রাশিয়ার বিরুদ্ধে ক্রমাগত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে আজারবাইজানের ওপর এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন দেশটির পর্যবেক্ষকেরা৷ উল্লেখ্য, মস্কোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে বাকুর।
কয়েকজন বিশেষজ্ঞের বিশ্বাস, রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আজারবাইজানের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক এবং দেশটির সঙ্গে লেনদেনকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে। রাশিয়া আজারবাইজানের প্রধান আমদানি সহযোগী এবং ২৫ লাখেরও (২.৫ মিলিয়ন) বেশি আজারবাইজানি অভিবাসী শ্রমিক রাশিয়ায় রয়েছেন।
অর্থনীতিবিদ নাতিগ জাফারলি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেছেন যে, রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আজারবাইজানের ব্যাংকিং খাতের জন্য সমস্যা তৈরি করবে এবং আন্তর্জাতিক অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে কিছু বাধা তৈরি করতে পারে। যেহেতু আজারবাইজানের রাশিয়ার সঙ্গে আলাদা অর্থ বিনিময়ের ব্যবস্থা নেই।
“যদি রাশিয়াকে আন্তর্জাতিক অর্থ বিনিময় ব্যবস্থা থেকে সম্পূর্ণভাবে বাদ দেওয়া হয়, তবে অন্ততপক্ষে, আজারবাইজান ও রাশিয়ার মধ্যে আন্তব্যাংক আর্থিক লেনদেন অসম্ভব হয়ে পড়বে”, জাফারলি বলেছিলেন।
লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্সের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ ও ভিজিটিং ফেলো গুবাদ ইবাদোগলুর মতে, রাশিয়ার অর্থনীতিতে দ্রুত পরিবর্তনের ফলে আজারবাইজান প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রীয় তেল তহবিল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
“রাশিয়ায় এসওএফএজেডের (আজারবাইজানের রাষ্ট্রীয় তেল তহবিল) বিনিয়োগ ৯০৩ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে”, তিনি বলেন। “এই বিনিয়োগগুলো বর্তমানে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত এসওএফএজেডের বিনিময় হারকে ক্ষতির দিকে নিয়ে যাবে৷ অন্য কথায়, অতিরিক্ত বাজেটের ব্যয় বৃদ্ধি পাবে, যা বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় মুল্য বৃদ্ধি করবে”। তিনি পরামর্শ দেন যে, এসওএফএজেড এবং অন্য আজারবাইজানীয় সরকারি সংস্থাগুলোকে রাশিয়ায় “অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের” আগে তাদের সম্পদ বিক্রি করতে হবে এবং তাদের বিনিয়োগ প্রত্যাহার করতে হবে।
এসওএফএজেড ছাড়াও, ইবাদোগলু বলেন, রাশিয়া আজারবাইজানের প্রধান আমদানি অংশীদার হওয়ায় রাশিয়ার সঙ্গে আজারবাইজানের বাণিজ্য সম্পর্ক প্রভাবিত হবে।
ইবাদোগলু বলেছেন, রাশিয়ার বর্তমান পরিস্থিতির কারণে সেখানে বসবাসরত আনুমানিক ২৫ লাখ আজারবাইজানির পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা প্রভাবিত হবে।
বেশির ভাগ আজারবাইজানীয় অঞ্চলে অভিবাসী শ্রমিকেরা পরিবারের আয় নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ইবাদোগলু বলেন, রাশিয়ার শ্রমবাজারে উত্তেজনা, সেই সঙ্গে উত্তেজনার ফলে উপার্জনের সুযোগ হ্রাস এবং অবমূল্যায়ন, রুবলের অবমূল্যায়নের ফলে আজারবাইজানে বৈদেশিক মুদ্রার আয় হ্রাস পাবে।
আজারবাইজানীয় আইনপ্রণেতা রাসিম মুসাবেওভ বৈদেশিক মুদ্রার আমদানি প্রভাবিত হবে বলে একমত প্রকাশ করেছেন৷
তবুও এই আইনপ্রণেতা বলেছেন যে, রাশিয়ার অর্থনৈতিক মন্দাও সুযোগ তৈরি করেছে। তিনি দাবি করেছেন, যেহেতু রাশিয়ার মধ্য দিয়ে যোগাযোগের রাস্তাগুলো সংরক্ষিত এবং যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের সীমানা বন্ধ রয়েছে, তাই আগে যে বাণিজ্য রাশিয়া, ইউক্রেন ও বেলারুশের মাধ্যমে পরিচালিত হতো, এখন প্রধানত বাকু-তিবিলিসি-কারস রুট দিয়ে যাবে।
[এই প্রতিবেদনটি ভয়েস অফ আমেরিকার আজেরি সার্ভিস থেকে নেওয়া হয়েছে]