অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি, আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দী


কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি
কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি

নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকায়, বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। সোমবার (২০ জুন) সকালে সেতু পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার ও চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ৫১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এমন পরিস্থিতিতে, জেলার ৪৯টি ইউনিয়নের, দুই শতাধিক চরে অন্তত আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রৌমারী উপজেলা। সেখানে প্রায় এক লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে কয়েকটি পাকা সড়ক। প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করছে জেলা প্রশাসন।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানিয়েছেন, “বন্যার প্রস্তুতি হিসেবে জেলা প্রশাসক দপ্তরে ও প্রতিটি উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ ও আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে জড়িত কর্মকতা-কর্মচারীদের কর্মস্থলে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ ৩৬১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এদিকে, নাগেশ্বরী উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের মুড়িয়ারহাট এলাকায় দুধকুমার নদের একটি বেড়িবাঁধ ভেঙে, ৫টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। শুক্রবার (১৭ জুন) সকালে এই বাঁধে ভাঙন শুরু হয়ং। এছাড়া, ঝুঁকিতে রয়েছে, সারডোব, বাংটুরঘাট ও গুরুত্বপূর্ণ যাত্রাপুর বাজার সংলগ্ন ক্রস বাঁধটি।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানিয়েছেন, “ব্রহ্মপুত্র ও ধরলায় আরও পানি বাড়বে। পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো মেরামতের কাজ চলছে।”

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, “রবিবার পর্যন্ত জেলায় ১০ হাজার ৮৯৪ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এরমধ্যে, ৬ হাজার ৮০৬ হেক্টর জমিতে পাট ক্ষেত রয়েছে।”

এদিকে, বন্যাকবলিত এলাকায় দেখা দিয়েছে শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, গো-খাদ্য ও জ্বালানির সংকট। কাজ বন্ধ হওয়ায়, দিনমজুর পরিবারগুলোর ঘরে খাদ্য সংকট প্রকট হয়েছে। চারণভূমি ডুবে যাওয়ায়, গবাদি পশুর খাদ্য মিলছে না। চরাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে হাট বাজারে যাতায়াতসহ যোগাযোগ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ভোগাস্তিতে পড়েছে বানভাসি মানুষ।

উলিপুর উপজেলার মশালের চরের বাসিন্দা মুসা মিয়া জানান, “এই চরের ২০০টি পরিবারের সবার বাড়িতেই পানি উঠেছে। সবগুলো সড়ক ও ফসলের ক্ষেত এখন পানির নিচে।”

রৌমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশরাফুল আলম রাসেল বলেছেন, “এই উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের সবকটিই এখন বন্যাকবলিত। পানিবন্দী হয়ে আছে লক্ষাধিক মানুষ। সাড়ে ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ রৌমারী-ইজলামারী সড়ক নিমজ্জিত হয়ে, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে রৌমারী শুল্ক স্টেশন দিয়ে আমদানি-রপ্তানি।”

জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার জানিয়েছেন, “জেলার ৪৯টি ইউনিয়ন বন্যা প্লাবিত হয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে এ পর্যন্ত ৩১৩ মেট্রিক টন চাল, নগদ ১৪ লাখ টাকা, পশু খাদ্য বাবদ ১৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, শিশু খাদ্য বাবদ ১৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।”

XS
SM
MD
LG