অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

সংবাদমাধ্যমের গ্রন্থাগার


প্রথম আলো লাইব্রেরি।
প্রথম আলো লাইব্রেরি।

“তথ্যবহুল রিপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের বিভিন্ন রেফারেন্স, বই, এ সংক্রান্ত পূর্ববর্তী ও সহায়ক তথ্য উপাত্তের প্রয়োজন হয়। সেজন্য, সংবাদমাধ্যমে গ্রন্থাগার ব্যবহার করতেই হয়। একটি সংবাদমাধ্যমের, ভবিষ্যতে টিকে থাকা নির্ভর করে তার আর্কাইভ কতটা সমৃদ্ধ, তার ওপর। সংবাদপত্র ও টেলিভিশনের গ্রন্থাগার, রেফারেন্স সেল বা আর্কাইভ, যাই বলি না কেন, তার উন্নয়নের জন্য কাজ করা দরকার। প্রতিটি নিউজ মিডিয়াতে একটি আধুনিক লাইব্রেরি থাকা দরকার। সংবাদকর্মীরা যে কোন জায়গায় বসে যেন প্রতিষ্ঠানের লাইব্রেরি বা তথ্য ভান্ডার ব্যবহার করতে পারে, সে ধরণের আধুনিকায়নের দিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে।” বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের গ্রন্থাগার নিয়ে আলাপকালে, ভয়েস অফ আমেরিকাকে এ কথাগুলো বলেন দৈনিক প্রথম আলোর গবেষণা ও আর্কাইভ উপদেষ্টা মুহাম্মদ লুৎফুল হক।

প্রিন্ট মিডিয়া বা সংবাদপত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ হলো লাইব্রেরি ও আর্কাইভ। একটি ভালো প্রতিবেদন তৈরির ক্ষেত্রে তথ্য উপাত্ত, সহায়ক বই, নিউজসহ নানা বিষয়ে সহায়তা পেতে, সংবাদপত্র লাইব্রেরির বিকল্প নেই। যদিও, বাংলাদেশের অনেক সংবাদ প্রতিষ্ঠানেই এই বিভাগের অস্ত্বিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। বাংলাদেশে হাতে গোনা কয়েকটি সংবাদ প্রতিষ্ঠানে রেফারেন্স লাইব্রেরি বা আর্কাইভ রয়েছে। তারমধ্যে দৈনিক প্রথম আলো, দৈনিক কালের কন্ঠ, দৈনিক যুগান্তর, দৈনিক বণিক বার্তাসহ কয়েকটি পত্রিকায় লাইব্রেরি আছে। এছাড়াও, কিছু সংবাদপত্রের অফিসে পত্রিকার ফাইল, নিউজ কাটিং নিয়ে ছোট একটি কর্ণার বা রুম থাকে, যাকে রেফারেন্স সেল বলা হয়। সংবাদপত্রে আগে এ ধরনের রেফারেন্স সেল থাকলেও, বর্তমানে এর বিলুপ্তি ঘটেছে।

দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার গ্রন্থাগার :

সংবাদপত্রের জন্য সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার ও আর্কাইভ বলতে যা বোঝায়, সে ধরণের একটি বিভাগ রয়েছে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার প্রধান কার্যালয়ে। দৈনিক প্রথম আলোর গবেষণা ও আর্কাইভ উপদেষ্টা মুহাম্মদ লুৎফুল হক ভয়েস অফ আমেরিকাকে জানালেন, তাদের গ্রন্থাগারে প্রায় সাড়ে নয় হাজার বই এবং দৈনিক প্রথম আলোর শুরু থেকে সব কপি, দৈনিক ভোরের কাগজ, দৈনিক ইত্তেফাক, ডেইলি স্টার, দৈনিক সংবাদের কয়েক বছরের পত্রিকার বাঁধাই করা ফাইল রয়েছে।

