পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ–পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় “অশনি” উত্তর–পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।
আবহাওয়া অফিসের বুলেটিনে বলা হয়েছে, সোমবার (৯ মে) সকাল ৬টায় এটি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ১ হাজার ৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা বন্দর থেকে ১ হাজার ১২০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা বন্দর থেকে ৯৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।
বুলেটিনে বলা হয়, এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে বলে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ প্রায় ৮৯ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১১৭ কিলোমিটার ঘণ্টায় বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই উত্তাল থাকবে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে ২ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। তাদের গভীর সমুদ্রে না যাওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
তিন বিভাগে ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস
পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় অশনি উত্তর–পশ্চিম দিকে অগ্রসর হওয়ায় বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (বিএমডি) দেশের তিনটি বিভাগে ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস দিয়েছে।
সোমবার সকাল ৯টায় আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়, খুলনা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার সাথে প্রবল বিজলি চমকানোসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে খুলনা, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
এছাড়া সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা কমতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে বলে আবহাওয়া অফিসের বুলেটিনে বলা হয়েছে।
বরিশাল বিভাগে প্রস্তুত প্রায় ৫ হাজার আশ্রয়কেন্দ্র
ঘূর্ণিঝড় অশনি মোকাবিলায় বরিশাল বিভাগে ৪ হাজার ৯১৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ২০ লাখ মানুষের পাশাপাশি তাদের গবাদি পশুও রাখা যাবে। এর পাশাপাশি প্রতিটি এলাকায় বিপুল পরিমাণ স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
সোমবার বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
গতিপথ অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড় অশনি উপকূলের দিকে এগিয়ে এলে বাংলাদেশের দক্ষিণের উপকূলে ব্যাপক আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এই আশঙ্কা মাথায় রেখেই ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়।
এর মধ্যে বরিশাল জেলায় ১ হাজার ৭১টি আশ্রয়কেন্দ্র, পটুয়াখালীতে ৯২৫টি, ভোলায় ১ হাজার ১০৪টি, পিরোজপুরে ৭১২টি, বরগুনায় ৬২৯টি এবং ঝালকাঠিতে ৪৭৪টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এ ছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে বিশুদ্ধ পানি, শুকনা খাবার ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বরিশাল জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ত্রাণ-দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থাদের ইতোমধ্যে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সিপিপি ভলান্টিয়ারদেরও প্রস্তুত করা হয়েছে। তা ছাড়া উপকূলীয় এলাকাকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বলে জানান জেলা প্রশাসন সূত্র।