অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

"ওয়ার্ল্ড কমিউনিকেশনটা এখন ৫টা বা ৬টা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির হাতে"


এম জে আকবর
এম জে আকবর

সাক্ষাৎকারঃ এম জে আকবর

উপমহাদেশের খ্যাতিমান সাংবাদিক, কলামিষ্ট, লেখক এম জে আকবর বলছেন, "পুরো ওয়ার্ল্ড কমিউনিকেশনটা এখন ৫টা বা ৬টা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির হাতে। যারা নিজের প্রফিট ছাড়া কিছু বুঝে না।" বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক প্রসঙ্গে ভারতের এই সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, "বাংলাদেশ এবং আমার দেশ ভারতের বন্ধুত্ব ইজ সাসটেইনেবল। ক্রেডিবল। কেননা ইট ইজ বিল্ট অন শেয়ার্ড ভ্যালু। এই ভ্যালুজ মানে আমার ডেমোক্র্যাসি। এই ডেমোক্র্যাসি উইক হলে এই রিলেশনশিপটাও ভ্যারি করবে।" এছাড়াও নিজের বেড়ে ওঠা, সাংবাদিক জীবন ও অন্যান্য বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন ভয়েস অফ অমেরিকার সঙ্গে। ভয়েস অফ আমেরিকার পক্ষে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন নঈম নিজাম।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ এম জে আকবর। নামটাই যথেষ্ট এই উপমহাদেশের জন্য। রাজনীতিবিদ। বিখ্যাত সাংবাদিক। ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। ভারতে গুরুত্বপূর্ণ অনেক পত্রিকায় সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করলেন দীর্ঘ সময়জুড়ে। আপনি সাংবাদিক ছিলেন। সংবাদপত্রের জগতে কিংবদন্তি ছিলেন। রাজনীতিতে অনেক বড় অবস্থানে ছিলেন। মন্ত্রী ছিলেন। এমপি ছিলেন। আমি শুরুটা করতে চাই একদম ছোটবেলা দিয়ে। আপনার জন্ম হুগলিতে। এই অংশটা দিয়ে আমরা সামনে যাব।

এম জে আকবরঃ জন্ম আমার পশ্চিমবঙ্গের হুগলিতে একটা জুটমিলে। ভিক্টোরিয়া জুটমিল তার সামনে। আমার দাদাবাড়ি। উনি (দাদা) প্রথম বয়সে, অর্থাৎ ১০-১১ বছর বয়সে উনার যেখানে গ্রাম ছিল, সেটা বড় একটা ক্যানভাস। আমাদের গ্রাম থেকে দুই মাইল দূরে জুটমিল। উনি তবে শুনেছিলেন ভিক্টোরিয়া জুটমিলে আমাদের গ্রাম থেকে কয়েকজন ওয়ার্কার ছিল। তিনি ভিক্টোরিয়া জুটমিল খুঁজতে বের হন। জুটমিলে প্রথম শিফট আরম্ভ হতো ৪টার সময়। উনি পৌঁছলেন। জুটমিলের ওইখানে উনি বেহুঁশ হয়ে পড়েছিলেন। তখন সেখানে চায়ের দোকান ছিল। চায়ের দোকানের মালিক এলেন দেখলেন একটা ফ্যামিস্ট ছেলে (দাদা) ওখানে পড়ে রয়েছে। উনি তখন তাকে চা-বিস্কিট দিলেন। ওই জায়গায় তিনি পরিবার নিয়ে থাকতে শুরু করেন। উনি (দাদা) উদ্যোক্তা ছিলেন। দোকান করলেন। নানা কাজ করতেন। তবে উনি নিজের ছেলেকে স্কুলে পাঠালেন। মানে আমার বাবাকে। তারপর আমার বাবা যখন মানে আমরা প্রথম জেনারেশন। চন্দনগরের মধ্যে ফ্রেঞ্চ কলোনি ছিল। সেখানে ইংলিশ স্কুল ছিল সেন্ট জোসেফ। আমরা প্রথম জেনারেশন, আমরা ইংরেজিতে সেখানে পড়লাম। তারপর বোর্ডিং স্কুলে গেলাম। কলকাতা বয়েজ স্কুলে গেলাম। এক সময় দেখতে দেখতে স্কুলটা শেষ হয়ে গেল। তারপর আমি প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াশোনা করি। ওখানে অ্যাডমিশন টেস্ট দিয়ে ঢুকতে হতো। পাস করে গেলাম। ইংলিশ লিটারেচার পড়তাম।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ ক্যারিয়ার কি সাংবাদিকতায় শুরু?

