অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

মৌসুমের শেষে লিচুর আকাশচুম্বী দাম


লিচুর গাছে ঝুলে আছে থোকা থোকা লিচু।
লিচুর গাছে ঝুলে আছে থোকা থোকা লিচু।

বাংলাদেশে লিচুর মৌসুম এখন শেষের দিকে। এই মুহুর্তে একমাত্র দিনাজপুরেই পাওয়া যাচ্ছে লিচু।তাই পাইকাররাও ভিড় করছেন সেখানকার বাজারে।একদিকে মৌসুমের শেষ, অন্য দিকে ভালো জাতের লিচুর একমাত্র প্রাপ্তিস্থান দিনাজপুরেই; তাই এখানে লিচুর বাজার খুব চড়া। বিগত বছরগুলোর তুলনায় তিন থেকে চারগুণ দামে লিচু বিক্রি হচ্ছে খোদ দিনাজপুরেই।সুস্বাদু ও রসালো জাতের লিচুর মধ্যে রয়েছে; চায়না থ্রি, বেদানা, কাঠালি, বোম্বে ও মাদ্রাজি লিচু।

দিনাজপুরের বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শনিবার (১৮ জুন) দিনাজপুরের বাজারেচায়না থ্রি জাতের প্রতি একশ লিচুর পাইকারি মূল্য ছিল মানভেদে ২২০০ থেকে ২৩০০ টাকা এবং খুচরা মূল্য ২৫০০ থেকে ২৬০০ টাকা।বেদানা জাতের লিচু ১২০০ টাকা থেকে ১৩০০ টাকা, বোম্বে জাতের প্রতি একশ লিচু বিক্রি হয়েছে পাইকারি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা এবং খুচরা ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা দরে।

বাগান মালিক ও ফল ব্যবসায়ীরা বলছেন, “এবারের লিচুর দাম বেশি।চায়না থ্রি জাতের একটি লিচুর সর্বোচ্চ দাম ২৬ টাকা।”

ব্যবসায়ীরা জানালেন, “এবার চায়না থ্রি ‍লিচু ও বেদানা লিচুর ফলন কম হওয়ায় দাম বেশি।তাছাড়া, চায়না থ্রি লিচু মৌসুমের সবশেষে পাওয়া যায় বলে এর দাম, অন্য লিচুর চাইতে তুলনামূলক বেশি হয়।

জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার লিচুবাগানের মালিক উত্তম কুমার রায় জানান, “চায়না থ্রি লিচুর বাগান কম, তাই বাজারে এর সরবরাহ কম।বড় ব্যবসায়ীরা বাগানে এসেই লিচু কিনে নিয়ে যান। বাজারে আর ৫ থেকে ৭ দিন এই জাতের লিচু পাওয়া যাবে।”

দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ বড় ময়দানে দেশের সব চেয়ে বড় অস্থায়ী লিচুর বাজার বসে।এই বাজার এখন শেষ সময়ের কেনাকাটায় জমজমাট।এছাড়া শহরের বাহাদুর বাজার, হাসপাতাল মোড়, থানার মোড়েও লিচুর বাজার বসেছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, “চায়না থ্রি ও বেদানা জাতের দামী লিচুগুলো সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।তাই, বোম্বে ও মাদ্রাজি জাতের লিচুই বিক্রি হচ্ছে বেশি।দামী লিচুগুলো বিত্তবান শ্রেণী, বড় ব্যবসায়ী ও সমাজের বিশিষ্টজনরা কেনেন, উপহার হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় পাঠান।”

দিনাজপুর কৃষি অফিস সূত্র জানায়, “জেলার ১৩টি উপজেলায়, সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে।বাগানগুলোয় বিভিন্ন জাতের লিচুর চাষ হয়।”

ঢাকার বাজারে লিচুর দাম

ঢাকার কারওয়ান বাজার, হাতির পুল বাজার, মোহাম্মদপুরের টাউনহল বাজার ও কয়েকটি সুপার শপ ঘুরে দেখা গেলো; বাজারগুলোতে বোম্বে জাতের লিচুই বেশি বিক্রি হচ্ছে।বোম্বে জাতের প্রতি একশ লিচু বাজার ভেদে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, বেদানা লিচু ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ঢাকার কারওয়ান বাজারে বেদানা লিচুকেই চায়না থ্রি জাতের লিচু বলে বিক্রি করা হচ্ছে।একশ লিচুর দাম চাওয়া হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা।

চায়না থ্রি লিচুর বৈশিষ্ট্য

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত, বারি-৩ জাতের লিচুই স্থানীয়ভাবে চায়না থ্রি নামে পরিচিত। এই লিচুটি দেখতে কিছুটা হৃদপিন্ডাকার বা আপেল আকৃতির।ফলের খোসার রং হলদে সবুজ ছোপসহ লাল। খোসার গায়ে কাঁঠালের মতো আবরণ, তবে মসৃণ।কাঁটাগুলো হাতে লাগে না। এর আঁটি ছোট। ফল মাংসল, রসালো। অন্যান্য লিচুর চেয়ে স্বাদ ভিন্ন।মাটি ও আবহাওয়া অনুকূল না হলে এই গাছ বাঁচে না।[সূত্র: উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট]

বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা বললেন, চায়না থ্রি লিচু কতটা মিষ্টি ও রসালো হবে, তা আবহাওয়া ও মাটির উপর নির্ভর করে। এ ফলের আবাদ অন্যান্য জেলায় হলেও, দিনাজপুরেই ভালো হয়।তাই, দেশজুড়ে এই লিচু দিনাজপুরের চায়না থ্রি লিচু বলে পরিচিত এবং এর এতো চাহিদা।

XS
SM
MD
LG