বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। আর, এ সময়ে দুই হাজার ১০১ জনের দেহে এই ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত করোনায় মৃতের সংখ্যা ২৯ হাজার ১৪২ জন এবং শনাক্তের সংখ্যা ১৯ লাখ ৬৭ হাজার ২৭৪ জনে পৌঁছেছে।
সোমবার (২৭ জুন)এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩ হাজার ৮২০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্ত-হার ১৫ দশমিক ২০ শতাংশ এবং মোট পরীক্ষায় এখন পর্যন্ত শনাক্ত-হার ১৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এছাড়া, শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার এক দশমিক ৪৮ শতাংশ।
এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন আরও ১৭৯ জন। এ নিয়ে, মোট সুস্থ ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ছয় হাজার ৮৬৭ জনে। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
বাংলাদেশ সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২০ ও ২০২১ সালে করোনাভাইরাস মহামারিতে বাংলাদেশে ২৯ হাজারের কম মানুষ মারা গেছে। তবে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমান- দেশে করোনায় প্রকৃত মৃতের সংখ্যা এক লাখ ৪১ হাজার; যা সরকারি গণনার চেয়ে প্রায় ৫গুণ বেশি।
৫ মে প্রকাশিত ডব্লিউএইচও’র এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে আসে।
ডব্লিউএইচও’র অনুমান অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি এবং ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর এর মধ্যে করোনা মহামারির সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত মৃত্যুর সংখ্যা ছিল প্রায় ১ কোটি ৪৯ লাখ( পরিসীমা ১ কোটি ৩৩ লাখ থেকে ১ কোটি ৬৬ লাখ)। যা বর্তমান সরকারি পরিসংখ্যানের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। গত বছরের শেষ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী মাত্র ৫৪ লাখ মৃত্যুর কথা জানা যায়।
এই সংখ্যার মধ্যে সরাসরি করোনভাইরাসজনিত কারণে বা স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় মহামারির প্রভাবের জন্য দায়ী কারণগুলোর প্রভাবজনিত মৃত্যুও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যেমন- হাসপাতালগুলো করোনা রোগীতে পূর্ণ থাকায় চিকিত্সা নিতে না পারায় অনেক ক্যান্সারের রোগী চিকিৎসা নিতে পারেনি।
তবে, লকডাউন এবং বাড়ি থেকে কাজ করার ফলে মোটর-যান দুর্ঘটনা বা পেশাগত আঘাতের মতো নির্দিষ্ট কিছু দুর্ঘটনার ঝুঁকি কম থাকার কারণে, মহামারি চলাকালীন মৃত্যুর আনুমানিক সংখ্যা প্রভাবিত হতে পারে।
ডব্লিউএইচও’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেশিরভাগ মৃত্যু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ইউরোপ এবং আমেরিকায় ঘটেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে করোনায় ৪৭ লাখ মৃত্যু হয়েছে। যা দেশটির সরকারি পরিসংখ্যানের ১০ গুণ এবং বিশ্বব্যাপী করোনায় মৃত্যুর প্রায় এক তৃতীয়াংশ।
নিউ ইয়র্ক টাইমস, এপ্রিলের মাঝামাঝি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল যে, ভারত সরকারের আপত্তির কারণে ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদন প্রকাশে বিলম্ব হচ্ছে। তা না হলে এটি এপ্রিলের শুরুতে প্রকাশ পাওয়ার কথা ছিল।
ভারত সরকার বলেছে, ডব্লিউএইচও’র নেয়া পদ্ধতিটি সম্পর্কে তাদের ‘উদ্বেগ’ রয়েছে। তবে, অন্যান্য গবেষণায় বিশ্বে করোনায় মৃত্যুর অনুমান ডব্লিউএইচও’র থেকেও বেশি।
এই বিষয়ে গবেষণার মধ্যে, ল্যানসেটে প্রকাশিত গবেষণা সম্ভবত সবচেয়ে প্রভাবশালী। এতে বলা হয়, ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর এর মধ্যে বিশ্বব্যাপী ১ কোটি ৮২ লাখ অতিরিক্ত মৃত্যু হয়েছে।
প্রভাবশালী ইনস্টিটিউট অফ হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশন (আইএমএইচই) এর একটি দলের পরিচালিত সমীক্ষা বলছে, করোনায় বাংলাদেশে মৃত্যুর সংখ্যা চার লাখ ১৩ হাজার, যা সরকারি পরিসংখ্যান থেকে ১৫ গুণ বেশি। সে সময়, একজন বাংলাদেশের একজন সরকারি কর্মকর্তা এটিকে ‘অনুমানমূলক’ বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন।
ডব্লিউএইচও-এর অনুমানে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৪ মাসের মধ্যে বয়স ও লিঙ্গের ভিত্তিতে অতিরিক্ত মৃত্যুহার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তারা নিশ্চিত করে যে, বিশ্বব্যাপী, নারীদের তুলনায় পুরুষদের মৃত্যের সংখ্যা বেশি ছিল (পুরুষ ৫৭ শতাংশ ও নারী ৪৩ শতাংশ ) এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এ হার বেশি ছিল।
ডব্লুএইচও’র ডেটা, অ্যানালিটিক্স এবং ডেলিভারির সহকারি মহাপরিচালক ডা. সামিরা আসমা বলেছেন, “অতিরিক্ত মৃত্যুর পরিমাপ মহামারির প্রভাব বোঝার জন্য একটি অপরিহার্য উপাদান। মৃত্যুর প্রবণতার পরিবর্তন, সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের মৃত্যুহার কমাতে এবং কার্যকরভাবে ভবিষ্যতের সঙ্কট রোধে নীতি নির্দেশক তথ্য প্রদান করে। অনেক দেশে ডেটা সিস্টেমে সীমিত বিনিয়োগের কারণে, অতিরিক্ত মৃত্যুর প্রকৃত মাত্রা প্রায়ই লুকিয়ে থাকে।”
ডব্লিউএইচও’র করা পরিসংখ্যানের পদ্ধতিগুলো সংস্থাটির ‘টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজরি গ্রুপ ফর কোভিড-১৯’- এর মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। এটির সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডেবি ব্র্যাডশ ও ডক্টর কেভিন ম্যাককরম্যাক।
ডব্লিউএইচও বলেছে, বাংলাদেশে, বিশেষ করে ২০২০ সালের জুন-জুলাই-আগস্ট সময়ের মধ্যে, অতিরিক্ত মৃত্যুর হার প্রথমবার বৃদ্ধি পেয়েছে। ডব্লিউএইচও অনুমান করেছে, সাধারণ পরিস্থিতিতে প্রত্যাশিত মৃত্যুর চেয়ে, অতিরিক্ত ৩০ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে।
মহামারির প্রথম বছর শেষে বাংলাদেশে ৪৬ হাজার ৪১ জন মানুষের অতিরিক্ত মৃত্যু হয়েছিল। দ্বিতীয় বছর, এপ্রিল ১৪ হাজার ২৭৬ জনের, জুনে ১৩ হাজার ১৩ জনের, জুলাইয়ে ২০ হাজার ৩০ জনের এবং আগস্টে ১৮ হাজার ৯১৫ জনের অতিরিক্ত মৃত্যু হয়।
ডব্লিউএইচও’র হিসাব অনুযায়ী, ২০২১ সালের ডিসেম্বর নাগাদ বাংলাদেশে অতিরিক্ত মৃত্যুর সংখ্যা এক লাখ ৪০ হাজার ৭৬৪ জনে পৌঁছেছে।