বাংলাদেশে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) নতুন করে আরও ৩২ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এই নিয়ে বাংলাদেশে শনাক্তের সংখ্যা ১৯ লাখ ৫৩ হাজার ৮১ জনে পৌঁছেছে। তবে এই সময় বাংলাদেশে করোনায় কেউ মারা যায়নি। ফলে মৃত্যুর সংখ্যা ২৯ হাজার ১২৭ জন অপরিবর্তিত রয়েছে।
মঙ্গলবার (১৭ মে) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৭৯ পরীক্ষাগারে ৪ হাজার ২৭৫ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। অ্যান্টিজেন টেস্টসহ পরীক্ষা করা হয় ৪ হাজার ২৯০ নমুনা।
গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ। মোট পরীক্ষায় এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় মোট মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
এদিকে, ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন আরও ২৫৮ জন। এ নিয়ে বাংলাদেশে মোট সুস্থ ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৯৯ হাজার ৮৯৭ জনে। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৭ দশমিক ২৮ শতাংশ।
মহামারিতে মৃতের সংখ্যা নিয়ে ডব্লিউএইচওর তথ্য
বাংলাদেশ সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২০ ও ২০২১ সালে করোনাভাইরাস মহামারিতে বাংলাদেশে ২৯ হাজারের কম মানুষ মারা গেছেন। তবে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) অনুমান, বাংলাদেশে করোনায় প্রকৃত মৃতের সংখ্যা ১ লাখ ৪১ হাজার; যা সরকারি গণনার চেয়ে প্রায় ৫ গুণ বেশি।
৫ মে প্রকাশিত ডব্লিউএইচওর এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে আসে।
ডব্লিউএইচওর অনুমান অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে করোনা মহামারির সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত মৃত্যুর সংখ্যা ছিল প্রায় ১ কোটি ৪৯ লাখ (পরিসীমা ১ কোটি ৩৩ লাখ থেকে ১ কোটি ৬৬ লাখ)। যা বর্তমান সরকারি পরিসংখ্যানের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। গত বছরের শেষ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী মাত্র ৫৪ লাখ মৃত্যুর কথা জানা যায়।
এই সংখ্যার মধ্যে, সরাসরি করোনাভাইরাসজনিত কারণে বা স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় মহামারির প্রভাবের জন্য দায়ী কারণগুলোর প্রভাবজনিত মৃত্যুও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যেমন-হাসপাতালগুলো করোনা রোগীতে পূর্ণ থাকায়, অনেক ক্যানসারের রোগী চিকিৎসা নিতে পারেননি।
তবে, লকডাউন ও বাড়ি থেকে কাজ করার ফলে মোটরযান দুর্ঘটনা বা পেশাগত আঘাতের মতো নির্দিষ্ট কিছু দুর্ঘটনার ঝুঁকি কম থাকার কারণে, মহামারি চলাকালে মৃত্যুর আনুমানিক সংখ্যা প্রভাবিত হতে পারে।
ডব্লিউএইচওর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেশির ভাগ মৃত্যু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকায় ঘটেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে করোনায় ৪৭ লাখ মৃত্যু হয়েছে। যা দেশটির সরকারি পরিসংখ্যানের ১০ গুণ এবং বিশ্বব্যাপী করোনায় মৃত্যুর প্রায় এক তৃতীয়াংশ।
