সচরাচর নিভৃতে থাকা তালিবান প্রধান জনসাধারণের সামনে রবিবার (১ মে) এক বক্তৃতায় বলেছেন, তার কট্টরপন্থী দল গত অগাস্টে ক্ষমতা দখলের পরে আফগানিস্তানে নিরাপত্তা ও ইসলামিক ব্যবস্থার প্রত্যাবর্তন হয়েছে।
“এই বিজয়, স্বাধীনতা ও সাফল্যের জন্য অভিনন্দন”, হিবাতুল্লা আখুন্দজাদা দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর কান্দাহারের কেন্দ্রীয় মসজিদে কয়েক হাজার সমর্থককে উদ্দেশ করে বলেন।
রমজান মাসের সিয়ামের সমাপ্তিতে ঈদুল ফিতর উৎসবের তিন দিনের শুরুতে তিনি এ কথা বলেন। দ্বিতীয় বৃহত্তম আফগান শহরটি তালিবানের উৎপত্তিস্থল এবং কার্যত প্রধান কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
ক্ষমতা গ্রহণের পর আখুন্দজাদা এই প্রথম জনসমক্ষে ভাষণ দিলেন। তিনি মুসল্লিদের মুখোমুখি না হয়ে সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেন।
তালিবান নিরাপত্তারক্ষীরা আফগান টেলিভিশনের কর্মীসহ সাংবাদিকদের মসজিদের এক কোণে আবদ্ধ করে রাখেন এবং তাদের আখুন্দজাদার কাছে ভিড়তে দেননি।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেছেন, মসজিদের গম্বুজের চারপাশে এবং ভবনের পাশে নির্মাণাধীন টাওয়ারের ছাদে মেশিনগানসহ সম্পূর্ণ প্রাঙ্গণটি কড়া পাহারায় ছিল। আখুন্দজাদা যখন তার বক্তৃতা দিচ্ছিলেন, মসজিদের ভেতরে ও বাইরে বহুসংখ্যক তালিবান সেনা মোতায়েন করা ছিল এবং মসজিদের ওপর দিয়ে রাশিয়ার তৈরি এমআই-১৭ হেলিকপ্টার ও একটি সেসনা বিমান ঘোরাফেরা করেছিল।
গত দুই সপ্তাহে রাজধানী কাবুলসহ প্রধান আফগান শহরজুড়ে মসজিদ, স্কুল ও অন্য বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ধারাবাহিক বোমা হামলার কারণে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ওই হামলায় বহু মানুষ নিহত ও আহত হয়েছেন।
২০১৬ সালে তালিবানের সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পর থেকে রবিবার আখুন্দজাদা এই নিয়ে দ্বিতীয়বার জনসাধারণের সামনে উপস্থিতি হয়েছেন। তিনি গত অক্টোবরে কান্দাহারের একটি মসজিদে উপস্থিত হয়ে তার অনুসারীদের একটি ছোট সমাবেশের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেন।
সামাজিক মাধ্যমে তার মৃত্যুর গুজব এবং কাবুলের অন্তর্বর্তী সরকারের নীতিনির্ধারণী বিষয়ে আখুন্দজাদা যে ভূমিকা পালন করছেন, সে সম্পর্কে গণমাধ্যমের জল্পনাকে খারিজ করার জন্য তালিবান অক্টোবরের বক্তৃতা থেকে একটি অডিও রেকর্ডিং প্রকাশ করেছে।
তালিবান শাসকেরা আফগানিস্তানে স্কুলছাত্রীদের শিক্ষার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করার জন্য বিশ্বব্যাপী সমালোচনার মুখে পড়েছে। যদিও তারা বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, তারা নারীদের কাজ করতে ও শিক্ষা গ্রহণ করার অনুমতি দেবে।
ঈদ উৎসবের আগে শুক্রবার এক বার্তায় তালিবান প্রধান সেই উদ্বেগগুলো দূর করার চেষ্টা করেছেন।
“আমরা আফগানিস্তানে নারী ও পুরুষের সকল শরিয়া (ইসলামী আইন) অধিকারকে সম্মান করি এবং সেগুলোও পূরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ; এটা নিয়ে কারও চিন্তা করার দরকার নেই, এই মানবিক ও মানসিক বিষয়টিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পূরণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবেন না”, আখুন্দজাদা বলেন।
“আইইএ (দ্য ইসলামিক আমিরাত অফ আফগানিস্তান) এই বিষয়ে আরও পদক্ষেপ নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, কারণ শিক্ষা আমাদের স্বদেশীদের উত্তরণের চাবিকাঠি এবং আমাদের দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করার জন্য জরুরি”, তিনি তালিবান সরকারের আনুষ্ঠানিক নাম দ্য ইসলামিক আমিরাত অফ আফগানিস্তান ব্যবহার করে বলেন।