এম জে আকবরঃ আমি লিখতে আরম্ভ করি স্কুল থেকে। প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াশোনা করেছি। আমি লেখা পাঠাই। লেখা ছাপা হলো। জানত না তখন লেখা কে পাঠিয়েছে। ওরা একটা কাগজ বের করেছিল। তার মধ্যেই লিখতাম। পকেটমানি ছিল কদাচিৎ। বাড়ি থেকে যা পেতাম অতটুকুই। তবে আমার মনে আছে লেখালেখি করে প্রথম যখন ৫০ টাকার একটা চেক পেলাম আমার বাবা বিশ্বাস করলেন না। কোনো দিনও তিনি ওই চেকটা ব্যাংকে দিলেন না। তিনি পকেটে রাখতেন। ১৯৬৬ সালে ৫০ টাকা অনেক টাকা। উনি ঠিকই ছিলেন। তিনি বলতেন আমি যদি কাউকে বলি যে আমার ছেলে ৫০ টাকার চেক পেয়েছে কেউ বিশ্বাস করবে না। চেকটা উনি সঙ্গে রাখতেন। তবে অফকোর্স কলেজের পর আমি একটা বড় কোম্পানিতে চাকরি শুরু করি। আসলে এর আগেও আমি অন্য একটা প্রতিষ্ঠানে কাজ করি। আমি ওখানে চাকরি পেয়েছিলাম। স্টার্টিং সেলারি তখন ১৩৫০ টাকার মতো ছিল। আমি একটু পাগলও ছিলাম। সেই চাকরিটা ছেড়ে আমি তখন টাইমস অব ইন্ডিয়ায় জয়েন করি। ২৮০ টাকা মাইনে পেতাম তখন।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ এটা কত সালে?

এম জে আকবরঃ এটা ১৯৭১ সালের ঘটনা। বেতন ছিল ২৮০ টাকা। চার বছর কলেজের পর স্ট্রাগল গেল। আমাদের দেশে খুব খারাপ একটা সময় ছিল। একটা নকশাল ভায়োলেন্স পুরো বেঙ্গল এবং বেঙ্গলের বাইরে চলছিল। আপনারা তখন এই বাংলাদেশে চমৎকার সাহস দেখিয়ে লড়াই করেছিলেন।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ চারু মজুমদারের অনুসারীরা দুই জায়গাতেই সক্রিয় ছিল।

এম জে আকবরঃ ​ হুম। বাংলাদেশে তখন লিবারেশন দেখলাম আমরা। দূর থেকেই দেখেছি। সে সময় আমি টাইমস অব ইন্ডিয়ায় লিখতে আরম্ভ করেছি। জয়েন করেছি। তখন স্টোরি করেছিলাম। সে সময় থেকেই আমি পুরো বাংলাদেশের ইতিহাস দেখেছি।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ টাইমস অব ইন্ডিয়ার পরের কাগজ কোনটা?

এম জে আকবরঃ ইলাস্ট্রেটেড অব ইন্ডিয়ার এডিটর আমাকে বললেন তুমি আমার ম্যাগাজিনে কাজ কর। তুমি লিখতে জান। ওই ম্যাগাজিনে আমি এক দুই বছরের মধ্যে ৩০ থেকে ৪০টা কাভার স্টোরি করলাম। নামটাও একটু বিখ্যাত হলো। লোকজন চিনতে শুরু করল। সবচেয়ে বড় যে ব্রেকটা আমি পেলাম অভিক সরকারের কাছ থেকে, আনন্দবাজারে। কথা ছিল একটা সানডে ম্যাগাজিন বের হবে। আমি বললাম ‘না’। আমি কাগজের সানডে ম্যাগাজিন করব না। আমি একটা ইন্ডিপেন্ডেন্ট পলিটিক্যাল পত্রিকা করব। যা হয়... ওই যে জাওয়ানির নেশা। হাঃ হাঃ হাঃ। আমাকে বুঝালো যে চাকরি পেয়ে গেছি নিয়ে নাও। কিন্তু আমি বললাম না আমি ইন্ডিপেন্ডেন্ট করব। আর কলকাতা থেকে কোনো ইন্ডিপেন্ডেন্ট ম্যাগাজিন কখনো চলেনি। কিন্তু এই সানডেটা এক বছরের মধ্যে সবার কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠল। কয়েক বছরের মধ্যেই চার লাখ কপি বিক্রি হতো সানডে। এটা ছিল একটা রেকর্ড। ইট ইজ অ্যা রেকর্ড।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ আপনিই সম্পাদক ছিলেন সে সময়?

