যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, সলোমন দ্বীপপুঞ্জের সঙ্গে চীনের একটি নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষরের ঘোষণা সম্পর্কে তারা অবগত। এই চুক্তিটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ দেশটিতে চীনা সামরিক বাহিনী মোতায়েনের সম্ভাবনার আশঙ্কাকে নতুন করে চাঙ্গা করেছে।
“আমরা এই চুক্তির স্বচ্ছতার অভাব এবং এর প্রকৃতি নিয়ে ধোঁয়াশার কারণে উদ্বিগ্ন। এই চুক্তির সঙ্গে চীনের ছোট আঞ্চলিক দেশগুলোর সঙ্গে মৎস আহরণ, সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা, উন্নয়ন সহায়তা এবং এখন নিরাপত্তা অনুশীলনের মতো চিরায়ত অস্পষ্ট চুক্তির প্রস্তাবের মিল রয়েছে”, বলেছেন হোয়াইট হাউজের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের (এনএসসি) একজন মুখপাত্র।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) বেইজিংয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন যে, সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এবং সলোমন দ্বীপপুঞ্জের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমিয়া মানেলে চুক্তিটি স্বাক্ষর করেছেন।
বেইজিংয়ে চীনা কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়াকে “ইচ্ছাকৃতভাবে অতিরঞ্জিত উত্তেজনা” বৃদ্ধি করার জন্য দায়ী করেছেন এবং এ বিষয়ে অযাচিত হস্তক্ষেপ করার যেকোনো প্রচেষ্টাকে “নস্যাৎ করা হবে” বলে মন্তব্য করেছেন।
এই সপ্তাহে, ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য নিযুক্ত হোয়াইট হাউজের সমন্বয়ক কার্ট ক্যাম্পবেল এবং পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড্যানিয়েল ক্রিটেনব্রিংকের নেতৃত্বে প্রতিরক্ষা বিভাগ এবং ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের নেতৃস্থানীয় কর্মকর্তারা ফিজি, পাপুয়া নিউগিনি ও সলোমন দ্বীপপুঞ্জ “অঞ্চলের সঙ্গে স্থায়ী সম্পর্ক” গভীর করতে এবং “প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ ও ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চলজুড়ে সমৃদ্ধি, নিরাপত্তা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায়” যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারত্ব নিশ্চিত করতে ওই অঞ্চলে সফরে যাচ্ছেন।
সলোমন দ্বীপপুঞ্জ ও চীনের মধ্যে নিরাপত্তা চুক্তির প্রভাব আলোচ্যসূচিতে প্রাধান্য পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ফাঁস হওয়া চুক্তির খসড়া অনুযায়ী, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ সরকারের অনুরোধে চীন দেশটিতে সশস্ত্র পুলিশ ও সামরিক বাহিনী পাঠাতে পারে। চীনকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ দেশটির উপকূলে তার নৌবাহিনীর জাহাজ রাখার অনুমতি দেওয়া হতে পারে।
পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস সোমবার এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, “আমরা বুঝতে পারছি সলোমন দ্বীপপুঞ্জ ও পিআরসি (পিপলস রিপাবলিক অফ চায়না) সম্প্রতি স্বাক্ষরিত পুলিশ সহযোগিতার বিষয়ে একটি বিস্তৃত নিরাপত্তা-সম্পর্কিত চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছে”।
“সলোমন দ্বীপপুঞ্জ সরকারের মন্তব্য সত্ত্বেও, নিরাপত্তা চুক্তির বিশদ প্রকৃতি সলোমন দ্বীপপুঞ্জে চীনের সামরিক বাহিনী মোতায়েনের দরজা খুলে দেয়। আমরা বিশ্বাস করি এই ধরনের চুক্তি সলোমন দ্বীপপুঞ্জে অস্থিতিশীলতা বাড়াতে পারে এবং বিস্তৃত প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ অঞ্চলের জন্য উদ্বেগজনক নজির স্থাপন করতে পারে”।
সলোমন দ্বীপপুঞ্জের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের দীর্ঘদিনের আইন প্রয়োগ ও নিরাপত্তা সম্পর্ক রয়েছে। গত নভেম্বরে দাঙ্গা শুরু হওয়ার পরে দ্বীপের রাজধানী হোনিয়ারাতে ফিজি, নিউজিল্যান্ড ও পাপুয়া নিউগিনি থেকে অস্ট্রেলিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠানো হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের এই সফরের লক্ষ্য হবে সলোমন ও চীনের মধ্যে নিরাপত্তা চুক্তি কীভাবে বর্তমান আঞ্চলিক নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে সে সম্পর্কে সকলের দৃষ্টিভঙ্গি এবং উদ্বেগ নিয়ে আলোচনা করা।
এপ্রিলের শুরুতে, সলোমন দ্বীপপুঞ্জের প্রধানমন্ত্রী মানাসেহ সোগাভারে বলেছিলেন যে, তার দেশ চীনকে সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের অনুমতি দেবে না। চীনও দেশটিতে সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের কথা অস্বীকার করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক কর্মকর্তারা বলেছেন, চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রকে এশিয়া-প্রশান্ত অঞ্চলে তার সমর্থন বাড়াতে হবে।
[ভয়েস অফ আমেরিকার ম্যান্ডারিন সার্ভিস এবং প্যাটসি উইদাকুসওয়ারা এই প্রতিবেদনে সাহায্য করেছেন]