারোনও ভয়েস অফ আমেরিকার কোরিয়ান সার্ভিসকে বলেছেন, “আরও নিষেধাজ্ঞা যোগ করার চেয়ে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ”।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দেশটি আইসিবিএম পরীক্ষা করা সত্ত্বেও জাতিসংঘে একটি নতুন প্রস্তাব পেশ করা হলে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে প্রস্তাবটি পাস করতে নিরাপত্তা পরিষদের ভেটো প্রদানকারী স্থায়ী পাঁচ সদস্যের ঐকমত্যে পৌঁছানোর সম্ভাবনা কম।
নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে চীন ও রাশিয়া জানুয়ারিতে উত্তর কোরিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার প্রচেষ্টাকে বাধা দেয়। তারা উত্তর কোরিয়ার জন্য নিষেধাজ্ঞা প্রশমনেরও আহ্বান জানিয়ে আসছে।
[ভয়েস অফ আমেরিকার কোরিয়ান সার্ভিসের সাংবাদিক হাইওংজু পার্ক ও জিহা হ্যাম এই প্রতিবেদনে সাহায্য করেছেন]