এম জে আকবরঃ আমিই ফাউন্ডার এডিটর সানডের। তবে সানডেটা সাকসেস হয়ে গেল। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল কেননা ৭৭ সালে আমরা ইমার্জেন্সি থেকে বের হলাম।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ কত সালে আপনি প্রথম সম্পাদক হয়েছিলেন?

এম জে আকবরঃ আমি সম্পাদক হয়েছি তখন আমার বয়স ২৪ বছর।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ অর্থাৎ ২৪ বছর বয়সে আপনি সম্পাদক হলেন। বিখ্যাত সানডে কাগজে। এটা আপনার হাত দিয়ে বিকশিত হয়ে বিখ্যাত হলো।

এম জে আকবরঃ তখন সানডেটা বিখ্যাত ছিল না। পরবর্তীতে বিখ্যাত হয়েছিল। সানডে ছিল সবচেয়ে বড় পলিটিক্যাল ম্যাগাজিন। সমগ্র ইন্ডিয়ায় বিখ্যাত হয়েছিল। তখন জনতা পার্টি ছিল। সেটা বিট করতাম। সব বড় বড় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ইন্টারভিউ সানডেতে ছাপা হতো।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ এডিটিং এবং রিপোর্টিং তো আপনি নিজেই করতেন?

এম জে আকবরঃ হ্যাঁ রিপোর্টিং এবং এডিটিং আমি নিজেই করতাম। আমার রিপোর্টগুলো নিয়ে একটা কালেকশন বের হলো তখন।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ সানডের পরের কাগজ?

এম জে আকবরঃ একটা কথা বলি বাংলাদেশে এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সানডের জন্য উনার ইন্টারভিউ আমি করেছিলাম।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ উনি দিল্লীতে তখন গেলেন নাকি বাংলাদেশে আপনি তখন এলেন?

এম জে আকবরঃ হ্যাঁ তার আরও পরে। আমি এখানে বলতে চাইছি এই যে আমরা জার্নালিজম করেছি সেটার একটা ইমপেক্ট ছিল। তখন প্রিন্ট জার্নালিজম একটা মানে রাখত। তখন সানডে থেকে ডেইলি কাগজে মুভ করলাম। ডেইলি কাগজে ইনভেস্টমেন্টসহ আরও অনেক কিছু লাগে। টেলিগ্রাফ ছিল আনন্দবাজারের একটা ফ্ল্যাগশিপ।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ আপনি ফাউন্ডার এডিটর ছিলেন যখন টেলিগ্রাফের দায়িত্ব নিলেন? টেলিগ্রাফকেও আপনি খুব জনপ্রিয় কাগজে পরিণত করলেন।

এম জে আকবরঃ হয়তো জিওগ্রাফিক্যালি এটা রিচ না হলেও এটাই সত্য যে এডিটোরিয়াল হিসেবে এটি ন্যাশনাল কাগজ। রাজীব গান্ধীর সঙ্গে বন্ধুত্ব হলো।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ এই বন্ধুত্ব কখন থেকে হলো?

এম জে আকবরঃ সানডে থেকেই আমার সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে রাজীব গান্ধীর। আচ্ছা একটা বিষয় হলো ইমার্জেন্সিতে যারা রিফরমেবল সে তো মিসেস ইন্দিরা গান্ধী আর সোনিয়া গান্ধী। কিন্তু রাজীব গান্ধীকে কেন টার্গেট করা হলো। রাজীব গান্ধীর সঙ্গে সখ্য ছিল অনেক। উনি যখন প্রধানমন্ত্রী হলেন তখন আমাকে বারবার বলতে থাকেন যে, রাজনীতিতে তোমাকে আসতে হবে, তোমাকে আসতে হবে। ততদিনে আমি কিন্তু টেলিগ্রাফ আরম্ভ করেছি। তার কথা ফেলতে পারি না।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ ১৯৮৯ সালে এমপি হলেন? কংগ্রেস থেকে...

এম জে আকবরঃ হ্যাঁ। সে সময় আমি এমপি হলাম। রাজীব গান্ধীর থেকে। কিন্তু তা বেশি দিন চলল না। কারণ আমি ১৯৯২ তে যা কিছু হলো তা দেখে রাজনীতি ছেড়ে দিলাম। মেনে নিতে পারলাম না।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ রাজীব এবং ইন্দিরা গান্ধী দুজনকে আপনার কাছ থেকে দেখা। দুজনকে নিয়ে মূল্যায়নটা কী আপনার?

