অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা বোর্ডে প্রথম ঝালমুড়িওয়ালার মেয়ে সারিফা, ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন তার


পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা বোর্ডে প্রথম ঝালমুড়িওয়ালার মেয়ে সারিফা, ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন তার
পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা বোর্ডে প্রথম ঝালমুড়িওয়ালার মেয়ে সারিফা, ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন তার

পশ্চিমবঙ্গ হাই মাদ্রাসা বোর্ডের দশম শ্রেণির পরীক্ষায় রাজ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছে মালদা জেলার রতুয়া ব্লকের বটতলা হাই মাদ্রাসার ছাত্রী সারিফা খাতুন। সকাল থেকেই তার পরিবারের চোখ ছিল মোবাইলে। বেলা বাড়তেই আসে সুখবর। জানা যায়, ৮০০ নম্বরের মধ্যে ৭৮৬ নম্বর পেয়েছে সারিফা। খবর ছড়াতেই তার বাড়িতে ভিড় করেন আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও শুভেচ্ছা জানাতে সারিফার বাড়িতে আসেন।

ছোটবেলা থেকেই অভাবের সংসারে বছর-বছর আলো জ্বালাত সারিফার রেজাল্ট। সব শ্রেণিতেই প্রথম অথবা দ্বিতীয় স্থানে থাকত সে। বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল, লেখাপড়া করে মেয়ে একদিন পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করবেই। তাই মঙ্গলবার জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় মেয়ের এই সাফল্যে আনন্দিত ও গর্বিত বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন ও শিক্ষক-শিক্ষিকারা।

সারিফা জানান, তার বাবা একজন ঝালমুড়ি বিক্রেতা। ছোটোবেলা থেকেই চরম দারিদ্র্য দেখে এসেছে সে। এখন সে সব পার করে ভাল রেজাল্ট করলেও, উচ্চশিক্ষার জন্য আর্থিক প্রতিবন্ধকতাই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখা।

সারিফা ছোট থেকেই দেখে এসেছে, গ্রামে চিকিৎসার অভাবে চোখের সামনে অনেক গরিব মানুষ তিলে তিলে মারা গেছেন। তাই দেখেই তার চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখা। সে চায়, গরিব মানুষের বিনামূল্যে চিকিৎসা করতে।

সেই স্বপ্ন তাড়া করেই সারিফা দিনরাত পড়াশোনা করে গেছে মন দিয়ে। পড়াশোনার পাশাপাশি ছবি আঁকা ও গল্পের বই পড়তে ভালবাসে সারিফা। শুধু পরিবার নয়, স্কুলের শিক্ষক থেকে গৃহশিক্ষক– সকলেরই সহযোগিতা পেয়েছে সে। তবে সে ভাবতে পারেনি, এতটা ভাল ফল করতে পারবে। এখন তার ইচ্ছা পূর্ণ করার আর্থিক সামর্থ্য পরিবারের নেই। তাই সে মনে-প্রাণে চাইছে, তার উচ্চশিক্ষার জন্য সরকারি বা বেসরকারি কোনও সংস্থা, কোনও সহৃদয় ব্যক্তি কিংবা আবাসিক মিশনের মতো কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।

সারিফার বাবা উজির হোসেন জানান, তার তিন মেয়ে ও দুই ছেলে। সারিফা সবচেয়ে ছোট। অভাবের সংসার তার, বাড়ির সামনে ঝালমুড়ি বিক্রি করে দিনে দু-তিনশো টাকা আয় করেন। এই সামান্য আয়ে ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার খরচ ও সংসারের খরচ জোগাড় করতে হিমসিম খেতে হয় তাকে। এখন পরিবারে বড় চিন্তা, আগামীদিনে মেয়ের পড়াশোনা চালানোর খরচ কীভাবে বহন করা হবে। সারিফার বাবা আরও জানান, তার সামান্য কিছু জমিজমা ও গাছপালা রয়েছে। প্রয়োজনে সেগুলি বিক্রি করেও মেয়েকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করবেন তিনি। সত্যি করবেন মেয়ের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন।

XS
SM
MD
LG