মুহাম্মদ লুৎফুল হক বলেন, “গ্রন্থাগারে সংগ্রহের মধ্যে রয়েছে, বাংলাদেশের ইতিহাস, রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশ সম্পর্কিত দেশি বিদেশি প্রকাশনা, ঢাকার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ওপর প্রকাশনা, সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা বিষয়ক বই বেশি আছে। বাংলাদেশের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধের আলোকচিত্রের বেশ কিছু অ্যালবাম আছে। কিছু বিদেশি ম্যাগাজিন নিয়মিত সংগ্রহ করা হয় এবং বছর শেষে বাঁধাই করে রাখা হয়।লাইব্রেরি অটোমেশনের কাজ চলছে। এছাড়া ডিজিটাল নিউজ মিডিয়ার সফটওয়্যার রয়েছে। সফটওয়্যারটি দিয়ে প্রথম আলোর পুরো সংবাদ প্রক্রিয়াকেই অটোমেটেড করা হয়েছে। আর্কাইভ থেকে এই সফটওয়্যারেই প্রতিদিনকার নিউজ আর্কাইভ করা হয়। সংবাদকর্মীরা তাদের ডেস্কে বসেই তা ব্যবহার করতে পারেন। সাধারণত প্রথম আলোর কর্মীরাই লাইব্রেরি ও আর্কাইভ ব্যবহার করতে পারেন। তবে, গবেষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং ছাত্ররা এখানে আসেন। তারা অনুমতিক্রমে গ্রন্থাগার ব্যবহার করতে পারেন। প্রথম আলোর গ্রন্থাগার ও আর্কাইভে, কর্মীর সংখ্যা ১৬ জন। গ্রন্থাগার সপ্তাহের সাতদিনই খোলা থাকে।”

সংবাদ মাধ্যমে গ্রন্থাগারের ব্যবহারের বিষয়ে মুহাম্মদ লুৎফুল হক বলেন, “বিশেষ দিবসের ফিচার, ক্রোড়পত্রের লেখার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য, সাংবাদিকদের আমরা আমাদের গ্রন্থাগার থেকেই প্রদান করে থাকি।করোনার সময়ে আমাদের গ্রন্থাগার ও আর্কাইভ কর্মীরা ঘরে বসেই প্রয়োজনীয় তথ্যসেবা প্রদান করেছেন। আমরা সবসময়ই আমাদের সকল প্রকাশনার হার্ডকপি ও সফটকপি সংরক্ষণের উপর জোর দিয়ে আসছি, যাতে ভবিষ্যতেও যে কোনো জায়গায় বসে আমাদের কর্মীরা তথ্যসেবা প্রদান করতে পারে।”

দৈনিক কালের কন্ঠের গ্রন্থাগার :

দৈনিক কালের কন্ঠ পত্রিকার রেফারেন্স এডিটর জাহাঙ্গীর আলম সজীব জানান, “লাইব্রেরিতে দৈনিক কালের কন্ঠসহ কয়েকটি দৈনিক পত্রিকা নিয়মিত সংগ্রহ করা হয়। এছাড়া, পত্রিকাটির সংবাদকর্মীদের ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু রেফারেন্স বই রয়েছে। নিউজের রেফারেন্স সার্ভিসের জন্য সফটওয়্যার আছে। সংবাদকর্মীরা তাদের ডেস্কে বসেই তা ব্যবহার করতে পারেন। কেবল কালের কন্ঠের সংবাদকর্মীরাই লাইব্রেরি ব্যবহার করেন। পাশাপাশি গবেষক, ছাত্র, শিক্ষকদেরও লাইব্রেরি ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়।”

বিভাগটিতে এ মুহুর্তে তিনিই একমাত্র কর্মী বলে জানান তিনি। বলেন, “আরো কর্মী নেয়ার পরিকল্পনা আছে।”