এম জে আকবরঃ ইন্দিরা গান্ধী তো খুবই বড় রাজনৈতিক নেতা ছিলেন। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু ইন্দিরা গান্ধী একটা পলিটিক্যাল ভিউ পলিটিক্যাল ফিলোসফিতে ব্যবহার করতে আরম্ভ করলেন। ইমার্জেন্সি চলল। ইমার্জেন্সির পর আমাদের কোনো প্রশ্নই ছিল না যে আমরা সেন্সরশিপ একসেপ্ট করব।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ তখন তো আপনি পত্রিকায় ছিলেন। সাংবাদিকতায় নানা নিষেধাজ্ঞা বা সেনসেটিভ ছিল কঠিনভাবে।

এম জে আকবরঃ আমার এখনো মনে আছে যে, তখন আমি ধারণা করেছিলাম ইন্দিরা গান্ধী ইলেকশনে হারবেন।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ তিনি হেরেছিলেন। এমনকি কারাগারে যেতে হয়েছিল।

এম জে আকবরঃ এটাও সত্যি। ১৯৮০ সালে উনি আবার ব্যাক করলেন। তখন মিসেস গান্ধী জিতলেন। ধারণাই করতে পারেনি অনেকে যে এত দ্রুত উনি ফিরতে পারবেন। এজন্য সবার সবসময় মনে রাখা উচিত কোনো কিছু ধারণা করে ফেলা এত সহজ নয়।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ তার মানে আমরা জার্নালিস্টরা যেটা প্রেডিকশন করি সেটা সব সময় বাস্তবায়িত হয় না।

এম জে আকবরঃ এটা সবার স্বীকার করা উচিত। আমাদের হীনমন্যতা দূর করা উচিত।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ ৯৪-এ আপনি যখন রাজনীতি ছাড়লেন আবারও মিডিয়ায় ব্যাক করলেন পুরোপুরি।

এম জে আকবরঃ তখন আমি এশিয়ান এইজে। এটা ভারতের প্রথম ইন্টারন্যাশনাল কাগজ। টেলিগ্রাফে আমি একটা জিনিস করেছিলাম। সেটা হলো প্রথম আমি কম্পিউটারাইজড কম্পোজ সিস্টেম চালু করি। তখন সেটা খুব কঠিন ছিল। আনন্দবাজারে স্ট্রাইকও হয়েছিল। সবাই নতুন প্রযুক্তিকে গ্রহণ করতে পারলেন না। কিন্তু একটা প্রযুক্তির ওপর ভরসা-বিশ্বাস ছিল না। যখন আমি প্রমাণ করে দেখালাম যে, প্রযুক্তি আপনার সময় বাঁচাবে। কাজ সহজ করে দেবে। অনেক দিক থেকে সবাই উপকৃত হবে।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ আপনার এশিয়ান এইজ কাগজ লন্ডন এবং ভারতে একসঙ্গে প্রকাশ হতো। আপনি তো মালিকানায়ও ছিলেন।

এম জে আকবরঃ হ্যাঁ। আমার শেয়ার ছিল। আমার মেধা এখানে বিনিয়োগ হলো।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ মেধার বিনিয়োগ একটা বড় বিনিয়োগ।

এম জে আকবরঃ অবশ্যই। মেধার বিনিয়োগ একটা বড় বিনিয়োগ। এরপর শেষে যা হয়। কোনো কিছুই তো চিরস্থায়ী নয়। বেরিয়ে গেলাম। এরপর জার্নালিজমে দুই বছর ইন্ডিয়া টুডে তে ছিলাম।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ এটা কাগজের জনপ্রিয় ধারা ছিল। এরপর কী হলো।

