জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি থেকে উপকূলীয় জনগণের সুরক্ষা এবং বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে, আফ্রিকার দেশগুলো ক্রমশ এখন ম্যানগ্রোভ বনভূমি পুনরুদ্ধার প্রকল্পের দিকে ঝুঁকছে। বৃহদাকার এই ম্যানগ্রোভ প্রকল্পের উদ্যোগ গ্রহণকারী দেশগুলোর তালিকায় সবশেষ সংযোজন মোজাম্বিক।
কেনিয়া, মাদাগাস্কার, গাম্বিয়া ও সেনেগালের মতো মহাদেশজুড়ে চলা উদ্যোগে মোজাম্বিক এখন অংশ নিয়েছে। একে বিশ্বের সর্ববৃহৎ উপকূলীয় বা সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রে কার্বন সংরক্ষণ প্রকল্প হিসেবে দেখা হয়। এই বাস্তুতন্ত্রে কার্বন সংরক্ষিত হবে। ব্লু কার্বন হিসেবে পরিচিত এবং আকারে ছোট হওয়ার পরও বনভূমির তুলনায় এই বাস্তুতন্ত্র দ্রুত হারে বায়ুমন্ডল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইডকে শোষণ বা অপসারণ করতে পারে।
মোজাম্বিকের ম্যানগ্রোভ পুনরুদ্ধার প্রকল্প ঘোষণা করা হয় গত ফ্রেবুয়ারিতে। এই প্রকল্পে আরব আমিরাত-ভিত্তিক অংশীদারী প্রতিষ্ঠান ব্লু-ফরেস্ট সলিউশন যৌথভাবে মোজাম্বিকের সঙ্গে কাজ করছে। এই প্রকল্পের আওতায় মধ্য জাম্বেজিয়া এবং দক্ষিণ সোফালা প্রদেশের ১ লাখ ৮৫ হাজার হেক্টর (৪৫৭,১০০ একর) এলাকা বনভূমিতে পরিণত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বনভূমিটি পাঁচ লাখ টন কার্বন ডাই অক্সাইড ধারণ করতে পারে।
ব্লু-ফরেস্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদ ফতুহি অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেন, “ব্লু-কার্বন শুধুমাত্র টনকে টন কার্বন ডাই অক্সাইড অপসারণের জন্যই নয়, বরং উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার উন্নয়নের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে”।
সাম্প্রতিক দশকগুলোতে গাছ কাটা, মাছ চাষ, উপকূলে অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং দূষণের কারণে আফ্রিকার প্রধান ম্যানগ্রোভ বনগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। এতে করে ব্লু-কার্বন নিঃসরণ বেড়েছে এবং উপকূলের বাসিন্দারা বন্যা এবং জীবিকার্জনে প্রভাব ফেলে এমন সব বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে।
কিন্তু মহাদেশটির বিভিন্ন দেশের ম্যানগ্রোভ পুনরুদ্ধারের প্রতি আকর্ষণের মূলে রয়েছে ২০১৩ সালে কেনিয়ার গাজী উপকূলে শুরু হওয়া মিকোকো পামোজা প্রকল্পের সাফল্য। এর আওতায় ১১৭ হেক্টর (২৮৯ একর) ম্যানগ্রোভ বন সংরক্ষণ করা হয় এবং বার্ষিক ৪ হাজারটি গাছ লাগানো হয়। দেশগুলো নিজেদের ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলের কথা মাথায় রেখে এই প্রকল্পের সুবিধা নিতে উৎসাহিত হয়।
সহিলি ভাষার মিকোকো পামোজা অর্থ “যুথবদ্ধ ম্যানগ্রোভস”। প্রকল্পটি উপকূলীয় ক্ষয়, মাছের ক্ষতি এবং জলবায়ু পরিবর্তন থেকে গাজী এবং মাকোনজেনি গ্রামের জনগণকে রক্ষা করেছে।
কোরাল রিফ অ্যালায়েন্সের মারিসা স্টেইনের মতে, পুনর্বনায়নের সুবিধা অনেক।
গ্লোবাল ম্যানগ্রোভস অ্যালায়েন্সের হিসাব মতে ম্যানগ্রোভ বন ১৫ মিলিয়ন মানুষকে বিভিন্ন বিপর্যয় ও বন্যার ঝুঁকি থেকে বাঁচাতে এবং প্রতি বছর ৬৫ বিলিয়ন ডলারের ক্ষয়ক্ষতি প্রতিরোধ করতে পারে।