জাহাঙ্গীর আলম সজীব বলেন, ‘‘বেশিরভাগ পত্রিকাই লাইব্রেরি ছাড়া চলছে। কিন্তু, সংবাদমাধ্যমে লাইব্রেরি থাকাটা ভীষণ প্রয়োজন। লাইব্রেরি ছাড়া একটা ভালো রিপোর্ট করা খুব কঠিন। ধরুন, আজকে বজ্রপাতে দশজন মারা গেছে। এটা নিয়ে যদি কেউ প্রতিবেদন লিখতে যায়, তাহলে পূর্ববর্তী বছরগুলোয় কতজন বজ্রপাতে মারা গেছে, সেটা তার জানা দরকার। এই কেস স্টাডি তো লাইব্রেরি বা আর্কাইভের সাহায্য ছাড়া সম্ভব না। লাইব্রেরি কর্মীরাই তাকে এই তথ্যগুলো পেতে সাহায্য করবে। এটাই মূলত মিডিয়া লাইব্রেরির কাজ। তাই, লেখাকে তথ্যবহুল করতে হলে, লাইব্রেরির সাহায্য লাগবেই।”

দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার গ্রন্থাগার:

দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার কার্যালয়ে একটি বড় পরিসরের লাইব্রেরি আছে। কথা হয় লাইব্রেরিয়ান জাকির হোসেন সরকারের সঙ্গে। তিনি জানান, “সংগ্রহে আছে এনসাইক্লোপেডিয়া, ডিকশনারিসহ বিভিন্ন রেফারেন্স বই। এছাড়া, বাংলাদেশের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, সাংবাদিকতা, বাংলা সাহিত্য- বিশেষ করে কবিতার বই সংগ্রহ করেন।”

জাকির হোসেন সরকারের বলেন, “সংবাদকর্মীদের লেখার ক্ষেত্রে এই বইগুলো সহায়ক ভুমিকা রাখে। হাজার খানেকের উপরে বই আছে এ লাইব্রেরিতে। নিয়মিত বারোটি দৈনিক পত্রিকা সংরক্ষণ এবং মাস শেষে সেগুলো হার্ড বাইন্ডিং করে রাখা হয়। নিয়মিত বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নিউজ ক্লিপিং নিয়মিত কাজের অংশ।”

তিনি জানান, “লাইব্রেরি এখনও পুরোপুরি ম্যানুয়াল। একে অটোমেশন করার চিন্তাভাবনা আছে। এ বিভাগে দুজন কর্মী আছেন। নিজস্ব সংবাদকর্মীরাই লাইব্রেরি ব্যবহার করে থাকেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্র, গবেষকগণ বিভিন্ন গাবেষণার কাজে আসেন। অন্যান্য ব্যবহারকারীরাও আসেন। সম্পাদকের অনুমতি নিয়ে তারা পত্রিকার ফাইল, নিউজ ক্লিপিং ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন।”

জাকির হোসেন সরকার মনে করেন, গ্রন্থাগারের উপযোগিতা বাড়ানোর জন্য তা ডিজিটাইজ করা প্রয়োজন। গ্রন্থাগারের জন্য বাজেট বৃদ্ধি প্রয়োজন। এছাড়াও সংবাদ মাধ্যমের গ্রন্থাগারকর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা উচিৎ। একটা গবেষণাধর্মী গ্রন্থাগার ও আর্কাইভ গড়ে তোলার জন্য উচ্চ পর্যায়ের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।

অন্যান্য পত্রিকায় গ্রন্থাগার :

দৈনিক বণিক বার্তায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাদের গ্রন্থাগারে এই মুহুর্তে কোনো গ্রন্থাগারিক নেই। এই গ্রন্থাগারে হাজার খানেক বই আছে। শুধুমাত্র পত্রিকাটির সংবাদকর্মীরাই গ্রন্থাগার ব্যবহার করতে পারেন।

বাংলা ট্রিবিউনের একটি অনলাইন আর্কাইভ রয়েছে। প্রয়োজনীয় কিছু রেফারেন্স বই আছে। এ মুহুর্তে জায়গার অভাবে কোনো লাইব্রেরি নেই। তবে নিজস্ব ভবনে স্থানান্তরের পর, লাইব্রেরি করার পরিকল্পনা রয়েছে সাংবাদ প্রতিষ্ঠানটির।

XS
SM
MD
LG