এম জে আকবরঃ ইন্ডিয়া টুডের পর আরও অনেক কাজ করেছি। লেখালেখি করেছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই লোকটি আমার মনে হয় দেশের জন্য কিছু করতে পারে। তাই এর প্রতি আমার আগ্রহ ছিল। কিন্তু যে আমি ইভ্যুলেশন অফ জার্নালিজম দেখছি...এই এত বছরের অভিজ্ঞতায়। আমি সত্যি বলি আমার কোনো ইচ্ছে নেই। সবাই বলে যে, আমার সময়ে একটা গোল্ডেন এইজ ছিল। আর এখন সব কিছুই খারাপ। এই ধারণা খুবই ভুল। এখন যে ইনোভেশন হচ্ছে বা ওটিটি প্ল্যাটফরম হচ্ছে আমার তো হিংসে হয়। কারণ আমাদের সময় এসব ছিল না। কিন্তু যখন আমরা এডিটর ছিলাম সত্তর কিংবা আশির দশকে অথবা নব্বই দশকে তখন একটা জিনিস ছিল সেটা হয়তো এখন অতো নেই। আমরা একটা পড়াশোনা করে জ্ঞান অর্জনের ক্ষুধা ছিল। একটা গভীরতার ছাপ ছিল। যেটা এখনকার জেনারেশনের মধ্যে অতো নেই। আর যদি বলেন টেলিভিশন জার্নালিজমের প্রসঙ্গ। টেলিভিশন জার্নালিজম জনপ্রিয় হতে পারে কিন্তু সেখানে একটাই ডাইমেনশন দেখিয়ে চলে যাচ্ছে।

ভয়েস অফ আমেরিকা: কোনো কিছুর গভীরতায় যেতে পারছে না? টিআরপি পিছনে ছোটার কারণেই কী এটা হচ্ছে?

এম জে আকবরঃ টিআরপি নিয়ে আমার কোনো প্রবলেম নেই। আমি সার্কুলেশনের জন্য অনেক কিছুই সেক্রিফাইস করে দেব। এখন যে জনপ্রিয় টেলিভিশন কয়েকটা চ্যানেল রয়েছে তারা ওয়ার্ল্ড রেসলিং ফেডারেশনের মতো হয়ে গেছে। কুস্তি করা ছাড়া আর কিছুই করে না। এটা মোটেই ঠিক হচ্ছে না।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ সোশ্যাল মিডিয়ার একটা অবস্থান, টেলিভিশন মিডিয়ার একটা অবস্থান, আবার দেখা যাচ্ছে প্রিন্ট মিডিয়ার অবস্থান আগের চেয়ে ম্লান হয়ে যাওয়া। সব মিলিয়ে আপনি প্রিন্ট মিডিয়ার ভবিষ্যৎটা কী মনে করেন? অনেক কাগজ আপনার হাতে গড়া।

এম জে আকবরঃ প্রসেস অব কান্টেন্ট ইজ লেস ইন্টারেস্টিং টু মি দ্যান এনিথিং। প্রোসেস অব কন্টেন্ট এক সময় প্রিন্টিং প্রেস ছিল। এক সময় রেডিও এলো। এরপর টেলিভিশন এলো। এখন ইন্টারনেট এসেছে। কোনো মিডিয়া তার আগের মিডিয়াকে পুরোপুরি রিপ্লেস করতে পারেনি। এখনো রেডিও আছে। কিন্তু কন্টেন্টের গভীরতা বা অ্যানালাইসিস নেই। অথচ এখন আগের চেয়ে কাজ করার স্কোপ বেশি। যেহেতু এখন ইন্টারনেট রয়েছে। আপনি যদি এটা দিয়ে ১৪০ ক্যারেক্টারে জার্নালিজম করতে চান এক্ষেত্রে জার্নালিজমটা পুরোপুরি ধ্বংস, পুরোপুরি নষ্ট। এখানেই আমার আপত্তি। এটাই আমার অবজারভেশন। এই যে একটা ক্লেভার অপিনিয়ন। কিন্তু সবাই চালাচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ার সবচেয়ে বড় যে দোষ এটা ডিপলি প্রোবলেমেটিক। এটা কত দিন একসেপ্ট হবে কী হবে না আমি জানি না। কিন্তু এটা একসেপ্ট করা উচিত নয়। কন্টেন্ট ইউথআউট এডিটিং চলছে। যার যা খুশি করছে। এখন কন্টেন্ট উইথআউট একাউন্টিবিলিটি। কন্টেন্ট উইথআউট একন্টেবিলিটি টু ল’। চারপাশ দিয়ে ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানিজ। তারা পুরো এই কমিউনিকেশন ওয়ার্ল্ডের উপরে নিয়ন্ত্রন করছে... এখন যে কানুন তা প্রাইভেট কো-অপারেশনস। এখন ৫টা বা ৬টা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির হাতে। যারা নিজের প্রফিট ছাড়া কিছু বুঝে না। ওরা আর কিছুই দেখে না। আমরা তো এখন দেখছি। কয়েকটা দেশের জেনারেল ইলেকশনে। আমরা দেখছি সুপার পাওয়ারের ওপর ওদের কত প্রভাব।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ আমেরিকার মতো দেশেও ওরা প্রভাব খাটাচ্ছে আর আমাদের এই ভূখণ্ডে তো আছেই। এটা একটা হুমকি?