নিউইয়র্ক টাইমস এপ্রিলের মাঝামাঝি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল যে, ভারত সরকারের আপত্তির কারণে ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদন প্রকাশে বিলম্ব হচ্ছে। তা না হলে এটি এপ্রিলের শুরুতে প্রকাশ পাওয়ার কথা ছিল।
ভারত সরকার বলেছে, ডব্লিউএইচওর নেওয়া পদ্ধতিটি সম্পর্কে তাদের “উদ্বেগ” রয়েছে । তবে, অন্য গবেষণায় বিশ্বে করোনায় মৃত্যুর অনুমান ডব্লিউএইচওর থেকেও বেশি।
এই বিষয়ে গবেষণার মধ্যে, ল্যানসেটে প্রকাশিত গবেষণা সম্ভবত সবচেয়ে প্রভাবশালী। এতে বলা হয়, ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ১ কোটি ৮২ লাখ অতিরিক্ত মৃত্যু হয়েছে।
প্রভাবশালী ইনস্টিটিউট অফ হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশনের (আইএমএইচই) একটি দলের পরিচালিত সমীক্ষা বলছে, করোনায় বাংলাদেশে মৃত্যুর সংখ্যা ৪ লাখ ১৩ হাজার, যা সরকারি পরিসংখ্যান থেকে ১৫ গুণ বেশি। সে সময়, একজন বাংলাদেশের একজন সরকারি কর্মকর্তা এটিকে “অনুমানমূলক” বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন।
ডব্লিউএইচওর অনুমানে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৪ মাসের মধ্যে বয়স ও লিঙ্গের ভিত্তিতে অতিরিক্ত মৃত্যুহার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তারা নিশ্চিত করে যে, বিশ্বব্যাপী নারীদের তুলনায় পুরুষদের মৃত্যের সংখ্যা বেশি ছিল (পুরুষ ৫৭ শতাংশ ও নারী ৪৩ শতাংশ) এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এ হার বেশি ছিল।
ডব্লিউএইচওর ডেটা, অ্যানালিটিক্স এবং ডেলিভারির সহকারি মহাপরিচালক ডা. সামিরা আসমা বলেছেন, “অতিরিক্ত মৃত্যুর পরিমাপ মহামারির প্রভাব বোঝার জন্য একটি অপরিহার্য উপাদান । মৃত্যুর প্রবণতার পরিবর্তন, সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের মৃত্যুহার কমাতে এবং কার্যকরভাবে ভবিষ্যতের সংকট রোধে নীতি নির্দেশক তথ্য প্রদান করে। অনেক দেশে ডেটা সিস্টেমে সীমিত বিনিয়োগের কারণে, অতিরিক্ত মৃত্যুর প্রকৃত মাত্রা প্রায়ই লুকিয়ে থাকে” ।
ডব্লিউএইচওর করা পরিসংখ্যানের পদ্ধতিগুলো সংস্থাটির “টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজরি গ্রুপ ফর কোভিড-১৯”-এর মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে । এটির সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডেবি ব্র্যাডশ ও ডক্টর কেভিন ম্যাককরম্যাক।
ডব্লিউএইচও বলেছে, বাংলাদেশে, বিশেষ করে ২০২০ সালের জুন-জুলাই-অগাস্ট সময়ের মধ্যে, অতিরিক্ত মৃত্যুর হার প্রথমবার বৃদ্ধি পেয়েছে। ডব্লিউএইচও অনুমান করেছে, সাধারণ পরিস্থিতিতে প্রত্যাশিত মৃত্যুর চেয়ে, অতিরিক্ত ৩০ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন।
মহামারির প্রথম বছর শেষে বাংলাদেশে ৪৬ হাজার ৪১ জন মানুষের অতিরিক্ত মৃত্যু হয়েছিল। দ্বিতীয় বছর এপ্রিলে ১৪ হাজার ২৭৬ জনের, জুনে ১৩ হাজার ১৩ জনের, জুলাইয়ে ২০ হাজার ৩০ জনের এবং অগাস্টে ১৮ হাজার ৯১৫ জনের অতিরিক্ত মৃত্যু হয়।
ডব্লিউএইচওর হিসাব অনুযায়ী, ২০২১ সালের ডিসেম্বর নাগাদ বাংলাদেশে অতিরিক্ত মৃত্যুর সংখ্যা ১ লাখ ৪০ হাজার ৭৬৪ জনে পৌঁছেছে।