অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ভারতে সত্যান্বেষী সাংবাদিক গ্রেপ্তার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ


ভারতের নয়াদিল্লিতে পুলিশ তাদের গাড়িতে তুলে নিয়ে যাচ্ছে সাংবাদিক মোহাম্মদ জুবায়ের (মাঝে ক্যাপ এবং মাস্ক পড়া) কে। ২৭ জুন ২০২২।
ভারতের নয়াদিল্লিতে পুলিশ তাদের গাড়িতে তুলে নিয়ে যাচ্ছে সাংবাদিক মোহাম্মদ জুবায়ের (মাঝে ক্যাপ এবং মাস্ক পড়া) কে। ২৭ জুন ২০২২।

দিল্লির পুলিশ হিন্দুদের "ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত" করার অভিযোগে একটি তথ্য-যাচাইকারী ওয়েবসাইটের মুসলিম সহ-প্রতিষ্ঠাতাকে গ্রেপ্তার করেছে। মিডিয়া অধিকার কর্মীরা এই পদক্ষেপকে ভারতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য একটি নতুন ধরনের অধঃপতন বলে অভিহিত করেছেন।

অল্ট নিউজ-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা সাংবাদিক মোহম্মাদ জুবায়েরকে ২০১৮ সালে পোস্ট করা একটি টুইটে হিন্দু ধর্ম বিশ্বাসকে অবমাননা করার অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ার পর, সোমবার গ্রেপ্তার করা হয়। জুবায়ের নিয়মিতভাবে সংখ্যালঘু মুসলমানদের প্রান্তিকতা তুলে ধরেন এবং তার টুইটে ভুয়া খবর শনাক্ত করেন।

যে টুইটটি করার কারণে জুবায়েরকে গ্রেপ্তার করা হয়, তাতে "হানিমুন হোটেল" থেকে "হনুমান হোটেল" লেখা এবং পুনরায় রঙ করা একটি হোটেলের সাইনবোর্ডের ছবি ছিল। উল্লেখ্য, ভারতে বানরের দেবতা হনুমান হিন্দুদের দ্বারা পূজনীয়।

ছবির সাথে ১৯৮৩ সালের বলিউডের একটি কমেডি ছবি থেকে একটি স্ক্রিনশট ছিল। ওই টুইটে লেখা হয়েছিল, “২০১৪ সালের আগে: হানিমুন হোটেল। ২০১৪ সালের পর: হনুমান হোটেল”।

১৯ জুন, হনুমান ভক্ত নামে একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট, (হিন্দিতে হনুমানের অনুগামী), ২০১৮ সালের ওই টুইটটি শেয়ার করেছে এবং অভিযোগ করেছে যে বানর দেবতাকে হানিমুনে লিঙ্ক করা হিন্দুদের "সরাসরি অপমান" এবং দিল্লি পুলিশকে জুবায়েরের বিরুদ্ধে "ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য" তারা অনুরোধ করেছে।

দিল্লি পুলিশ বলেছে, জুবায়েরের টুইট ছিল "অত্যন্ত উস্কানিমূলক এবং ঘৃণার অনুভূতি জাগানোর জন্য যথেষ্ট।"

পুলিশের দায়ের করা প্রথম তথ্য প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "শান্তি ভঙ্গ করার উদ্দেশ্যে একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিকে অবমাননা করার জন্য ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে মোহাম্মদ জুবায়ের @জু_বায়ের (@zoo_bear) ইচ্ছাকৃতভাবে এই ধরনের পোস্টের প্রচার এবং প্রকাশনা করেছেন।"

জুবায়েরের আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভার বলেছেন, জুবায়েরকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হচ্ছে কারণ তিনি একজন সাংবাদিক এবং "ক্ষমতাসীনদের কাছে সত্য" বলছেন।

জুবায়ের মুসলিম এবং একজন সাংবাদিক হওয়ার কথা উল্লেখ করে গ্রোভার আদালতে বলেন, "অনেকেই একই টুইট করেছেন, কিন্তু সেইসব হ্যান্ডেল এবং আমার ক্লায়েন্টের মধ্যে পার্থক্য হল তার বিশ্বাস, তার নাম এবং তার পেশা।"

মঙ্গলবার জুবায়েরের জামিন নামঞ্জুর করে তাকে চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারের সমালোচক ছাড়াও, জুবায়ের নিয়মিতভাবে মুসলিম বিরোধী বিদ্বেষমূলক বক্তৃতা অনুসরণ করেন এবং সেগুলো সবার দৃষ্টিগোচর করার জন্য বেশিরভাগ হিন্দু ডানপন্থী কর্মীদের কাছে পরিচিত।

সম্প্রতি, তিনি মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে মোদির ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) মুখপাত্র নূপুর শর্মার করা কথিত অবমাননাকর মন্তব্য তুলে ধরেছেন। এই ইস্যুতে তার টুইটটি ব্যাপকভাবে শেয়ার করা হয় এবং অনেক মুসলিম দেশ থেকে ভারতের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদের জন্ম দিয়েছে।

শর্মার সমর্থনে হাজার হাজার হিন্দু জাতীয়তাবাদী বেরিয়ে আসে। তারা সারাদেশে সমাবেশ করেছে এবং টুইটারে হ্যাস ট্যাগ দিয়ে অ্যারেস্ট জুবায়ের প্রচার শুরু করেছে। সোশ্যাল মিডিয়াতে, তাদের মধ্যে অনেকেই বলেছেন, জুবায়ের প্রায়শই হিন্দু দেব-দেবীদের অপমান করে টুইট পোস্ট করেন এবং তার বিচার হওয়া উচিত।

সোমবার জুবায়েরের গ্রেফতারের পর, হ্যাস ট্যাগ দিয়ে আই স্ট্যান্ড উইথ জুবায়ের এবং রিলিজ জুবায়ের টুইটগুলি ভারতে টুইটারে চালু হয়ে যায়। সাংবাদিক, বিরোধী দলের নেতারা এবং অধিকার কর্মীরা তার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে।

বিরোধী দলের নেতা রাহুল গান্ধী টুইট করেছেন, "বিজেপির ঘৃণা, ধর্মান্ধতা এবং মিথ্যা প্রকাশ করা প্রত্যেক ব্যক্তি তাদের জন্য হুমকি।"

দিল্লি-ভিত্তিক মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতা জাফরুল-ইসলাম খান বলেছেন, জুবায়েরকে টার্গেট করা হচ্ছে কারণ তিনি ধারাবাহিকভাবে হিন্দুত্ব [ডানপন্থী হিন্দু] গোষ্ঠীগুলির দ্বারা ছড়ানো মিথ্যাগুলি প্রকাশ করেছেন৷

ভারত এই বছর বিশ্ব প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে ১৮০টি দেশের মধ্যে ৮ ধাপ নিচে নেমে গেছে। ২০২১ সালে তাদের অবস্থান ছিল ১৪২তম স্থানে৷ ২০২২ সালে সেটি নেমে ১৫০ এ গিয়ে ঠেকেছে।

XS
SM
MD
LG