ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ তৃতীয় মাসে গড়ালো। এমন সময়েও আমেরিকানরা ইউক্রেনীয়দের জন্য তাদের সহমর্মিতা দেখিয়ে যাচ্ছে। আর, কিয়েভের প্রতি ওয়াশিংটনের জোরদার সহায়তার প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে।
একটি জরিপ বলছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের এই সপ্তাহে কংগ্রেসের কাছে চাওয়া ৩,৩০০ কোটি ডলারের অতিরিক্ত অর্থায়নের প্রতি উভয় দলেরই জোরালো সমর্থন আছে। এর আগের মাসে আইনপ্রণেতারা ১,৩৬০ কোটি ডলারের সামরিক ও মানবিক সহায়তার পরিকল্পনা অনুমোদন করেছিলেন। ৩,৩০০ কোটি ডলারের অতিরিক্ত অর্থায়ন, আগের সহায়তার বাইরে।
ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি এবং তাদের প্রবেশের আইনী প্রক্রিয়া তরান্বিত করার পক্ষে বাইডেনের করা অঙ্গীকারের প্রতিও আমেরিকানদের সমর্থন রয়েছে। পহেলা এপ্রিল থেকে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত, গ্যালপ পরিচালিত একটি জরিপে দেখা যায়, ‘এক লাখ ইউক্রেনীয় শরণার্থীকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি’ দেওয়ার পক্ষে রয়েছেন ৭৮ শতাংশ আমেরিকান। ১৯৩৯ সালের পর থেকে শরণার্থী পরিস্থিতি নিয়ে গ্যালপের করা জরিপগুলোতে, শরণার্থী প্রবেশের পক্ষে এটিই আমেরিকান জনগণের সর্বোচ্চ মাত্রার সমর্থন।
গ্যালপের যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক গবেষণা বিষয়ক পরিচালক লিডিয়া সাদ জানান, জনগণের সমর্থন ব্যাপক। তারা দলমত, লিঙ্গ, শিক্ষাগত যোগ্যতা, আয় এবং দেশটির বিভিন্ন অঞ্চল নির্বিশেষে ব্যাপকভাবে সমর্থন জানিয়েছে।
অপরদিকে, এই সপ্তাহে রয়টার্স/ইপসোস এর একটি জরিপে দেখা যায়, ৭৩ শতাংশ আমেরিকান, তাদের সরকারের নেয়া ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করার উদ্যোগকে সমর্থন করেন। ফেব্রুয়ারিতে, রাশিয়া তাদের প্রতিবেশী দেশটিকে আক্রমণ করার পর, এটিই সর্বোচ্চ মাত্রার জনসমর্থন।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের পক্ষেও ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে। দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস – এনওআরসি সেন্টার ফর পাবলিক অ্যাফেয়ার্স রিসার্চ সাম্প্রতিক সময়ে একটি জরিপ পরিচালনা করে। তাতে দেখা যায়, ৫৪ শতাংশ আমেরিকান চান, বাইডেন যেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই রিপাবলিকান ও স্বতন্ত্র মতের মানুষ।
সমর্থনের পেছনের কারণ
আমেরিকানদের ব্যাপক উচ্চমাত্রার সহমর্মিতার কয়েকটি কারণের মধ্যে রয়েছে, দ্রুত সংঘাত বৃদ্ধি পাওয়া, নেটো মিত্রদের সাথে সীমান্ত রয়েছে এমন একটি দেশে পারমাণবিক শক্তিধর একটি দেশের আক্রমণের ভূ-রাজনৈতিক তাৎপর্য, এবং মাত্র কয়েকমাসের ব্যবধানে লক্ষ লক্ষ মানুষের বাস্তুচ্যুত হওয়া।
আক্রমণের আগেও, রুশদের চেয়ে ইউক্রেনীয়দের প্রতি আমেরিকানদের সহানুভুতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি ছিল তুলনামুলকভাবে বেশি। ফেব্রুয়ারিতে পরিচালিত গ্যালপের এক জরিপে এমন চিত্রই ফুটে উঠে। জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি অধ্যাপক মিশেল কেলসো মনে করেন, স্নায়ুযুদ্ধের কালে, রাশিয়ার পারমাণবিক হামলার প্রস্তুতি হিসেবে, আমেরিকার মহড়াগুলো অনেক আমেরিকানের মনেই এখনও স্পষ্টভাবে রয়ে গেছে।
এ ছাড়াও, দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ১০ লক্ষেরও বেশি ইউক্রেনীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকানের লবিংয়ের প্রভাবও, কংগ্রেসে উভদলীয় সমর্থনের পক্ষে কাজ করেছে। যার ফলে ইউক্রেনে শত শত কোটি ডলারের সামরিক ও মানবিক সহায়তা দ্রুতগতিতে পৌঁছেছে। একই সাথে ইউক্রেন একটি ইউরোপীয় এবং খ্রীস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হওয়াটিও হয়ত আমেরিকানদের অনুরাগ পেতে সহায়তা করেছে।
ইউক্রেনীয়দের জন্য সমর্থন এবং অনুরুপ অন্যদের প্রতি সমর্থনের মাঝে যে ফারাক দেখা যায়, তা হয়ত, তারা যে পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে পালানোর চেষ্টা করছে, সেটিও জনমতকে প্রভাবিত করে থাকতে পারে। ইউক্রেনীয়রা তাদের প্রতিবেশি বিশাল এক শক্তিধর দেশের আক্রমণের সম্মুখীন হয়েছে। অন্যদিকে, সিরিয়া ও মধ্য আমেরিকার দেশগুলো সম্পর্কে মনে করা হয় যে, তারা তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা মোকাবেলার চেষ্টা করছে । তা হতে পারে কোন নির্মম স্বৈরশাসকের অত্যাচার, দারিদ্র কিংবা দলগত সহিংসতা মোকাবেলায় ব্যর্থ কোন দূর্নীতিপরায়ণ সরকার সৃষ্ট সমস্যা। ইউক্রেনের তুলনায় সেসব দেশের পরিস্থিতি বুঝে উঠা আমেরিকানদের জন্য অনেক বেশি কষ্টসাধ্য ব্যাপার। কিন্তু ইউক্রেনের প্রেক্ষাপট অনেকটাই সরল এবং তাতে খলনায়ক কে তাও একেবারেই পরিষ্কার।
কেলসো বলেন, যুদ্ধের সময়ে একজন তরুণ এবং অনন্যসাধারণ নেতার সাহসিকতার সাথে তার দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার ভাবমূর্তিও আমেরিকানদের সমর্থনকে পাকাপোক্ত করেছে।