কাশ্মীরের নেতা তথা জম্মু-কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্টের প্রধান ইয়াসিন মালিককে বুধবার যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা দিয়েছেন দিল্লির এক আদালতের বিচারক।
তদন্তকারী সংস্থা ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি বা এনআইএ স্বাধীন এবং অখণ্ড কাশ্মীরের দাবিতে সরব এই অভিযুক্ত নেতার মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছিল।
বিচারক সেই দাবি না মেনে কেন যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন, বিশদ রায়ে তা ব্যাখ্যা করবেন।
মৃত্যুদণ্ড না দিলেও ইয়াসিনকে কঠোর সাজাই দিয়েছেন নিম্ন আদালতের বিচারক। তাকে সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। কাশ্মীরের এই নেতার নাম উগ্রপন্থীদের আর্থিক সহায়তা এবং অন্য অনেকভাবে মদত দেওয়ার অভিযোগের সাতটি এফআইআরে ছিল। তার দুটিতে ইয়াসিনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক। বাকি পাঁচটির প্রতিটির জন্য ১০ বছর করে সাজা হয়েছে তার। তবে সবগুলি সাজা একত্রে চলবে।
এই মামলায় এরপর হাইকোর্টে যাওয়ার রাস্তা খোলা আছে ইয়াসিনের কাছে। তবে তিনি উচ্চতর আদালতে যাবেন কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়।
কারণ, নিম্ন আদালতে তিনি অভিযোগগুলি অস্বীকার করেননি। বিচারক সাজা ঘোষণার আগে তাকে সাজা মওকুফের আর্জি জানানোর সুযোগ দিয়েছিলেন। আদালত নিযুক্ত আইনজীবী জেলে গিয়ে ইয়াসিনের সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু তিনি ক্ষমা ভিক্ষা করেননি।
তার কী সাজা হতে পারে তা বুঝিয়ে বলেন সেই আইনজীবী। তবু অবস্থান থেকে সরেননি কাশ্মীরি নেতা। বুধবার রায় ঘোষণার আগেও বিচারক তার কথা শুনতে চান। তিনি বলেন, সাজার পরিমাণ নিয়ে তার কিছু বলার নেই।
এই একই মামলায় আরও বেশ কয়েকজন অপরাধী চিহ্নিত হয়েছে আদালতের চোখে। লস্কর ই তৈবার হাফিজ শাহিদ এবং হিজবুল মুজাহিদিনের সৈয়দ সালাউদ্দিন সহ আরও বেশ কয়েকজন দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ ধারা ছাড়াও ফৌজদারি দণ্ডবিধির ষড়যন্ত্র এবং রাষ্ট্রদ্রোহের ও অভিযোগ আনা হয়েছিল।
ইয়াসিন মালিকের বিরুদ্ধে এনআইএ-র অভিযোগ, তিনি ভারত বিরোধী পাক সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন। এছাড়া ২০১৬-‘ ১৭ সালে কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নবাদী আন্দোলনে মদত দিয়েছেন। তার বাড়ি থেকে প্রচুর নথিপত্র পাওয়া গিয়েছে অভিযোগের স্বপক্ষে।
ইয়াসিনের বক্তব্য ছিল, তিনি ১৯৯৪ সালের পর থেকে হিংসার রাজনীতি থেকে দূরে আছেন। মহাত্মা গান্ধীর অহিংস আন্দোলনের পথকে বেছে নিয়েছেন। আদালতে আরও বলেন, অটলবিহারী বাজপেয়ির সরকার আমাকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিল। নাশকতার সঙ্গে যুক্ত থাকলে কি এই অনুমতি দেওয়া হত?
প্রসঙ্গত, জম্মু কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্ট হল, স্বঘোষিত বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন। তারা অখণ্ড স্বাধীন কাশ্মীরের দাবিদার। ২০১৯- এ ওই সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় সরকার।
এদিকে, ইয়াসিনের সাজা ঘোষণা হবে খবর প্রকাশ হতেই শ্রীনগরের পরিস্থিতি থমথমে হয়ে উঠেছে। অনেক দোকান বাজার বন্ধ হয়ে গেছে। নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে উপত্যকার। কয়েকটি জায়গা থেকে গোলমালের খবর পাওয়া গিয়েছে। ইয়াসিনের সমর্থকেরা হামলা করার চেষ্টা করে নিরাপত্তা রক্ষীদের উপর।
উগ্রপন্থীদের আর্থিক ও অন্যান্য সুবিধা দেওয়ার অভিযোগে এনআইএ-র তদন্তের ভিত্তিতে জম্মু কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্টের নেতা ইয়াসিনকে দিল্লির একটি আদালত বিচারে দোষী সাব্যস্ত করে। ওই একই মামলায় লস্কর ই তৈবার হাফিজ শাহিদ এবং হিজবুল মুজাহিদিনের সৈয়দ সালাউদ্দিন সব আরও বেশ কয়েকজন দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ ধারা ছাড়াও ফৌজদারি দণ্ডবিধির ষড়যন্ত্র এবং রাষ্ট্রদ্রোহের ও অভিযোগ আনা হয়েছিল।