এম জে আকবরঃ আমি সেটা জানি না। ওরা তো আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করছে। বলা উচিত কি? বলা উচিত না। ওরা তো আপনাকে ক্যানসেল করে দেবে। যদি আপনি একটা বক্তৃতা দিতে যান। আমি সাইন্টিস্ট নই। কিন্তু আমি জার্নালিস্ট হিসেবে এটা জানি এরা তো একটা নতুন রকমের প্রাইভেট সেক্টর সেনসেশন। এর ডেমেজ আসলে কত হবে এটা দেখা উচিত।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ আপনি কি মনে করেন যে, গুজব ছাড়ানোর জন্য একটা বড় ভূমিকা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা দেখতে পাই। যেটা সমাজকে অনেক ক্ষতি করছে। মানুষের মনস্তাত্ত্বিক সংকট তৈরি করছে। এর থেকে উত্তরণের পথটা কী?

এম জে আকবরঃ অ্যাবসলুটলি। গুজব অ্যালিগেশন যা ইচ্ছে। আমি বলব সোশ্যাল হার্মিংয়ের একটা জায়গা তৈরি হচ্ছে। দ্যাট কেন বি ভেরি ডেঞ্জারাস। কেননা এসব আউট অব কন্ট্রোল। কোনো জুডিশিয়ারি এটা কন্ট্রোল করতে পারছে না। গভর্নমেন্ট এটা কন্ট্রোল করতে পারছে না। সমাজ এটা কন্ট্রোল করতে পারছে না।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ বাংলাদেশ বা ভারত কিংবা এই উপমহাদেশে পরিবর্তন কিছু হচ্ছে বলে আপনার মনে হয়? আপনার সময়ের জার্নালিজম আর এখনকার জার্নালিজম আপনি কীভাবে দেখেন বা মূল্যায়ন করেন?

এম জে আকবরঃ এভরি এরা ফাইন্ডস ইট অন চ্যালেঞ্জ। লেটেস্ট টেকনোলজি...সেটা অলওয়েজ প্রোগ্রেস। সেটা মানতে হবে। কিন্তু প্রোগ্রেসটা কোন ডিরেকশনে যাচ্ছে সেটাও একটু দেখা প্রয়োজন। ভাবা উচিত। যেমন আগে আমরা খুব সুন্দর কাবাব খেতাম। প্রোগ্রেসের মানে কি আমি আমাদের হামবার্গার খেতে হবে। হাঃ হাঃ হাঃ ফলে... (নতুনকে গ্রহণ কর নো প্রবলেম)। কমিউনিকেশন প্লেসে এটা কী ভালো? ইনফরমেশন কেন নট বিকাম থার্স্টি। চট করে দাও। একজন ভালো শেফ কিন্তু সময় নিয়ে রান্না করে।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ নতুন প্রজন্মের জন্য আপনার পরামর্শ কী সংবাদ কর্মীদের জন্য।

এম জে আকবরঃ নতুন প্রজন্মের জন্য পরামর্শ হলো একটা জিনিস সেটা সাংবাদিক হোক কিংবা রাজনৈতিক হোক যেখানেই হোক যেদিন আপনার ইন্টিগ্রেটি কম্প্রোমাইজ করতে হবে, সেদিন জার্নালিজম থাকবে না। আমি এই বলছি না যে ভুল হবে না। ভুল হবে। কিন্তু ভুলটা অনেস্টলি হতে হবে। পয়সা দিয়ে ইনফরমেশন বিতরণ করা সেটা হবে না। কখনো হাওয়া আসবে কখনো তুফান আসবে কখনো ঝড় হবে কখনো বৃষ্টি হবে। কিন্তু আমাদের ইমানটা অর্থাৎ ইন্টিগ্রেটিটা ঠিক থাকলে বাকি সবই হবে।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ রাজনীতি করলেন সংবাদপত্রে কিংবদন্তিতুল্য অবস্থানে ছিলেন। লেখালেখি করেন, বই লেখেন। কোথায় বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। নাকি সব আলাদা আলাদা?

এম জে আকবরঃ সবাই আমার ছেলে। কোন ছেলেকে বেশি ভালোবাসি। সবাইকে ভালোবাসি। যদি আমি ভালো না বাসতাম তবে তো আমি যেতামই না। সে পথে হাঁটতামই না। তবে পাবলিকরা মনে করে এই লাইফ খুব গ্ল্যামারাস। আসলে গ্ল্যামারাস না। খুবই টাফ লাইফ। কিন্তু যে প্রাইস অনেক সময় এমন লাইফে পে করতে হয় এটা ভেরি ভেরি হার্ড। যদি আপনি পরিবর্তন চান যদি আপনি চেঞ্জের দিকে চেষ্টা করেন লটস অফ প্রোসেস দেয়ার টু ড্রিম বিকাম ট্রু। সবকিছুর সঙ্গে যুদ্ধ করা যায় কিন্তু কপালের সঙ্গে যুদ্ধ করা যায় না। হাঃ হাঃ হাঃ। হ্যাঁ একটা কথা বলতে পারি যে, সেটিসফেকশন বই লেখার মধ্যে রয়েছে। যেটা আমি পারসোনালি অন্য কোথাও পাই না। শেষ তিন বছরে আমার দুটি বই বেরিয়েছে। প্রথমটা হলো Gandhi's Hinduism: The Struggle Against Jinnah's Islam, পুরো কাহিনীটা ১৯৪০ থেকে ৪৭ পর্যন্ত সাত বছরের যে পরিবর্তনটা। যার ইম্পেক্ট এখনো চলছে আর কত বছর চলবে আমি জানি না। কিন্তু ওই যে সাত বছরের কাহিনী যেগুলো জনসম্মুখে আসেনি সেটা রিভিল করার চেষ্টা করেছি বলে মনে করি। এর পরের বইটা Doolally Sahib Black Zamindar: Racism and Revenge in the British Raj। এটা হলো ইংরেজদের সঙ্গে জমিদারদের যে সম্পর্কটা সেটা তুলে নিয়ে এসেছি। নতুন ক্লাস অব জমিদার তৈরি করেছিল তারা।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ তারা (ইংরেজরা) একটা শ্রেণি তৈরি করল যাদের সহায়তায় তারা শাসনটা করত। খাজনা তুলত। নতুন সিস্টেম ক্রিয়েট করল। এই বইটাতে আপনি কী নিয়ে আসলেন?

এম জে আকবরঃ আমি নিয়ে আসলাম যাকে বলে গোবিগ্রামের ছুরি। ওই ছুরি নিয়ে এই পলিটিকস করত। ইংরেজরা যা ইতিহাস লিখেছে সাম্রাজ্য সম্পর্কে ওর মধ্যে তো এসব চর্ব এখনো করছে ওরা। আমার একটা জিনিস মাঝে মাঝে খুব রাগ হয় আমাদের ভারতের ঐতিহাসিকরা এটা তুলে আনেনি। ...১৭৬৫ সালে আসার পরে পুরো বেঙ্গলটা রুল করা শুরু করল।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ যাত্রাটা শুরু করেছিল মুর্শিদাবাদ থেকে।

এম জে আকবরঃ হুম মুর্শিদাবাদ থেকে যাত্রাটা শুরু হলো। পরে পুরো কন্ট্রোল অফ বেঙ্গল শুরু হয় ১৭৬৫ থেকে। বাংলাটা তারা দখল করে ফেলে মাত্র চার বছরের মধ্যে। আগে যারা রাজা ছিল মহারাজা ছিল তারা টেক্স দিত। এই ইংরেজরা আপনি বিশ্বাস করবেন না যে, ১৭৭০-এ যে প্যানিক ছিল তার মধ্যে অ্যাকর্ডিং টু ওয়ার্ল্ড হিস্ট্রি একজন চিঠি লিখেছে। ওয়ান অব দ্য বোর্ড ডিরেক্টর। সে বলছে বিটউইন ওয়ান থার্ড অ্যান্ড ওয়ার হাফ বেঙ্গল পপুলেশন হেজ স্টার্ভড টু ডেথ। আপনি ভাবতে পারেন! চারদিকে দুর্ভিক্ষ। চারদিকে ক্ষুধার্ত মানুষ। হাফ অব দ্য পপুলেশন না খেয়ে থাকছে! উনি নিজেই বলছেন এ কথা। আর তারপরে বলছে আমি ভায়োলেন্স বন্ধ করতে রেভ্যুনিউ বাড়িয়েছি। ওই কাহিনীটা পুরোপুরি প্রকাশ করা উচিত ছিল।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ এটা হলো না কেন? আমাদের ইতিহাসবিদরা সেটা পারলেন না কেন?

