অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ঈদের আনন্দ নেই বাংলাদেশের গাইবান্ধার চরাঞ্চলের ৩ লাখ মানুষের


ঈদুল-ফিতর মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। আর উৎসব মানে আনন্দ। নতুন পোশাক কিনে বিশেষ খাবারের সঙ্গে উপভোগ করা হয় এই দিনটিকে।

মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশেও ঈদুল–ফিতর তেমনিভাবে উদযাপন করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের গাইবান্ধা জেলার ১৬৫টি চর এলাকার তিন লাখের বেশি পরিবারের জন্য ঈদ তা নয়। খুবই দারিদ্রতার কারণে নতুন জামা-কাপড় কেনা ও উৎসবের জন্য বিশেষ খাবার তৈরি করতে পারেন না তারা।

এ বছরও এই সব চরে কোনো আনন্দ হবে না, কারণ চরের মানুষ তিনবেলা খাবারেরই ব্যবস্থা করতে পারেন না।

বাংলাদেশে কাল মঙ্গলবার (৩ মে) ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। কিন্তু ঈদ মানেই তাদের জন্য বিশেষ কোনো দিন নয়। চর এলাকার অধিকাংশ মানুষ বেকার ও ভূমিহীন। ঈদ উপলক্ষে ভালো খাবার ও নতুন পোশাকের ব্যবস্থা করা তাদের জন্য কঠিন। তাদের নিজস্ব কোনো জমি নেই। তাই তারা বিভিন্ন জেলায় দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন।

চরের মানুষ শিক্ষা, কাজ, খাদ্য, স্বাস্থ্য ও বাসস্থানসহ তাদের মৌলিক চাহিদা মেটাতে পারেন না। এসব এলাকার বাসিন্দারা চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছেন। এ ছাড়া বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে তাদের বেঁচে থাকতে হয়। এমনকি সরকারি কর্মসূচির আওতায় ত্রাণ পাওয়া থেকেও তারা বঞ্চিত।

গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় তিস্তা নদীর তীরে কাপাসিয়া, বেলকা, শ্রীপুর ও হরিপুর নামে চারটি চর রয়েছে।

সম্প্রতি গাইবান্ধা জেলা শহরের উত্তর-পূর্ব কাপাসিয়ার চর পরিদর্শনে গিয়ে কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় ইউএনবি প্রতিবেদকের।

লালচামার গ্রামের বাসিন্দাদের দাবি, তারা কোনো ত্রাণসামগ্রী পাননি। ফলে ধান কাটার মৌসুমে দিনমজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহের জন্য পুরুষদের বিভিন্ন জেলায় যেতে হয়।

ওই গ্রামের নারী ময়না বেগম জানান, তার স্বামী ময়নুল মিয়া কাজে বের হয়ে এখনো ফেরেননি। তবে স্বামী ফোন করে বলেছেন, তিনি আসার সময় তার জন্য শাড়ি আনবেন। আর গাইবান্ধা থেকে সন্তানদের জন্য যা লাগে কিনে দেবেন।

সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া, ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া ও উড়িয়া, ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া, কামারজানি ও মোল্লারচর এবং গাইবান্ধা সদর উপজেলার আরেন্দাবাড়িসহ জেলার ১৬টি ইউনিয়নের দরিদ্র দিনমজুর পরিবারের অবস্থা ভালো নয়।

চর এলাকার লোকজন দলবেঁধে কাজের জন্য অন্য জেলায় গেছেন। সেখান থেকে চাঁদ রাতে ফিরবেন এবং পরিবারের সঙ্গে ঈদ পালন করবেন।

লালচামার চরের অনেক পরিবারের পুরুষ সদস্যরা ইটের ভাটা, ধান কাটার কাজে বাহিরে গেলেও ফিরতে পারেননি। কেউ টাকাও পাঠাতে পারেননি পরিবারের জন্য। তাদের স্ত্রীরা কী দিয়ে ঈদের জন্য নতুন কাপড় কিনবেন ও সন্তানদের গায়ে তুলে দেবেন। ধার দেনা করে সেমাই চিনি কিনতে পারলেও নতুন কাপড় ও মাংস তাদের কপালে নেই। কয়েকজন জানালেন, তাদের ঈদের দিনটাও অন্য দিনের মতো কাটবে।

সদর উপজেলার মোল্লারচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইদুজ্জামান বলেন, “সরকারের কাছ থেকে যে ত্রাণ পাওয়া যায় তা দিয়ে সবার চাহিদা মেটানো কঠিন”।

ঘাগোয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুজ্জামান রিংকু বলেন, “চর এলাকার মানুষের কোনো কাজ নেই এবং বেশির ভাগ সময় পরিবারের পুরুষরা অন্য জেলায় কাজের জন্য বাড়ির বাইরে থাকেন”।

তিনি বলেন, “এখানে ঈদ তাদের জন্য বিশেষ কিছু বয়ে আনে না”।

XS
SM
MD
LG