অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

সিলেটে কমছে বন্যার পানি, বাড়ছে পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি


সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি
সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি

বাংলাদেশের সিলেটে, ধীর গতিতে কমছে বন্যার পানি। সুরমা, কুশিয়ারা, ধলাই, পিয়াইন নদ-নদীর পানি আগের থেকে অনেকটা কমে গেছে। তবে, পানি কমলেও বন্যার্তদের দুর্ভোগ কমছে না। নগরীর বেশিরভাগ বাসা বাড়ি থেকে এখনও পানি নামেনি। অন্যদিকে, পানি কমে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। তাই পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে, বন্যা কবলিত এলাকার বাসিন্দারা পানিবাহিত রোগের ঝুঁকিতে রয়েছেন।

পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে, গত ১১ মে থেকে সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। ধীরে ধীরে বন্যা বৃদ্ধি পেয়ে সিলেট মহানগরেরও বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়। মহানগরীর প্রায় ২০টি ওয়ার্ড বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সময় অনেক মানুষ বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে অবস্থান করেন।

বন্যায় সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহর, ঘাসিটুলা, মাছিমপুর, ছড়ারপার, তালতলা, কুয়ারপার, মেন্দিবাগ, কামালগড়, চালিবন্দর, যতরপুর, সোবহানিঘাট, কালীঘাট, শেখঘাট, তালতলা, জামতলা, মাছুদীঘিরপার, রামের দিঘীরপার, মোগলটুলা, খুলিয়া টুলা, দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর রোড, ভার্থখলা, মোমিনখলা, পিরোজপুর, আলমপুর ও ঝালোপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে।

সোমবার (২৩ মে) সকালে, সিলেট নগরের তালতলা, জামতলা, মণিপুরি রাজবাড়ি, যতরপুর, মিরাবাজার, শাহজালাল উপশহর, মেন্দিবাগ, ছড়ারপাড় এলাকায় বেশ কিছু বাড়িঘরে এখনো হাঁটুপানি রয়ে গেছে। এ পানি কালো রং ধারণ করে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। তাই ওইসব এলাকার বাসিন্দারা পানিবাহিত রোগের ঝুঁকিতে আছেন। এ ছাড়া, জমে থাকা পানিতে জন্ম নিয়েছে মশাসহ নানা কীটপতঙ্গ।

বন্যা কবলিত এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ব্লিচিং পাউডার দিয়ে তারা এখন নিজেদের বাসা-বাড়ি পরিষ্কার করছেন। আসবাবপত্র ধোয়ামোছার কাজও চলছে। যাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছিল, তারাও এখন পরিষ্কারকরণে ব্যস্ত।

এদিকে, বন্যাকবলিত লোকজনের মধ্যে পানিবাহিত নানা রোগের লক্ষ্মণ দেখা দেয়ায়, মেডিকেল টিম গঠন করেছে সিলেট সিভিল সার্জন কার্যালয় ও সিলেট সিটি করপোরেশন। বন্যা কবলিতদের মধ্যে পানি বিশুদ্ধিকরণ ট্যাবলেট, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও ওষুধ বিতরণ করছেন তারা।

সিলেট জেলার সিভিল সার্জন ডা. এস এম শাহরিয়ার বলেন, “বন্যার কারণে পানিবাহিত রোগ বেড়েছে। ৩৭৬ জন লোক ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। পাশাপাশি ছয়জন চর্ম রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। আমাদের মেডিকেল টিম ইউনিয়ন পর্যায় থেকে মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় কাজ করছে। যাতে, পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে না পড়ে।”

সিভিল সার্জন জানান, “সদর উপজেলায় ১০টি, দক্ষিণ সুরমায় আটটি, বিশ্বনাথে ১১টি, ওসমানীনগরে ৯টি, বালাগঞ্জে সাতটি, ফেঞ্চুগঞ্জে ১০টি, গোলাপগঞ্জে ১৬টি, বিয়ানীবাজারে ১৬টি, জকিগঞ্জে ১০টি, কানাইঘাটে ১২টি, গোয়াইনঘাটে ১০টি, জৈন্তাপুরে ১১টি এবং কোম্পানীগঞ্জে সাতটি মেডিকেল টিম গঠিত হয়েছে। এর বাইরে জেলা সদরে তিনটি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।”

তিনি জানান, “ মেডিকেল টিমগুলোতে, চিকিৎসক ছাড়াও নার্স এং স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট অনেককে রাখা হয়েছে। প্লাবিত এলাকার সবখানেই যেন স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে প্রতিটি মেডিকেল টিমকে নির্দেশনা দেয়া আছে।”

সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের পরিসংখ্যানবিদ মো. ফরিদ উদ্দিনের দেয়া তথ্য মতে, জেলার বন্যাকবলিত এলাকায় এখন পর্যন্ত সর্বমোট ৩৮৭ রোগী পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ডায়রিয়ায় ৩৭৬ জন, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে পাঁচজন এবং চর্মরোগে ছয়জন আক্রান্ত হয়েছেন। অন্যরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তাদের সিলেটের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. আবুল কালাম আজাদ, “এখনও সেভাবে রোগ-ব্যাধি ছড়ায়নি। কেবল বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে পানিবাহিত রোগ বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে। তবে, সে জন্য আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে। কেউই চিকিৎসার বাইরে থাকবেন না।”

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, “সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে তিনটি মেডিকেল টিম মাঠে আছে, প্রয়োজনে আরও গঠন করা হবে।”

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, “পানি নেমে যাওয়ার পর সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা শাখার দল গঠন করে পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে মশা-মাছি ও কীটপতঙ্গ নিধনের জন্য ওষুধ ছিটানো এবং ময়লা দুর্গন্ধ দূর করতে ব্লিচিং পাউডার ছিটানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”

এদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমদ বলেন, “বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। পানি দ্রুত নেমে যেতে শুরু করেছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে দ্রুত পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হবে।”

XS
SM
MD
LG