এম জে আকবরঃ আমি এটা বলতে চাই না। আমি চাইলে অনেক রিজন দিতে পারি কিন্তু আমি দিতে চাই না। কিন্তু ওই দুই তিনটে বই। অমর্ত্য সেন তো একটা বই করেছেন। যেটা পপুলার। এ নিয়ে কিছু কাহিনী আছে, গান আছে। সত্যজিৎ রায় এটা নিয়ে একটা ফিল্মও করলেন। কিন্তু যে লেভেলের কাজটা করা উচিত ছিল তা কিন্তু হয়নি। আনফরচুনেটলি সেটা হয়নি। এখন আর রিগ্রেট করে কোনো লাভ নেই। আমি যা করতে পারি আমি করেছি। এই যে আসলে সত্যি যে কী ছিল হোয়াট ওয়াজ দ্য রিয়েল ট্রুথ, রেসিজম বেড়েছিল। আর যারা ওরা বলে রেল বানিয়েছে রোড বানিয়েছে সেটা ছিল মেন্টাল স্ট্র্যাটেজি এক প্রকার। ওরা তো কখনই বলেনি যে দে হ্যাভ কাম টু ইন্ডিয়া টু সেইভ ইন্ডিয়া। ওরা তো আসলে ব্যবসা করতে এসেছে। ব্যবসা করতে করতে রুল করেছিল বা ব্যবসা থেকে রুলে গেল।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ একদম শেষ পর্যায়ে আমি যেটা বলতে চাই এই উপমহাদেশে আগামীতে ভারত বাংলাদেশ সম্পর্কটুকু কেমন মনে হয় বা কেমন হওয়া দরকার? ওয়ার্ল্ড পলেটিকস বা আদার্স হিসাব-নিকাশ কী বলছে?

এম জে আকবরঃ দেখুন বাংলাদেশ এবং আমার দেশ ভারতের বন্ধুত্ব ইন সাসটেইনেবল। ক্রেডিবল। কেননা ইট ইজ বিল্ট অন শেয়ার্ড ভ্যালু। এই ভ্যালুজ মানে আমার ডেমোক্র্যাসি। এই ডেমোক্র্যাসি উইক হলে এই রিলেশনশিপটাও ভ্যারি করবে। এই যে একটা ধারণা হয়ে গেছে কোনো একটা বড় দেশ কোনো একটা ছোট দেশ। এটা একটা অবজারভেশন। আদতে কোনো দেশ যেমন বড় হয় না, তেমনি কোনো দেশ ছোট হতেও পারে না। এখানে সবাই সমান। থিংস আর ইক্যুয়াল ইন দ্য ওয়ার্ল্ড অব ইক্যুয়ালিটি। আপনি যদি দেখেন আসলে ছোট আর বড় মানেটা কী! আলেক্সান্ডার যখন বের হলেন মেসেডোনিয়া কত বড় ছিল? এরপর কত দূরে চলে গেল। সাম্রাজ্য বৃদ্ধি পেল। এদিকে পুরো ব্রিটিশ এম্পায়ারটা আফ্রিকা থেকে এশিয়া। আমেরিকা পর্যন্ত। সাম্রাজ্য করে নিল। আদতে ছোট বড় কোনো অর্থ নেই। আমাদের বাংলা ছিল ধনী, আর সবার মধ্যে এই উপমহাদেশে। এজন্যই পুরো ইউরোপ এখানে এলো। তারা আমাদের চেহারা দেখতে আসেনি। এখানে প্রশ্ন আসে কেন? কেননা বিকজ অব দ্য ম্যানুফেকচারিং স্কিল। আপনি কী জানেন ন্যাপোলিয়নের ওয়াইফ ইউজ টু লাভ বেঙ্গলের সিল্ক। পুরো ইউরোপ বেঙ্গলের সম্পদের প্রতি আগ্রহী ছিল।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ ঢাকার মসলিন এক সময় পৃথিবী বিখ্যাত ছিল। মুঘলরা ঢাকা থেকে মসলিন সংগ্রহ করত।

এম জে আকবরঃ এই মসলিন নিয়ে একটা কাহিনী আছে যে, আওরঙ্গজেবের মেয়ে আট লেয়ারের স্কার্ট পরেছে। তারপরও বাবার আপত্তি। হাঃ হাঃ আর ইউরোপে তো এটা আইকন। তাহলে ওদের ইন্ডাস্ট্রিটা বিল্ড হতো না এটা যদি থাকত।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

XS
SM
MD
LG