ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্সকি শুক্রবার (২২ এপ্রিল) একজন রুশ জেনারেলের মন্তব্যের সূত্র ধরে বলেন যে, মস্কো ইউক্রেনে সফল হলে অন্য দেশে আক্রমণ করবে। ওই জেনারেল বলেছেন যে, রাশিয়ার লক্ষ্য হলো সমগ্র দক্ষিণ ও পূর্ব ইউক্রেন দখল করে প্রতিবেশী মলদোভার একটি বিচ্ছিন্ন প্রদেশের সঙ্গে সংযুক্ত করা।
“এর থেকে প্রমাণিত হয় আমি ইতিমধ্যে একাধিকবার যা বলেছি তা সত্য যে, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন একটি সূচনা মাত্র”, জেলেন্সকি শুক্রবার সন্ধ্যার ভাষণে বলেন।
তিনি বলেন, শুক্রবার প্রথমার্ধে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় সামরিক জেলার ডেপুটি কমান্ডার রুস্তম মিনেকায়েভের মন্তব্য প্রমাণ করে, রাশিয়া শুধু ইউক্রেন দখল করেই নিরস্ত হবে না।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা মিনেকায়েভকে উদ্ধৃত করে বলেছে যে, মস্কো ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সঙ্গে সংযোগের জন্য একটি স্থল করিডোর সৃষ্টি করতে ইউক্রেনের পুরো পূর্ব দনবাস অঞ্চল দখল করতে চায় এবং দেশটির সমগ্র দক্ষিণ অঞ্চল থেকে সুদূর পশ্চিমে রাশিয়া-অধিকৃত মলদোভার বিচ্ছিন্ন অঞ্চল পর্যন্ত দখলে নিতে চায়। এর অর্থ হামলার পরিসীমা মোলদোভার সীমান্ত পর্যন্ত প্রসারিত করা।
জেনারেলের মন্তব্যে “গভীর উদ্বেগ” প্রকাশ করতে মলদোভা শুক্রবার রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র জালিনা পোর্টার রুশ জেনারেলের বিবৃতির বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন, কিন্তু বলেছেন, ওয়াশিংটন দৃঢ়ভাবে মোলদোভার সার্বভৌমত্বকে সমর্থন করে।
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক বলেছে, রাশিয়ার জেনারেলের মন্তব্য থেকে প্রমাণিত হয়, তাদের আগের দাবি, তাদের কোনো আঞ্চলিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই, সেটা সত্য নয়।
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক টুইটারে বলেছে, “তারা এখন লুকিয়ে কিছু করছে না”। এতে আরও যোগ করে বলা হয়েছে, রাশিয়া “স্বীকার করেছে যে যুদ্ধের 'দ্বিতীয় পর্বের' লক্ষ্য কল্পনাপ্রসূত নাৎসিদের ওপর বিজয়লাভ নয়, বরং পূর্ব ও দক্ষিণ ইউক্রেনের দখল করা। সাম্রাজ্যবাদে যেমনটা হয়”।
সামরিক সভা
পেন্টাগন শুক্রবার বলেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করার জন্য ২০টিরও বেশি দেশের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা এবং সামরিক নেতাদের সাথে আগামী সপ্তাহে জার্মানিতে একটি বৈঠক করবেন।
পেন্টাগনের প্রেস সেক্রেটারি জন কারবি বলেছেন যে, প্রায় ৪০টি দেশকে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল এবং এখনো অনেকে সাড়া দিচ্ছে।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার রামস্টেইন বিমান ঘাঁটিতে নেটো এবং নেটোর বাইরের দেশগুলোর উপস্থিতিতে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।
কূটনৈতিক প্রচেষ্টা
শুক্রবার কূটনৈতিক কার্যক্রমে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন ওয়াশিংটনে ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শ্যামিহালের সঙ্গে দেখা করেছেন। পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে যে, ব্লিংকেন “ইউক্রেনকে রাশিয়ার নৃশংস এবং অযৌক্তিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সফলভাবে আত্মরক্ষা করতে সাহায্য করার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেছেন”।
জাতিসংঘ শুক্রবার ঘোষণা করেছে যে, মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মঙ্গলবার মস্কোতে পুতিনের সঙ্গে দেখা করবেন। তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং আলোচনার মধ্যে মধ্যাহ্নভোজও সারবেন।
এরপর বৃহস্পতিবার গুতেরেস ইউক্রেনে যাবেন, যেখানে তিনি জেলেন্সকি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবার সঙ্গে দেখা করবেন। জাতিসংঘ বলেছে যে, তিনি ইউক্রেনীয়দের মানবিক সহায়তা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করতে জাতিসংঘের সংস্থার কর্মীদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন।
জাতিসংঘের প্রধান এই সপ্তাহের শুরুতে পুতিন ও জেলেন্সকিকে চিঠি লিখে ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করার জন্য বৈঠকের অনুরোধ করেন।
গুতেরেস এই সপ্তাহে ইউক্রেন ও রাশিয়ায় উদযাপিত অর্থোডক্স ইস্টারের প্রাক্কালে চার দিনের মানবিক যুদ্ধবিরতিরও আবেদন করেছিলেন। এখন পর্যন্ত, সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
মস্কোতে শুক্রবারের এক সংবাদ সম্মেলনে ল্যাভরভ বলেন, ইউক্রেনে যুদ্ধ শেষ করার আলোচনা স্থবির হয়ে পড়েছে, কারণ কিয়েভ মস্কোর সর্বশেষ প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি।